আমরা সবাই কম বেশি ওজন বেড়ে যাওয়ার বিভিন্ন কারণ সম্বন্ধে সচেতন। অসচেতন জীবনযাপন, চিনিযুক্ত পানীয়, ভাজি খাবার, অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এবং জেনেটিক্যাল বিভিন্ন কারণ ওজন বেড়ে যাওয়ার পেছনে কাজ করে। এসবের পাশাপাশি আজ আমরা নানা পত্র-পত্রিকা, ওয়েব সাইট ঘেঁটেও ওজন নিয়ন্ত্রনে আনার নানান নতুন নতুন তথ্য জানছি।
কিন্তু অনেক সময় আশেপাশের কিছুমানুষের দিকে তাকালে মনে হয় ওজন সম্বন্ধে এসব টিপস তাদের ক্ষেত্রে মোটেই খাটে না। হয়ত আপনারই কোন বন্ধুকত রকম চিনিযুক্ত খাবার, বিরিয়ানি মশলাযুক্ত খাবার খাচ্ছে কিন্তু সে মোটা হচ্ছে না। অথচ আপনি এত নিয়ন্ত্রণ করেও ওজন কমাতে পারছেন না বরঞ্চ মনে হয় ওজন দিনদিন বাড়ছেই।
আপনার এই সংশয়ই দূর করতে rupoma.com এনেছে ওজন বেড়ে যাওয়ার কিছুনা জানা কারণ –
ক্লান্তি এবং হতাশা
আপনি কি জানেন হতাশা ওজন বেড়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। অনেক মানুষ হতাশা দূর করতে খাওয়া দাওয়াকে একটি পন্থা হিসেবে বেছে নেয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিতে, যখন মানুষ শারীরিক বা মানসিকভাবে আহত হয় তখন তার দেহে ক্লান্তি কারণে এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হয়- এর নাম করটিসল। করটিসলের কারণে মানুষের খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে মানুষ হতাশ হলে ওজন বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন ঃ ওজন বেড়ে গেলে স্বাস্থ্যগত যেসব সমস্যা হয়
হতাশাকে কখনও অগ্রাহ্য করবেন না। সবসময় খেয়াল রাখুন কি কি কারণে আপনার অতিরিক্ত ক্লান্তি এবং হতাশা আসছে। বেশি ক্লান্তি এবং হতাশা থেকে মানুষের “কুশিং সিনড্রোম ” নামক রোগ হতে পারে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ সমাধান হতে পারে দূরে কোথাও ছুটি কাটিয়ে আসা। শরীর এবং মনকে চাঙা করে তোলা।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তা শরীরের ক্লান্তি বাড়িয়ে দেয়। উপরে বর্ণিত পদ্ধতির মতই ক্লান্তি শরীরের মেদ বাড়িয়ে দেয়। আবার যাদের ইনসমনিয়া আছে তারা রাতের সময় পার করতে নানা রকম স্ন্যাক্স জাতীয় খাবার খান, এতেও ওজন বেড়ে যেতে পারে।
অনেক ওষুধ হঠাৎ ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে এর পার্শ্-প্রতিক্রিয়া হিসেবে। হতাশা দূর করার বিভিন্ন অ্যান্টি ডিপ্রেসেন্ট ওষুধের একটি অন্যতম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল ওজন বেড়ে যাওয়া। এই সকল ওষুধের কারণে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায় এবং মানুষ হঠাৎ করে মোটা হয়ে যায়। আপনার ওষুধ সম্বন্ধে কোন সন্দেহ থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
স্টেরয়েডের ব্যবহার
স্টেরয়েড ওজন বেড়ে যাওয়ার একটি অন্যতম কারণ। স্টেরয়েডের গ্রহণ করার ফলে ক্ষুধা বেড়ে যায়। তবে স্টেরয়েডের কারণে ওজন বাড়ার পরিমাণ নির্ভর করে ওষুধ গ্রহণের পরিমাণ এবং ডোজের উপর।
অ্যাজমা, আরথ্রাইটিস, লুপাস ইত্যাদি রোগের জন্য স্টেরয়েড গ্রহণের ফলে “কুশিং সিনড্রোম ” হতে পারে – এই রোগে মানুষের দেহে করটিসল হরমোন নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং মানুষের খাওয়ার চাহিদাও অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়।
শারীরিক অসুস্থতা
পূর্বের শারীরিক অসুস্থতা থেকেও ওজন বেড়ে যেতে পারে। ডায়াবেটিস পেশেন্টদের অনেক সময় ওজন বাড়তে পারে। ডায়াবেটিস হলে যে ইনসুলিন গ্রহণ করা হয় তা শরীরে কিছু সুগার তৈরি করে যা ফ্যাটে পরিনত হয়ে দ্রুত ওজন বাড়ায়।
হাইপোথায়রোডিজম ও ওজন বাড়ার একটি কারণ। এই রোগে শরীরে পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয় না ফলে শরীরের মেটাবোলিজমের হার গড়ে কমে আসে। তাই ক্যালরি বার্ন হয় না দেখে ওজন বেড়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক।
প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস থেকেও ওজন বাড়তে পারে। এই শারীরিক অসুস্থতা গুলি ওজন বাড়ানোর প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন এমতাবস্থায় ওজন নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে।
হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স
হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স বিভিন্ন ওষুধ গ্রহণের, পোস্ট ন্যাটাল ডিপ্রেশান, মেনোপোজ ইত্যাদি কারনে হতে পারে। মেনোপোজের পর মহিলাদের শরীরে পর্যাপ্ত ইস্ট্রোজেন হরমোন নিঃসৃত হয়না। তাই তাদের শরীরের অ্যাবডোমেনের চারপাশে ফ্যাট জমে যায়। “পলিভিস্টিক ওভারি সিনড্রম” – এটি সাধারণত মহিলাদের সন্তান ধারন করার সময়টায় হয়ে থাকে। এই সময়েও মহিলাদের শরীরে ওজন বেড়ে যায়।
আরো পড়ুন ঃ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে হরমোন থেরাপি নিতে পারেন।
পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব
অপর্যাপ্ত ভিটামিন ডি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম শরীরের মেটাবোলিজমের হার কমিয়ে দিতে পারে। এসব উপাদানের অভাব শরীরের চালিকা শক্তিও কমিয়ে দেয়। শক্তির অভাবে মানুষ কম পরিশ্রম করে এবং তাড়াতাড়ি শক্তি সঞ্চয় করতে চিনিযুক্ত খাবারের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ফলে দ্রুত ওজন বেড়ে যায়।
Source: My Health Tips
Leave a Reply