আচ্ছা বাজারে তো রেডিমেড ফেস প্যাকের অভাব নেই, তাহলে হঠাৎ করে আমলকির কথা কেন বলা হচ্ছে ! চলুন একটু জেনে নেই, বিশেষজ্ঞদের মতে আমলকির ভিতরে থাকা প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, সি, ডি, বি১২, ই, কে এবং ফ্যাট স্কিনের ভিতরে পুষ্টির অভাব দূর করার মাধ্যমে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এবং এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন এবং পটাসিয়ামও ত্বকের নানাভাবে পরিচর্যা করে থাকে ।
শুধু তাই নয় বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা বা স্কিন ডিজিজ হওয়া থেকেও রক্ষা করে । তাই ত্বকের যত্নে আমলকির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে । আপনি যদি নিয়মিত কাঁচা আমলকি খাওয়া শুরু করেন তাহলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়তে মোটেও সময় লাগবে না । আর যদি সেই সাথে এখানে বলা ফেস প্যাকগুলিকে কাজে লাগাতে পারেন, তাহলে সত্যিই মাত্র দুদিনেই ত্বকের পরিবর্তন ঘটবে । যার ফলে ত্বক ফর্সা ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে, অপরদিকে আপনার মুখের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পাবে যা সত্যিই চোখে পরার মতো । তাই অল্প সময়ে যদি আপনি অপূর্ব সুন্দরি হতে চান, তাহলে এখনি জেনে নিন সেই রহস্যগুলি !
আমলকির সাথে যে সকল উপাদানগুলির মিশ্রণে ফেসপ্যাক বানাবেন, সেগুলি হল…
আমলকি এবং অ্যাভোকাডো: বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে এই দুটি ফলকে একসাথে মিশিয়ে বানানো ফেসপ্যাকটিতে যে মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে এবং আরও সব উপকারি উপাদান থাকে যা আপনার ত্বককে নানাভাবে পরিচর্যা করে । আপনার ত্বকের বয়সের ছাপ কমাতে এই ফেস প্যাকটির কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। আপনার ত্বকের মৃত কোষ গুলো দূর করে । আপনি যদি ৩০-এর পরে ত্বককে প্রাণবন্ত এবং সুন্দর রাখতে চান, তাহলে ২ চামচ আমলকির পাউডার তার সঙ্গে ২ চামচ অ্যাভোকাডোর গুড়ো ভাল করে মিশিয়ে নিবেন এবং তার সাথে অবশ্যই অল্প পরিমাণে দইও দিবেন । তারপর সেগুলো ভাল করে মিস্রনের পর সেটি ত্বকে লাগিয়ে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে । কিছুক্ষন অপেক্ষা করা হয়ে গেলে মুখটা হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে । ভালো ফল পেতে চেষ্টা করবেন অন্তত সপ্তাহে দু/তিনবার এই প্যাকটি লাগাতে ।
আমলকি, দই এবং মধু: আপনার হাতে কি সময় নেই কিন্তু চাচ্ছেন ত্বকের গভীরে লুকিয়ে থাকা ময়লাকে পরিষ্কার করতে ? তাহলে এই ফেসপ্যাকটি আপনার জন্য । বিশেষজ্ঞদের মতে যারা নিয়মিত ত্বকের যত্নে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে কাজে লাগায় তাদের ত্বক তো পরিষ্কার হবেই, সেই সাথে ত্বক হবে তুলতুলে, সতেজ এবং প্রাণবন্ত । সেক্ষেত্রে ২ চামচ আমলকির পাউডারের সাথে পরিমাণ মতো গরম জল মেশিয়ে তাতে ১ চামচ মধু এবং দই মিশিয়ে উপাদান গুলোকে ভাল ভাবে নাড়িয়ে নিবেন । তারপর পেস্টটি মুখে লাগান এবং কমপক্ষে ১০-২০ মিনিট অপেক্ষা করে পরে মুখটি ধুয়ে ফেলুন।
