মিষ্টি পেঁপে একটি বারমাসী ফল। এতে বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান এবং অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যেগুলো চুল এবং ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী। আসুন জেনে নিই চুল এবং ত্বকের যত্নে ঠিক কিভাবে কাজ করে এই বারমাসী মিষ্টি ফলটি।
ত্বকের যত্নে
ত্বকে পুষ্টি যোগায় :
মিষ্টি পাকা পেঁপেতে ভিটামিন এ এবং পাপেইন এনজাইম রয়েছে যা ত্বকের চামড়া মরে যাওয়া রোধে করে এবং প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন প্রদান করে থাকে। এর ফলে ত্বকের আয়ুস্কাল তুলানামূলকভাবে বাড়িয়ে দেয়। এটি ত্বকের পানির চাহিদাও পূরণ করে। এর জন্য এক ফালি পাকা পেঁপের সাথে ৩ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে মুখে মাখুন এবং ২০ মিনিট পরে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
ব্রণের দাগ কমিয়ে দেয় :
ব্রণের সমস্যা প্রায় সবারই থাকে। এসব ব্রণের কারণে মুখে খুব বাে ধরনের দাগ তৈরি হয়। এই বাজে দাগগুলো নিরাময় করতে পারে সুমিষ্ট এই ফলটি। মুখের অন্যান্য যেকোনো দাগ যেমন মেছতা, ফুস্কুরির দাগও খুব সহজেই দূর করে দিতে পারে।
গায়ের রঙ উজ্জ্বল করে
গায়ের রঙ ফর্সা করায় পেঁপের জুড়ি নেই। এর ভিটামিন সি ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করে।
(১) প্রতি সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার পেঁপের নরম পাকা অংশ হাতের তালুতে চটকে নিয়ে মুখে, ঘাড়ে, হাতে এবং পায়ে মেখে নিন। শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। এক সপ্তাহেই পরিবর্তন দেখতে পাবেন।
(২) একটি লেবুর রসের সাথে হাফ কাপ পাকা পেঁপে চটকে মিশিয়ে নিন। প্যাকটি মুখে ব্রাশ এর সাহায্যে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ৩০মিনিট পর শুকিয়ে এলে ঠাণ্ডা পানি ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন এই প্যাকটি ব্যবহার করুন।
(৩) এক কাপ সবুজ পেঁপে ব্লেন্ডার এ ব্লেন্ড করে নিন সাথে ১ চা চামচ ভিটামিন ই তেল, মধু এবং টকদই মিলিয়ে নিন। ধীরে ধীরে প্যাকটি মুখে ম্যাসাজ করুন। ১০-১৫ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
ত্বক প্রাণবন্ত রাখতে
পেঁপেতে প্রচুর পরিমানে পানি রয়েছে যা ত্বককে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে।
(১) হাফ কাপ পাকা পেঁপে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন সাথে অল্প একটু খাঁটি মধু মিশিয়ে নিন। মুখে এবং ঘাড়ে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
(২) আপনার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় পেঁপে যোগ করুন। তরমুজ বা শসার সাথে পেঁপে ব্লেন্ড করে জুস হিসেবেও খেতে পারেন। এতেও ভালো কাজ দিবে।
বলিরেখা দূর করে
পেঁপের ভিটামিন এ মুখের মরা চামড়া তুলে ফেলতে সাহায্য করে এবং ত্বককে কোমল করে। এর ভিটামিন সি এবং ই ত্বককে করে আরও প্রাণবন্ত এবং ফ্রেশ।
অধিক পেকে যাওয়া হাফ কাপ পেঁপে নিয়ে ম্যাশ করে ফেলুন। এতে এক টেবিল চামচ দুধ এবং অল্প একটু মধু মিশিয়ে নিন। মুখে এবং ঘাড়ে লাগিয়ে নিন। ১৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক-দুইবার ফেস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন।
মুখের ব্রণ ও দাগ দূর করে
পেঁপের প্যাপেইন এনজাইম এ রয়েছে ত্বক পরিষ্কার করার উপকরণ যা মুখের গর্ত সারাতে সাহায্য করে। এটি মুখের দাগ ও ব্রণ দূর করতেও সমানভাবে পারদর্শী।
(১) কয়েক টুকরো পেঁপে নিয়ে এর জুস তৈরি করুন। এবার কটন বলের সাহায্যে দাগ এবং ব্রণের যায়গাগুলোতে লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট পর উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এই পদ্ধতি অবলম্বণ করুন। ব্রণ বা দাগ কোনটাই থাকবে না।
(২) জুস করা ঝামেলা মনে হলে এক টুকরো পেঁপে নিয়ে প্রতিদিন দাগের জায়গায় ঘষুন। ১০ মিনিট পর উষ্ণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। একই কাজ হবে।
রোদে পোড়া এবং দাগ দূর করে
পেঁপের বিভিন্ন উপকারি এনজাইম মুখের রোদে পোড়া দাগ এবং কালোভাব দূর করতে সাহায্য করে। নাক বা থুতনির কাল দাগ, কনুই বা হাটুর কাল দাগসহ বিভিন্ন দাগ দূর করে পেপের এনজাইম। সাথে আপনাকে দিবে আপনার আকাঙ্ক্ষিত গায়ের রঙ।
একচতুর্থাংশ পেঁপে, এক টেবিল চামচ লেবুর রস এবং হাফ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। আক্রান্ত জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। শুকাতে দিন, তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।যেকোনো ধরণের দাগ কমাতে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার এই মাস্ক ব্যবহার করুন।
সবচাইতে ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ফল অথবা সবজি হিসেবে পেঁপে রাখুন। সৌন্দর্যের পাশাপাশি শারীরিক অনেক সমস্যা থেকেও মুক্তি পাবেন।
চুলের যত্নে
চুল পড়া রোধ করে :
পাকা পেঁপে চুলে নিয়ম করে ব্যবহারে চুল পড়া রোধে সাহায্য করে। পাশাপাশি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়।
আরো পড়ুন রাতারাতি ব্রণ দূর করার সহজ উপায়
খুশকি দূর করে :
চুলে খুসকি হলে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। সপ্তাহে দুই দিন অর্ধেক কাপ লস্যির সাথে পাকা পেঁপে মিশিয়ে চুলে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেললে চুলের খুসকি দূর হয়ে যায়।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে :
মিনারেল, ভিটামিন এবং এনজাইমে ভরপুর পাকা পেঁপে চুলে মাখলে এটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনারের কাজ করে। চুলকে উজ্জ্বল আর মসৃণ করে তোলে।
Leave a Reply