পিরিয়ড নারীদের কাছে একটি পরিচিত বিষয়। প্রত্যেক নারীর সাধারণত মাসে একবার পিরিয়ড হয়ে থাকে। পিরিয়ড নিয়মিত হওয়া ভালো। তবে এক্ষেত্রে যদি ব্যত্যয় ঘটে তবে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে অনেক অবিবাহিত নারী রয়েছেন, যাদের মাসিক অনিয়মিত; তাদের মাতৃত্বের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। এ নারীরা অনেক সময় ইচ্ছে করলেও গর্ভধারণ করতে পারেন না। তাদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
অনিয়মিত মাসিক বা ঋতুস্রাব নারীদের কাছে পরিচিত বিষয়। বিশেষ করে কিশোরীদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এ নিয়ে কিশোরীরা দুশ্চিন্তায় ভোগেন। নিয়মিত ঋতুচক্র প্রতি মাসে দুই থেকে সাত দিন স্থায়ী থাকে। বেশিরভাগ নারী প্রতি মাসের ২৮ তারিখের সাত দিন পূর্বে অথবা সাত দিন পরে ঋতুস্রাবের মুখোমুখি হয়।
অনিয়মিত পিরিয়ড কী: প্রতি চন্দ্রমাস পরপর হরমোনের প্রভাবে পরিণত মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় এবং রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথে বের হয়ে আসে তাকেই ঋতুচক্র বলে। মাসিক চলাকালীন পেট ব্যথা, পিঠ ব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। আর যাদের এই মাসিক ঋতুচক্র প্রতি মাসে হয় না অথবা দুই মাস আবার কখনও ৪ মাস পর পর হয়, তখন তাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। অনিয়মিত পিরিয়ডের বিষয়ে যুগান্তরকে বিভিন্ন বিষয় জানিয়েছেন সেন্ট্রাল হাসপাতাল লিমিটেডের গাইনি কনসালটেন্ট বেদৌরা শারমিন।
বেদৌরা শারমিন বলেন, অনিয়মিত পিরিয়ড হলে অনেকে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেলে কয়েক মাস নিয়মিত হলেও আবার অনিয়মিত হয়ে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। অবিবাহিত মেয়েদের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক হলে নারীদের মা হওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়া বন্ধ্যাত্বেরও ঝুঁকি থাকে।
তিনি বলেন, যে অবিবাহিত নারীরা আমাদের কাছে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যা নিয়ে আসেন, তাদের আমরা নানা পরামর্শ দিয়ে থাকি। এর মধ্যে ওজন কম রাখতে, ব্যায়ম করতে, ডাল, ভাত, চিনি, রুটি, এসব খাবারে কার্বহাইড্রেট বেশি থাকে। তাই এসব খাবার পরিহার করা উচিত। এছাড়া বিয়ের পরে বাচ্চা নেয়ার সময় ডাক্তারের পারামর্শ নেয়া ভালো বলেও জানান তিনি। অবিবাহিত নারীদের অনিয়মিত পিরিয়ড সম্পর্কে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন বেদৌরা শারমিন।
ওজন কমান: যে নারীদের অনিয়মিত মাসিক হয় তাদের অতিরিক্ত ওজন কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন ডা. বেদৌরা শারমিন। কারণ অতিরিক্ত ওজনের ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ওজন কমানো জরুরি।
ব্যায়ম করা: অনিয়মিত মাসিক যাদের তাদের জন্য ব্যায়ম অনেক উপকারী। নিয়মিত ব্যায়ম করলে অতিরিক্ত ওজন কমে এবং শরীর ভালো থাকে।
কার্বহাইড্রেট খাবার পরিহার করা: ডাল, ভাত, চিনি, রুটি, এসব খাবারে কার্বহাইড্রেট বেশি থাকে। তাই অনিয়মিত মাসিক যাদের হয় তাদের সব খাবার পরিহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
