কুঁচবরণ কন্যা যে তার মেঘ বরণ কেশ, আমায় নিয়ে যাও গো তোমরা সেই কন্যার দেশ । সুধুই কি কবিতা গানও কিন্তু আছে, টুনি লো তোর লম্বা মাথার কেশ, মিষ্টি মুখের হাসি দিয়া পাগল করলি দেশ টুনি লো ! গায়ক কবি থেকে শুরু করে যুগে যুগে অনেক মনিষীরাই এই লম্বা কেশের পাগল ছিলেন । রূপকথার ট্যাংল্যান্ড এর নায়িকাটার কথা হয়ত অনেকেই জানেন যে সে তার দীঘল লম্বা কেশ দিয়ে কিভাবে তার রাজপুত্রসহ গোটা রাজ্যকে বাচিয়ে ছিল ।
এখন বলবেন এগুলো রুপকথার গল্পেই হয় বাস্তবে নয় । কেমন হয় যদি রূপকথাটাকে বাস্তবে পরিণত করা যায় ? ট্যাংল্যান্ড এর নায়িকাটার মত যদি আপনিও কোমর জড়ানো চুলের মালিক হতে পারেন । চুলের সঠিক যত্ন নিলে, আর যথাযথ পুষ্টি দিতে পাড়লে চুল ঝরা অনেক কমে যাবে এবং বৃদ্ধিও পাবে তাড়াতাড়ি। কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন সে নিয়ে আপনার চিন্তার শেষ নেই জানি, তাই চিন্তাগুলকে দূর করতে মনোযোগ সহকারে পড়ুন এবং সে ভাবে মেনে চলুন । দেখবেন কীভাবে আপনার একরাশ ঝলমলে উজ্জ্বল চুল হয়ে গেছে যা পাগল করবে সবাইকে !
বদলে ফেলুন শ্যাম্পু করার পদ্ধতি : আপনি জানলে অবাক হবেন আপনার চুলের বৃদ্ধি নির্ভর করে আপনি কি শ্যাম্পু কত ঘন ঘন ব্যবহার করছেন আর কী ধরনের জলে করছেন তার উপর । প্রতিদিন শ্যাম্পু করলে চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায় এবং চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়, ফলে চুল ফেটে যায় ও ঝরেও বেশি। আর ঝরে গেলে তো চুল লম্বা হতে পারে না । তাই চুলকে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচাতে হলে সপ্তাহে সর্বচ্চ তিনবারের বেশি শ্যাম্পু করা যাবে না।
আরো পড়ুন ঃ ত্বকের উপরে জমা মৃত কোষেদের সরিয়ে হয়ে উঠুন আসল সুন্দরী !
নিয়মিত চুলের গোঁড়ায় ম্যাসাজ করুন : মাথায় ম্যাসাজ করলে যেমন আরাম লাগে, তেমনি চুলের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি ঘটে । মাঝে মধ্যে কাজের ফাঁকে একটু সময় নিয়ে নিজেই সেরে ফেলতে পারেন ম্যাসাজ । কারন এই ম্যাসাজের ফলে চুলের গোড়ায় রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, ফলে চুলের ফলিকলে সহজেই পুষ্টি পৌঁছে যায় । সপ্তাহে অন্তত একদিন ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল দিয়ে মাথায় ম্যাসাজ করে নিতে পারেন । এটা চুলের বৃদ্ধিতে দারুণ কাজে ভাবে কাজে দেবে ।
মাসে দু’বার হট অয়েল ট্রিটমেন্ট : চুলের গোড়ায় তেলের পুষ্টি পৌঁছে দিতে অয়েল ম্যাসাজের বিকল্প নেই । নারকেল তেল হালকা গরম করে হাতের আঙ্গুলে ভিজিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিন । একটা বড়ো তোয়ালে কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালো করে চিপিয়ে কিছুক্ষণ মাথায় জড়িয়ে রাখুন ঠান্ডা হওয়ার আগ পর্যন্ত । এরপর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ।
ভেজা চুলে বাড়তি যত্ন : গোসল শেষে চুল ভেজা অবস্থায় ঘষে ঘষে মুছবেন না এবং আঁচড়াবেনও না । ভেজা অবস্থায় চুলের গোঁড়া নরম থাকে । ফলে দ্রুত মুছলে বা আঁচড়ালে চুল উঠে যেতে পারে । এই জন্য তোয়ালে দিয়ে হালকা ভাবে চুল মুছুন, তারপর বাতাসে শুকিয়ে নিন ।
কন্ডিশনার ব্যবহার করুন : মাথায় শ্যাম্পু করলে স্বাভাবিক ভাবে চুলের তেলাভাব আর আর্দ্রতা শুষে নেয় । তাই কন্ডিশনার ব্যবহার করলে হারানো আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে এবং চুলকে সতেজ, মসৃণ আর উজ্জ্বলও করে তোলে । তাই প্রতিবার শ্যাম্পু করার পাশাপাশি কন্ডিশনারও ব্যবহার করুন ।
