সাধারণত রক্তচাপ বলতে সিস্টেমিক প্রবাহের ধমনিক প্রবাহকে বোঝায়। প্রতিটি হৃৎস্পন্দনের সময় একবার সর্বোচ্চ চাপ (সিস্টোলিক) এবং সর্বনিম্ন চাপ (ডায়াস্টলিক) হয়। মূলত হৎপিন্ডের সংকোচন প্রবণতাই রক্তচাপের প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে মানুষ বেশিরভাগ সময়ই ওষুধ ব্যবহার করে থাকে। তবে লাইফ স্টাইল পরিবর্তন করেই কিন্তু এটা কমানো সম্ভব। এমন কিছু প্রাকৃতিক উপায় রয়েছে; যা সব রক্তচাপকেই নিয়ন্ত্রণে রাখে।
বর্তমান সময়ে উচ্চ রক্তচাপ একটি স্থায়ী রোগ হিসেবে বিবেচিত হলেও এর জন্য চিকিৎসা ও প্রতিরোধ জরুরি। বংশগতভাবে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা কমানো সম্ভব নয়। তবে, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এক্ষেত্রে কিছু বিষয় আপনাকে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রেখে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।

সপ্তাহে অন্তত ১ দিন জগিং করুন: সপ্তাহে অন্তত ১ দিন ১ ঘণ্টা জগিং ৬ বছর পর্যন্ত আয়ু বাড়ায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জগিং-এর সময় অক্সিজেন গ্রহনের পরিমাণ বাড়ে যা উচ্চ রক্তচাপ কমায়। আর অক্সিজেন শরীরের রক্তের সাথে মিশে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এতে হৃদপিণ্ড সহজেই রক্ত পাম্প করে পুরো দেহকে সতেজ রাখে। সুতরাং রক্তচাপ কমাতে জগিং করুন। যারা জগিং করতে পারেন না তারা দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করুন। দ্রুত হাঁটা অনেকাংশে জগিং এর মতই কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
প্রতিদিনের খাবার তালিকায় দই রাখুন: প্রতিদিন এক কাপ পরিমাণ চিনি ছাড়া বা অল্প চিনি যুক্ত দই উচ্চ রক্তচাপ প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে দেয়। দইয়ের ক্যালসিয়াম ধমনীকে নমনীয় ও প্রসারিত করে। এতে করে রক্ত কোন প্রকার বাঁধা ও চাপ ছাড়াই পুরো দেহে সঞ্চালিত হতে পারে। এতে করে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমে যায়।
সপ্তাহে ৫ টি কলা খান: কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যা দেহের লবনের পরিমাণ ঠিক রাখে। এতে করে রক্তচাপ কমে। গবেষণা অনুযায়ী, কলার পটাসিয়াম শরীরে তরল পদার্থের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে অন্তত ৫টি কলা উচ্চ রক্তচাপের কারণে মৃত্যু ঝুঁকি কমায়।
টমেটো: লাইকোপেন ও অন্য গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে টমেটোতে যা রক্তচাপ কমতে সাহায্য করে। পটাসিয়াম এর একটি ভালো উৎস টমেটো। পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেলে উচ্চরক্তচাপ কমতে ও হার্ট ডিজিজের ঝুঁকি কমায়।
লবন খাবেন না: লবন আপনার ধমনীতে বিদ্যমান তরলের সাথে মিশে গিয়ে তরলের আয়তন বৃদ্ধি করে। এতে করে রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার সময় ধমনীতে চাপ পরে। ফলশ্রুতিতে রক্ত চাপ বাড়ে। তাই যতটা সম্ভব লবন খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে: খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। একবার লক্ষ্য অনুযায়ী ওজন পৌঁছালে সীমিত আহার করা উচিত এবং ব্যায়াম অব্যাহত রাখতে হবে। ওষুধ খেয়ে ওজন কমানো বিপজ্জনক। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওজন কমানোর ওষুধ না খাওয়াই ভালো।
হালকা গরম পানি: রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ১৫ মিনিট আগে হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করলে ঘুমও যেমন ভালো হয় তেমনি ওই রাতের জন্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখাও সম্ভাব হয়। প্রতিদিন এক কোয়া রসুন চিবিয়ে খেলেও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ধূমপান করবেন না: ধূমপান উচ্চ রক্তচাপের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সিগারেটের নিকোটিন দেহে প্রবেশ করে রক্তে মিশে গিয়ে অ্যাড্রেনালাইন (বিক্করস) উৎপন্ন করে। এই রসটি হার্টবিটকে দ্রুততর করে ফেলে। যার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে ধুমপান পরিহার করুন।