নারীদের বন্ধ্যাত্ব বাড়ছে যেসব কারণে: সন্তানের মাধ্যমেই জীবনে পূর্ণতা খোঁজেন অনেক দম্পতিই। কিন্ত অকাল বন্ধ্যাত্ব আনে হতাশা। পরিবর্তনশীল বর্তমান সমাজে নারী ও পুরুষ- সবার মধ্যেই এখন বন্ধ্যাত্বের হার যাচ্ছে বেড়ে।
অনিয়মিত ঋতুস্রাব: নারীদের ঋতুচক্র শুরু হওয়ার পর ২১ থেকৈ ৩৫ দিনের মধ্যে ঋতুস্রাব হলে সেটিকে স্বাভাবিক ধরা হয়। কিন্তু ২০ দিনের আগেই যদি ঋতুস্রাব হয়, বা দেড়-দুই মাসেও যদি ঋতুস্রাব না হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে ওই নারী জটিল শারীরিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। সময়মতো চিকিৎসা না করালে এর ফল হতে পারে বন্ধ্যাত্ব।
জরায়ুর অসুখ: অস্বাস্থকর নগর পরিবেশে থাকার কারণে বেশিরভাগ নারীই এখন ভুগছেন জরায়ুর নানা রোগে। জরায়ুমুখের ক্যান্সার, জরায়ুতে টিউমার, জরায়ুতে জীবণুর সংক্রমণ- ইত্যাদি নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে নারদের মধ্যে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্বাস্থকর অবস্থায় যৌন মিলন ও সঙ্গীর বয়ে আনা জীবাণু থেকে এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন নারীরা। এসব রোগের প্রকোপ বাড়া নারীদের মদ্যে বন্ধ্যাত্বের হার বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
এন্ডোমেট্রিওসিস: নারীদের জরায়ুর আরেকটি অসুখ এন্ডোমেট্রিওসিস। এতে জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের ভেতরের ঝিল্লি, যা গর্ভাবস্থায় সন্তানকে সুরক্ষিত রাখে, তা বাইরে চলে আসে। সাধারণত ৩০ থেকে ৩৫ বছরের নারীদের মধ্যে এই রোগের প্রকোপ বেশি দেখা যায়। এই অবস্থায় বন্ধ্যা হওয়ার আশঙ্কা দেখা যায় প্রবলভাবে।
ডিম্বনালীর অসুখ: ডিম্বনালীর প্রধান কাজ ডিম্বাণু ও শুক্রকিটের মিলনের স্থান ঠিক করা এবং ভ্রুণের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় হরমোনের সৃষ্টি করা। এই ডিম্বনালী যখন জীবাণুর দ্বারা সংক্রমিত হয় তখন এর শ্লেষ্মাঝিল্লির ক্ষতি হয়। আর তখনই নারীর বন্ধ্যাত্বের আশঙ্কা বেড়ে যায়।
এছাড়াও শল্যচিকিৎসার কারণেও ডিম্বনালী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন, ডি অ্যান্ড সি, এন্ডোমেট্রিয়াল বাইয়পসি বা অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশনের ফলেও ডিম্বনালীর অসুখ হতে পারে।
হরমোন জটিলতা: শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রসদ হরমোন। বিশেষ করে নারীদেহের ঋতুচক্র এবং ডিম্বাণু নির্গত হওয়া নানা অন্তঃস্রাবি গ্রন্থির হরমোনের ওপর নির্ভরশীল। হাইপোথেলামসের আঘাত, টিউমার, পিটুইটারি গ্রন্থির টিউমার, অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার, থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ হঠাৎ করেই বদলে দিতে পারে নারীদেহের স্বাভাবিক হরমোনের গতিপথ।
অ্যান্টিবডির আক্রমণ: নারীর শরীরজাত অ্যান্টিবডি অনেক সময় পুরুষের শুক্রকিট ধ্বংস করে দেয় বা শুক্রকিটের জরায়ুর মুখে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে। এই অ্যান্টিবডি পুরুষের রক্ত বা বীর্যে এবং মেয়েদের রক্ত বা জরায়ুমুখের শ্লেষ্মাঝিল্লিতে পাওয়া যায়।
