রোজায় প্রতিদিনের ইফতারিতে চাই নানা স্বাদের বাহারি রকমের খাবার। তাই ইফতারের বা খাবারের মেন্যু সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পরেন ঘরের গৃহিণীসহ ঘরের কর্তারাও। অনেকেরই ধারনা রোজায় ১৩/১৪ ঘণ্টা না খেয়ে থাকায় স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই ইফতার ও সেহরিতে বেশি করে খেতে হবে আর তাই এ জন্যই এত সকল আয়োজন। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন এই সকল বাহারি পদের খাবার আপনার শরীরের সঠিক পুষ্টির ঘাটতি পুরন করতে পারছে কিনা? তাই প্রতিদিন বেশি বেশি খাবারের প্রতি লক্ষ্য না রেখে অল্পের ভিতর অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য নির্বাচন করতে হবে।
রোজা সুষ্ঠভাবে পালন করতে হলে প্রয়োজন সঠিক খাদ্য তালিকা নির্বাচন, মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা, এবং আনুগত্য। পুষ্টিবিদদের মতে, সহজ কিছু নিয়ম কানুন ও পরামর্শ সঠিক ভাবে অনুসরণ করতে পারলেই আপনি খুব সহজেই কষ্ট ছাড়া রোজা পালন করতে পারবেন।
এই রহমতের মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার স্বাস্থ্যের সুস্থতা নিশ্চিত করতে পারবেন। যদি সঠিক ভাবে ভাবে আপনার খাদ্য তালিকা প্রস্তুত এবং নিয়মিত অনুসরন করেন। মনে রাখবেন, কিছু কাজ কখনই করবেন না । শুধু পানি পান করে রোজা রাখবেন না। ইফতারির পর অতিরিক্ত খাবেন না। সময় নিয়ে খাবার ভালোভাবে চিবিয়ে খাবেন, যা হজম শক্তিতে সহায়তা করবে। ইফতার ও সেহরির মধ্যবর্তি সময়ের মধ্যে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করুন। কোন রকম এনার্জি ড্রিংকস, কার্বনেটেড সমৃদ্ধ ড্রিংকস এবং সোডা জাতীয় পানি পান করা থেকে বিরত থাকুন। কারন এগুলো আপনার এসিডিটি বাড়িয়ে শারীরিক ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয়।
ইফতারে যা খাবেন: একজন রোজাদার ব্যক্তি ইফতারের সময় কি খাবেন, কতটুকু খাবেন তা নির্ভর করে তার বয়স এবং স্বাস্থ্যের অবস্থার উপর। একজন সুস্থ ও স্বাস্থ্য সচেতন রোজাদার ব্যাক্তি তার ইফতারিতে খুরমা-খেজুর, ঘরের তৈরিকৃত ফলের বা অন্য যে কোনো শরবত, শসা, বুট, টাটকা মৌসুমি ফল ইত্যাদি রাখা ভালো। যে কোনো ফলমূলে থাকা প্রচুর ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়। তেহারি বা হালিম না খেলেই উত্তম কারন অতিরিক্ত তেল বা অতিরিক্ত ডাল জাতিও খাবারে পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে বদহজম হতে পারে। আর রুচি পরিবর্তন করতে চাইলে জিলাপি বা মিষ্টি জাতিও খাবারও খেতে পারেন। রমজান মাসে অতিরিক্ত গরম পরলে অবশ্যই বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। নিয়মিত এশা এবং তারাবির নামাজের পর পরিমাণ মতো ভাত, মাছ অথবা শাক-সবজি, মুরগির মাংস, কলিজা, এবং ডাল খাবেন।
কী খাবেন সেহেরিতে: রমজানে রোজা রাখার জন্য আপনাকে সকালের নাস্তার পরিবর্তে সুবেহ সাদিকের আগেই ঘুম থেকে উঠে খাওয়া দাওয়া সেরে ফেলতে হয়। কিন্তু অনেকেই তারাবির নামাজের পরেই খাওয়া দাওয়া সেরে নেয় এবং সুবেহ সাদিকের সময় আর উঠে না। আপনার শরীরটাকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই সেহরি খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। সারাদিন যেহেতু আপনাকে উপশ থাকতে হবে এই জন্য মনে রাখতে হবে, সেহরির খাবারগুলো মুখরোচক ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে হবে। অধিক মসল্লা, তেল বা অধিক ঝাল এবং চর্বি জাতীয় খাবার একদমই খাওয়া উচিত হবে না। ভাতের সাথে বেশি বেশি শাক-সবজি ও মাছ রাখার চেষ্টা করুন। এতে যেমন পেট ঠাণ্ডা থাকবে তেমনি বদহজম থেকেও মুক্তি পাবেন। সেহরির সময় গরুর মাংস বা ভুরি না খাওয়াই উত্তম। কারন এটা অতিরিক্ত গরম হওয়াতে আপনার শরীরের ভিতর পানি শুষে নিয়ে আপনার পানি পিপাসাকে বাড়িয়ে দিবে। আবার অনেকেই মনে করেন যে, সারাদিন যেহেতু না খেয়ে থাকা লাগে তাই সেহেরির সময় পেটুকের মতো পেট ফুলিয়ে খেতে হবে। তা কিন্তু মোটেই ঠিক নয়। কারন প্রয়োজনের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত খাবার খেলে ভালোর চেয়ে ক্ষতি হবার আশঙ্কাই বেশি।
প্রয়োজনীয় টিপস: ইফতারে সময় প্রচুর পরিমানে পানি পান করুন। খালি পানি খেতে না পারলে যেকোনো ফলের শরবত বানিয়ে খান। চাইলে ইসবগুলের ভুষিও বানিয়ে খেতে পারেন। বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খাবেন যেন সহজে ও তাড়াতাড়ি সব হজম হয়ে যায়। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাদ্য, ভাজা পোড়া খাওয়া থেকে দূরে থাকুন। তা না হলে বদহজমের সাথে বুক জ্বালাপোড়া ফ্রি পাবেন। রান্নার সময় কখনই খাবারে ডালডা ব্যবহার করবেন না। ভাল সয়াবিন তেল বা সরিষার ব্যবহার করুন, তবে যতটা সম্ভব তেল কম খাওয়াই ভাল। অতিরিক্ত লবণ বা লবন জাতিও খাবার খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারণ অতিরিক্ত লবন খেলে যেমন প্রেসার বৃদ্ধি পাবার আশঙ্কা থাকে তেমনি পানির পিপাসাও বৃদ্ধি করে। যারা সিগারেট, মদ, চা, কফি, ইত্যাদি বাজে অভ্যাস আছে, তারা এগুলো পরিহার করতে চেষ্টা করুন। রাতে ঘুমানোর আগে অথবা সেহেরির পর অবশ্যই দাঁত ব্রাশ করুন। যাদের নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস আছে তারা ইফতারের পর ব্যায়াম করে নিন কারন রোজা অবস্থায় ব্যায়াম করলে শরীরে ক্লান্তি চলে আসবে এবং প্রচুর পানি পিপাসাও লাগবে। অতিরিক্ত গরম পরলে দিনে ২-৩ বারও গসল করে নিতে পারেন অথবা সবসময় অজু অবস্থায় থাকতে কিছু সময় পর পর অজু করে নিন। এতে শরীর সতেজ থাকবে এবং শরীর ভেজা থাকার ফলে পানি পিপাসাও কম লাগবে এবং অনেক অজানা রোগ জীবাণু থেকেও মুক্তি পেতে পারেন।
Leave a Reply