বর্তমান সমাজে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে । কর্মক্ষেত্রেও এখন পুরুষদের পাশে চাকরিজীবী বা পেশাজীবী নারীরা রয়েছে । তাই পুরুষদের চাইতে নারীদেরই এখন বেশি পরিশ্রম করতে হয় । কারণ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিস করে ঘরে এসেও তাদের সংসারের রান্নাবান্না, ছেলেমেয়েদেরকে দেখাশোনাসহ আরো নানান কাজ করতে হয় । এজন্য শ্রমজীবী নারীদেরকে সুস্থ থাকার জন্য তাদের নিজেদের যত্নবান হওয়া দরকার । কিন্তু আপনি তো সময়ই পান না তাহলে কিভাবে কি করবেন তাই ভাবছেন ? চলুন না, একটু জেনেই নি ।
কাজের প্ল্যান করুন
প্রথমেই যে কাজটি আপনাকে করতে হবে তাহল একটি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা বানিয়ে নেওয়া । যা আপনার অফিস ও ঘরের কাজের মধ্যে সমন্বয় রেখে অবশিষ্ট সময়টিকে কাজে লাগাতে পারেন ।
দিনের শুরুতে
প্রতিদিন সকালে একটি সুনির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করুন । সময়টি এমনভাবেই নির্ধারণ করবেন যেন সংসারের সব কাজ শেষ করে আপনার অফিসের প্রস্তুতি নিয়েও যেন যথেষ্ট সময় হাতে থাকে । সেটি যদি ৩০ মিনিটও হয় তাও ভালো।
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান
আমরা জানি আপনি কাজের চাপে এতই ব্যাস্ত থাকেন যে অনেক সময় পানি পান করতেই ভুলে যান । আপনি কি জানে এই পানি কম পান করায় পানিশূন্যতার ফলে আপনার ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে । তাই অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে অবশ্যই বিশুদ্ধ পানি পান করবেন আর দিনে ৩-৪ লিটার পানি অবশ্যই পান করা চাই। প্রয়োজন হলে একটি পানির বোতল সঙ্গে রাখুন।
নিয়মিত ব্যায়াম
ব্যায়াম আপনার শরীরের সুস্থতা বাড়ায় এবং কর্মক্ষেত্রে অলসতা দূর করে । তাই ঘুম থেকে উঠে প্রতিদিন সকালে একটু ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতেই পারেন । ব্যায়ামের জন্য ঘর থেকে বের হওয়াটা জরুরি নয় আপনি ঘরে বসেই সেরে ফেলতে পারেন ইয়গাসহ আরও নানা ব্যায়াম । এতে করে সারাদিন আপনার শরীর ও মন সতেজ থাকবে । সকালে সময় না পেলে অফিস থেকে ফিরে রাতেও নিয়মিত ব্যায়াম করে নিতে পারেন ।
সুষম খাদ্য গ্রহণ
আমরা অফিসে প্রায়ই ফাস্টফুড জাতীয় খাবার বেশি খেয়ে থাকি যাতে বেশি ক্যালরি বা ফ্যাট থাকে যা আমাদের একেবারেই গ্রহণ করা উচিত । তাই বলে আবার খাবার না খেয়েও থাকা যাবে না । এই সকল খাবার আপনার শরীরে বেশি পুষ্টি যোগায় না তাই শরীর দুর্বল হতে পারে । প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় ভিন্নতা নিয়ে আসুন। লক্ষ রাখবেন আপনার খাবার তালিকায় যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফল ও সবজি থাকে। নিয়মিত সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে আপনি সুস্থ ও সবল থাকবেন ।
হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করুন
আমরা জানি অফিসে একটানা বসেই কাজ করতে হয় কিন্তু সেটা না করে কাজের ফাঁকে ফাঁকে একটু হাঁটাহাঁটি করুন তাতে অবশ্যই কেউ কিছু বলবে না । মাঝে মাজে পাড়লে দাঁড়িয়েও কাজ করতে পারেন । এটি আপনার শরীরে রক্ত সঞ্চালনকে ঠিক রেখে শরীর সক্রিয় রাখতে সহায়তা করবে ।
হালকা খাবার রাখুন
আপনি ৮-৯ ঘণ্টা অফিস করলে এই দীর্ঘসময়ে পেট খালি হবেই কিন্তু তা থাকা যাবে না । জানেন তো নিয়মিত খালি পেটে থাকলে শরীরের অ্যাসিডিটিসহ বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে । সবসময় আপনার ব্যাগে কিছু হালকা খাবার অবশ্যই সাথে রাখবেন । সেটা হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল বা বিস্কুট জাতীয় খাবার ।
নিয়ম করে ডাক্তার দেখান
আপনার তো সময়ই নেই এই অজুহাতে ডাক্তারের কাছে যাবেন না সেটা করবেন না কারন কর্মজীবী নারীরা অনেক ছোটখাটো শারীরিক সমস্যাকে এড়িয়ে চলেন । আপনার এই এড়িয়ে চলার কারনে সমস্যাটা পরে বড় আকার নিতে পারে । তাই অবহেলা করবেন না । কম করে হলেও ২ মাসে অন্তত একবার ডাক্তার দেখান ও স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন ।
বিনোদন
কর্মজীবী নারীরা সপ্তাহ শেষে একদিন ছুটি পান আর ঐ এক দিনি তারা ঘরের কাজে বেশি মনোযোগী হন যা একেবারেই ঠিক নয় । ঐ দিনটিতে পরিবারের সাথে বিভিন্ন বিনোদনের আয়োজন করতে পারেন । যেমন নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, ভালো সিনেমা দেখা, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া, প্রিয় মানুষদের সাথে দেখা করা ও আড্ডা দেওয়া ইত্যাদি । আর বড় কোন ছুটি পেলে দূরে কোথাও গিয়ে ভ্রমণ করা । এটি আপনার কাজের একঘেঁয়েমি দুর করে নতুন উদ্যমে কাজ করার প্রেরণা ও শক্তি যোগাবে ।
সদা হাসিখুশি থাকুন
আমরা কর্মক্ষেত্রে অনেক সময়ই বিভিন্ন নেতিবাচক চর্চায় যেমন সহকর্মীদের সঙ্গে পরনিন্দায়, পরচর্চায় লিপ্ত থাকি যা করা একেবারেই কাম্য নয় । সম্ভব হলে এগুলো থেকে এড়িয়ে চলুন । নিজের কোন ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে কাছের একান্ত কোন বন্ধুর সাথে শেয়ার করুন ।
আসলে ব্যস্ততা আমাদের এমন ভাবেই ঘিরে রেখেছে যে মাঝে মাঝে এতটাই অবসন্ন হয়ে পরি যার ফলে অনেক বিষয়গুলো আমাদের খেয়ালেই থাকে না । এগুলোকে কাটিয়ে উঠেই আমাদের সুস্থ ও সুন্দর থাকতে হবে ।
Leave a Reply