মানসিক চাপ: ব্যস্ত নগরজীবনে নারীর নিত্যসঙ্গী মানসিক চাপ। শরীরের তুলনায় মনের রোগ সাধারণত অবহেলার পাত্র হওয়ায়, মানসিক চাপ কখনো কমে না, বরং বাড়তেই থাকে। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের নানা রোগ, এমনকী বন্ধ্যত্বের কারণও এই মানসিক চাপ।
অনেক সময় সন্তানলাভের তীব্র বাসনাও প্রবল মানসিক চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সমাজ ও পরিবারের আরোপিত চাপও এখানে মড়ার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো কাজ করে। তাই স্বামীদের উচিৎ স্ত্রীকে এসব চাপ থেকে দূরে রাখা, যাতে সন্তান ধারণের উপযোগী দেহ ও মন সে সহজেই লাভ করতে পারে।
স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব: পুষ্টির অভাব বা অতিরিক্ত মেদবহুল, বা তলপেটে চর্বি জমার কারণেও নারী বন্ধ্যা হতে পারেন। তাই স্বাস্থ্য সচেতন ও খাবার গ্রহণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এসব সমস্যার যেকোনোটি দেখা দিলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরী। উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে বন্ধ্যাত্বও এখন ঘোচানো সম্ভব।
জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় কিছু ভ্রান্ত ধারণা
চিকিৎসা: সন্তানের আশায় তৈরি হয় দাম্পত্য জীবন। অধিকাংশ নারী ও পুরুষ মনে করেন, তারা সন্তান ধারণে সক্ষম। বাস্তবে প্রতি ১০ দম্পতির মধ্যে এক দম্পতির গর্ভধারণে সমস্যা রয়েছে। যেসব দম্পতি বিবাহিত জীবনের এক থেকে দুই বছরের মধ্যে সন্তান না পান বা সন্তান উৎপাদনে সক্ষম না হন; তারা নিঃসন্তান দম্পতি হিসেবে পরিচিত হন। যারা সন্তান চান কিন্তু সন্তান পান না, তাদের জীবনে বিষাদ, ক্রোধ, হতাশা দেখা দেয়। সন্তানহীনতা বিবাহিত দম্পতির জীবনে এক চরম অভিশাপ হিসেবে বিবেচিত। বহু পরিবারের শান্তি নষ্ট হয় সন্তান না হওয়ার কারণে। আমাদের সমাজে কোনো দম্পতির সন্তান না হলে প্রথমত দায়ী করা হয় মহিলাকে। অথচ প্রায় অর্ধেক ক্ষেত্রে পুরুষের কারণে সন্তান উৎপাদন হয় না। অনেক সময় পুরুষ স্বীকার করতেই চান না যে, এটি তার জন্যই হচ্ছে না। এমনকি অনেক পুরুষ নিজের পরীক্ষা পর্যন্ত করাতে রাজি হন না। আবার পরীক্ষা করালেও তা স্ত্রী কিংবা পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে গোপন রাখা হয়। পক্ষান্তরে, মহিলার পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কোনো দোষ না থাকলে প্রকারান্তরে মহিলাকে দায়ী করা হয়। এমনকি এ জন্য মহিলার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের স্টিম রোলার চালানো হয়। সন্তান না হওয়ার অজুহাতে যৌতুকের দাবি দিন দিন বাড়তেই থাকে। এ ক্ষেত্রে অনেকাংশে মহিলার শ্বশুর, শাশুড়ি ও অন্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। অবশেষে একপর্যায়ে মহিলাটি তালাক নিতে বাধ্য হন অথবা তাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে পুরুষটি আরেকটি বিয়ে করে বসেন। মহিলার কারণেও সন্তানহীনতা হতে পারে। একজন মহিলার নানা কারণে বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টি হতে পারে। যেকোনো দীর্ঘস্থায়ী