তরমুজের বিচি: তরমুজের বিচিতে রয়েছে কিউকার্বোসিট্রিন নামক এক উপাদান যা রক্তের সূক্ষ্ম নালিগুলোকে বিস্তীর্ণ করে। পাশাপাশি এটি কিডনির কার্যপ্রণালী উন্নীত করে। ২০১০ সালের ফ্লোরিডা স্টেট পাইলট স্টাডিতে বলা হয়, ভ্যাসোডাইলেটরি ইফেক্ট রয়েছে বলে তরমুজের বিচি রক্তচাপ কমায়।
- শুকনো তরমুজের বিচি ও পোস্তদানা সমপরিমাণে গুঁড়া করুন। একসঙ্গে মিশিয়ে এয়ার টাইট বয়ামে সংরক্ষণ করুন। প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় খালিপেটে এক চা চামচ করে খান।
- এক কাপ গরম পানিতে দুই চা চামচ তরমুজের বিচির গুঁড়া দিয়ে একঘণ্টা রেখে দিন। ছেঁকে সারাদিনে অল্প অল্প করে কয়েকবারে পান করুন।
অতিরিক্ত মানসিক ও শারীরিক থেকে বিরত থাকুন: নিয়মিত বিশ্রাম, সময় মতো ঘুমানো, শরীরকে অতিরিক্ত ক্লান্তি থেকে বিশ্রাম দেওয়া- ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক শান্তি বেশি হবে।
উচ্চ রক্তচাপ উদ্রেককারী ওষুধ পরিহার করুন: কিছু কিছু কফ সিরাপ, ব্যথানাশক, স্টেরয়েড, ডায়েট পিল, জন্মনিরোধক বড়ি ও বিষন্নতার ওষুধ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এসব ওষুধ সেবন করবেন না।

ডার্ক চকলেট: ২০০৭ সালের জুলাই মাসে “দ্যা জার্নাল অফ দ্যা আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন” (JAMA) তে প্রকাশিত প্রতিবেদনে পরামর্শ দেয়া হয় যে, প্রতিদিন সামান্য পরিমাণে ডার্ক চকলেট খেলে রক্তচাপ কমে। ডার্ক চকলেটে ফ্লেভোনলস নামক উপাদান থাকে যা কারডিওভাস্কুলার ডিজিজ এর ঝুঁকি কমায়।
আরো পড়ুনঃ একদিনে ব্রণ থেকে মুক্তির উপায়
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন: ফলমূল, সবজি, কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার, মাছ, পোল্ট্রিজাত খাবার, বাদাম ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখুন। গরু বা খাসীর মাংস, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, মিষ্টি এসব কম খাবেন।
রক্তচাপ নিয়মিত পরীক্ষা: নিয়মিত চিকিৎসকের কাছে গিয়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করানো উচিত। যত আগে উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তত আগে নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং জটিল রোগ বা প্রতিক্রিয়া হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
ফাস্টফুড : ফাস্টফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। কারণ বেশীরভাগ ফাস্টফুডে বা যে সব খাবারে প্রিজারভেটিভ দেয়া থাকে তাতে সোডিয়ামের মাত্রা অনেক বেশি থাকে। তাই সবার প্রথমে এসব খাবারকে খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিন।
রক্ত চাপ কমাত চা উপকারীঃ এক গবেষণায় দেখে গাছে পরিমাণ মত চা পান করার ফলে মানুষের রক্তচাপ কমতে পারে। তবে দৈনিক ৩ কাপের বেশী চা পান করা যাবেনা। তবে আমেরিকার উত্তর ক্যারোলিনার ডিউক ইউনিভার্সিটি অফ মেডিকেল সেন্টারের মতে ৫০০ মিলিগ্রামের অর্থাৎ প্রায় ৩ কাপ চা/কফি খায় তাদের ব্লাড প্রেশার ৩ পয়েন্ট বেড়ে যায়। এই প্রভাব রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত থাকে।
উচ্চ রক্তচাপ কমানোর এই ঘরোয়া পথ্যগুলো ব্যবহারের আগে চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শও নিয়ে নিতে পারেন। কারখানায় প্রস্তুতকৃত বিভিন্ন কৃত্রিম ঔষধ যতোটা এড়িয়ে চলা যায়, ততোই উত্তম। কারণ এসব ঔষধের আছে নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাছাড়া কৃত্রিম এসব ঔষধ অধিক ব্যবহারের ফলে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে, শরীর অভ্যস্ত হয়ে পড়ে এসব ঔষধে। তাই প্রকৃতির সাহায্য নিয়েই নিয়ন্ত্রণে রাখুন রক্তচাপ, অনাকাঙ্ক্ষিত রোগে দেহকে বাসা বাঁধা থেকে বিরত রাখুন। সুস্থ থাকুন।
তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট অনলাইন ডেস্ক
Leave a Reply