আমলকি এবং পেঁপে: ত্বককে আগের চেয়ে আরও ফর্সা করে তুলতে চান ? তাহলে নিয়মিত এই ফেসপ্যাকটিকে ব্যবহার করতে ভুলবেন না যেন ! কারণ বেশ কিছু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে অল্পসময়ে ত্বককে ফর্সা করে তুলতে এই প্যাকটির কোন তুলনাই হয় না । কিন্তু এখন প্রশ্ন হল কীভাবে বানাবেন তাই না ? সেক্ষেত্রে আমলকির গুঁড়ো ২ চামচ সাথে গরম জল পরিমাণ মতো মিশিয়ে একটা পেস্ট বানিয়ে নিন । এরপর তাতে ২ চামচ পেঁপে মেশিয়ে নিন । তারপর পেস্টটি ত্বকে লাগিয়ে মাত্র ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন । আপনি হয়ত জানেন না এসময়ে পেঁপের ভিতরে থাকা উপকারি এনজাইম ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এমন খেলা দেখাবে যে স্কিন টোনের পরিবর্তনের সাথে সাথে ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পাবে যা চোখে নজর কারবে সবার ।
আমলকি, মধু এবং পার্সলে শাক: এই ফেসপ্যাকটি বানাতে হলে প্রথমে আপনাকে পার্সলে শাক ভাল করে কেটে নিতে হবে । তারপর তাতে আমলকির পাউডার ২ চামচ এবং গরম জল সমপরিমানে মিশিয়ে পেস্টটি বানিয়ে নিতে হবে এবং অবশ্যই পেস্টটিতে ১ চামচ মধুও মেশাতে হবে । সবগুলো উপাদান মিশানোর পর সেটি মুখে লাগাতে হবে এবং মাত্র ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে পেস্টটা ধুয়ে ফেলতে হবে । এইভাবে প্রতিনিয়ত ত্বকের যত্ন করলে ব্রণ এবং মুখের যে কোনও দাগ দূর হতেও দেখবেন সময় লাগবে না।
আমলকি, বাদাম এবং চন্দন: আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকায়, তা ত্বকের ভিতরে ঢুকে প্রচুর পরিমাণে কোলাজেন তৈরি করে । ফলে স্বাভাবিকভাবেই ত্বক ফর্সা হতে শুরু করে । এজন্যে কয়েক চামচ বাদাম গুঁড়ো, চন্দন গুঁড়ো ২ চামচ, এবং আমলকির রস ৩ চামচ নিয়ে মিশ্রনটি তৈরি করতে পারেন । এই মিশ্রনটি মুখে লাগালে বয়সের ছাপ এবং যে কোন দাগ দূর হতে সাহায্য করবে ।
আমলকি এবং হলুদ গুঁড়ো: আপনি হয়ত হাজার চেষ্টা করেও পক্স এবং ব্রণর দাগ দূর করতে পারেন নি । কোনো চিন্তা নেই ! আজই আমলাকি এবং হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ফেসপ্যাক বানায়ে তা মুখে লাগানো শুরু করুন । দেখবেন দাগগুলো কিভাবে হারিয়ে যাবে আপনার ত্বক থেকে । সেই সাথে ফ্রী পাবেন ত্বকের সৌন্দর্য যা আমলকি এবং হলুদের গুণে বৃদ্ধি পাবে । উলেখ্য, এই প্যাকটি বানাতে আপনার প্রয়োজন হবে ৩ চামচ আমলকির গুড়ো, ২ চামচ লেবুর রস এবং ১ চামচ হলুদের গুঁড়ো । সবকটি উপাদান মিশানো হয়ে গেলে পেস্টটি মুখে লাগিয়ে কম করে হলেও আপনাকে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে । এরপর হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে মুখটা ফেলুন । সপ্তাহে কম করে হলেও যদি অন্তত একবার এইভাবে ত্বকের পরিচর্যা করা হয়, তাহলে একেবারে হাতেনাতেই এর ফল মিলবে আশা করি !
Leave a Reply