রোগ, পুষ্টির অভাব, অতিরিক্ত মেদবাহুল্য, মানসিক চাপ, ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া, জরায়ুর অসুখ, জরায়ুর মুখের অসুখ, এন্ডোমেট্রিওসিস, ডিম্বনালীর অসুখ, জীবাণু সংক্রমণ, হরমোনের অভাব, হাইপোথ্যালামাসের অসুখ, থাইরয়েডের অসুখ ইত্যাদি বহুবিধ কারণে একজন মহিলা সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হতে পারেন না। এ জন্য সন্তানহীনা মহিলাদের বন্ধ্যত্বের কারণ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজন সঠিক ইতিহাস, ভালোভাবে পরীক্ষা ও পরীক্ষাগারে নানা পরীক্ষা। অত্যধিক মানসিক দুশ্চিন্তাও বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে। এমনকি সন্তান না হওয়ার জন্য পারিবারিক চাপও সন্তান না হওয়ার কারণ হতে পারে। আবার সন্তান লাভের অদম্য আবেগও সন্তান উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। তাই সুস্থ ও ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে পারলে সন্তান উৎপাদনে সুফল পাওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, সম্পূর্ণ স্বাভাবিক মানসিক ও শারীরিক অবস্থায় সন্তান লাভের চেষ্টা করা উচিত। কোনো রকম ভয়, আতঙ্ক, দুশ্চিন্তা না করে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চিহ্নিতকরণের চিকিৎসা করলে আল্লাহর ইচ্ছায় সন্তান লাভ সম্ভব হবে। যারা মুসলিম, তারা স্মরণ করতে পারেন, ‘তিনি যাকে চান কন্যা সন্তান দান করেন, আর যাকে চান দান করেন পুত্র সন্তান। যাকে চান তিনি পুত্র-কন্যা উভয় সন্তানই দান করেন। আর যাকে ইচ্ছা তাকে করে রাখেন বন্ধ্যা (আশশুরা, ৪৯-৫০)’। কুরআনের এই ভাষ্যটি একজন মুসলিমের জন্য পথপ্রদর্শক। আমরা সন্তানহীন বিভিন্ন দম্পতির মধ্যে নানা ধরনের ব্যাকুলতা দেখতে পাই। তারা নানা ধরনের চেষ্টা-তদবির করে থাকেন। নিয়মমতো বৈজ্ঞানিক চেষ্টা-তদবিরে কোনো বাধা নেই। কিন্তু কোনো কোনো ক্ষেত্রে নানা অছিলায় সন্তান পাওয়ার খবর দেখতে পাওয়া যায়। এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ইসলাম অনুসারী কোনো পুরুষ বা মহিলা যাতে শিরক না করেন। অথবা কোনো প্রতারণার ফাঁদে পা না দেন। সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে আল্লাহর ইচ্ছায় যেকোনো দম্পতিই সন্তান লাভ করতে পারে। বর্তমানে স্বাভাবিক নিয়মে যদি কোনো দম্পতি সন্তান লাভে সক্ষম না হয়, তা হলে তাদের জন্য কৃত্রিম উপায়ে পরীক্ষাগারে স্বামীর শুক্রাণুর সাথে স্ত্রীর ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে সন্তান উৎপাদনের ব্যবস্থা রয়েছে। এভাবে শরীরের বাইরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর মিলনপদ্ধতিকে আইভিএফ বা নলজাত শিশু জন্মদানপদ্ধতি বলা হয়। ১৯৭৪ সালে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানী ডা: এডওয়ার্ড এবং ডা: স্টেপটো পৃথিবীতে প্রথম টেস্ট টিউব বেবি বা নলজাত শিশুর জন্মদানের ব্যবস্থা করেন। পৃথিবীর প্রথম নলজাত শিশুটির নাম লুইস ব্রাউন। যেসব কারণে আইভিএফ করা হয়, তার মধ্যে মহিলাদের এন্ডোমেট্রিওসিস, জরায়ু মুখে বাধার ফলে শুক্রকীটের জরায়ুতে প্রবেশে বাধা, শুক্রকীটের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি, কিংবা কোনো কারণ না থাকা। পুরুষের ক্ষেত্রে শুক্রকীটের পরিমাণ কম থাকা। এ ছাড়াও স্ত্রীর ডিম্বাশয় না থাকলে দাতার ডিম্বাণুর সাথে স্বামীর শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে স্ত্রীর জরায়ুতে সন্তান ধারণ করা হয়। আবার স্বামীর শুক্রকীট না থাকলে দাতার শুক্রকীট এবং স্ত্রীর ডিম্বাণুর মিলন ঘটিয়ে স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করে সন্তান উৎপাদন করা হয়। যদি স্ত্রীর জরায়ু না থাকে কিন্তু ডিম্বাশয় আছে, তা হলে স্ত্রীর ডিম্বাণু এবং স্বামীর শুক্রাণুর মিলন ঘটিয়ে অন্যের জন্য সন্তান ধারণে ইচ্ছুক ভাড়াটে মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করে সন্তান উৎপাদন করা হয়। এ ধরনের ভাড়াটে মাকে বলা হয় সারোগেট মা। আইভিএফ পদ্ধতির নানা কৌশল নিয়ে বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণা অব্যাহত রেখেছেন। দিন দিন এ পদ্ধতির আরো উন্নত সংস্করণ বিভিন্নভাবে নিঃসন্তান দম্পতিদের সন্তান লাভের বাসনাকে পূরণ করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মুসলিম সমাজে স্বাভাবিক পদ্ধতির স্বামী-স্ত্রীর শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর পরীক্ষাগারে মিলন ঘটিয়ে স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করে সন্তান লাভ করাকে মেনে নিলেও দাতার দানে সন্তান উৎপাদনকে মেনে নেয় না। অর্থাৎ ডোনেশন বা দাতার দানের আইভিএফ-পদ্ধতি মুসলিম সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই টেস্ট টিউব বেবি বা নলজাত শিশু গ্রহণে মুসলিম সমাজে সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন। নিঃসন্তান দম্পতিদের সঠিক চিকিৎসার জন্য অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতিতেও ব্যবস্থা রয়েছে।
বন্ধ্যা দম্পতিদের জন্য নানা রকম চিকিৎসাও কিন্তু রয়েছে। সেগুলো করার কথা ভাবতে পারেন। একটু সময় নিয়ে চেষ্টা করলে ভালো ফল আসতেও পারে। শরীরের যত্ন নিন। ইয়োগা করা সাঁতার কাটা এমন অনেক অভ্যাসের মাধ্য মেনিজের অনেক কিছুই পরিবর্তন করা সম্ভব। মানুষের শরীর একটি জাদুর মতো।
কি থেকে যে কি হয়ে যায় সেটা হতাশ হয়ে বসে থাকলে বুঝতে পারবেন না। আশাকে বাঁচিয়ে রাখুন, নিজেও বেঁচে থাকুন।
বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আমাদের সমাজে অনেক রকম নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। যা পুরোটাই কুসংস্কার। কেউ তো আর ইচ্ছা করে বন্ধ্যা হয়ে যায় না! এটা প্রাকৃতিক একটা ব্যাপার। অবুঝ মানুষের কথা ভেবে মন খারাপ করে তো লাভ নেই। ভেবে দেখুন তো প্রতিদিন কত মানুষ মারা যায় শুধু যুদ্ধে।এমন একটা পৃথিবীতে বাচ্চা ধারণকরতে না পারা অনেক ছোট একটা সমস্যা। আমরা জানি যে বাচ্চা হচ্ছে না এমন দম্পতি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামাজিক চাপ এবং হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারেন না। আপনিও এমন অবস্থায় থাকলে ঘাবড়াবেন না। আপনার দরকার কাউন্সেলিং। একজন প্রফেশনাল কাউন্সেলর আপনাকে সামাজিক চাপ উপেক্ষা করা এবং আপনার নিজের লাইফ থেকে শক্তি খুঁজে নিতে সাহায্য করতে পারবেন।
Leave a Reply