চুলের হাল ফিরাতে ঠান্ডা জল : ভুলেও কখনও গরম পানি দিয়ে চুল ধোবেন না এটা চুলের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর । মাথায় শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহারের পর ঠান্ডা পানিতে কিছুক্ষণ চুল ভিজিয়ে রাখুন । এতে চুলের আর্দ্রতাও ঠিক থাকবে এবং চুল মজবুতও হবে।
নিয়মিত চুল ছেঁটে রাখুন : অনেকেই আছেন যাঁরা চুল লম্বা করার আসায় কাঁচির ধারেপাশেও যান না । কিন্তু তিন মাস অন্তর অন্তর যদি চুল ছেঁটে না ফেলেন তাহলে চুল বাড়বে কিভাবে । যাদের চুলের আগা ফাটার সমস্যা আছে, তাঁদের অবশ্যই নিয়মিত চুল ছেঁটে ফেলতে হবে ।
কেমিক্যাল থেকে দূরে থাকুন : চুলের অতিরিক্ত সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য আমরা বিভিন্ন কেমিক্যাল যুক্ত প্রোডাক্ট ব্যবহার করি যা চুলের জন্য অনেক ক্ষতিকর । তাই কৃত্রিম রাসায়নিক কেমিক্যালযুক্ত জিনিস ব্যবহার করে ঘন ঘন চুল কালার করা বা হেয়ার ল্যাকার করবেন না । এমনকী, আপনার শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারে যে উপাদানগুলো দেওয়া থাকে তাতে যদি কেমিকালের পরিমাণ বেশি থাকে, তাহলে সেটা ব্যবহার করবেন না । সালফেট চুলের স্বাভাবিক তেলাভাব নষ্ট করে, শ্যাম্পু বা কন্ডিশনারে সালফেটের পরিমাণ বেশি থাকায় চুলকে রুক্ষ আর বিবর্ণ করে দেয় । তাই প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরিকৃত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন । কেনার পূর্বে লেবেলে উপাদানগুলোর কেমিক্যাল পার্সেন্টেজ দেখে তবেই কিনবেন ।
অতিরিক্ত স্টাইলিং নয় : আমরা প্রায়ই পার্লারে গিয়ে চুলের স্টাইলিং বদলানোর চেষ্টা করি । লম্বা চুল পাওয়ার আশা থাকলে তা কিন্তু ওখানেই শেষ ! কারন ঘন ঘন চুল পার্মিং, কার্লিং, অথবা হেয়ার স্ট্রেট করতে গিয়ে চুলের যে পরিমাণ মারাত্মক ক্ষতি আপনি করে ফেলেন তা হয়ত আপনার অজানা । আগেই বলেছি যে বেশি গরম কিছু চুলে প্রয়োগ করলে তা চুলের জন্য ক্ষতিকর । অতিরিক্ত তাপ প্রয়োগের ফলে চুলের গঠনতন্ত্র নষ্ট হয়ে যায় এবং চুল পরতে শুরু করে । এমনকী হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহারের ফলেও তা হতে পারে । ঘন ঘন স্টাইলিং করবেন না, করার আগে অবশ্যই হিট প্রোটেকট্যান্ট প্রডাক্ট লাগিয়ে নিন। রোজ রোজ ড্রায়ার ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক হাওয়ায় চুল শুকোন। চুল মজবুত থাকলে বাড়বেও তাড়াতাড়ি।
আরো পড়ুন ঃ অল্প সময়ে ঝলমলে চুল আর ত্বকের বিশেষ ট্রিটমেন্ট !
নিয়মিত হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন : হেয়ার মাস্ক সম্পর্কে হয়ত এখন কাররই অজানা নেই । চুলের আর্দ্রতা ফিরিয়ে এনে চুলকে সজীব আর সুন্দর করে তোলে । তাই আপনার উচিৎ প্রতি দু’সপ্তাহ পর পর হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা । আর ঘরোয়া ভাবেই বানিয়ে ফেলুন হেয়ার মাস্ক । এজন্য ডিমের কুসুম, মধু আর দই একসাথে মিশিয়ে এই প্যাকটি তৈরি করে চুলে লাগিয়ে ফেলুন এতে চুলের মসৃণতা বাড়বে । চাইলে আভোকাডো আর কলার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন এতে করে রুক্ষতা ও জটপাকানো চুলের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে । আপনি চাইলে বাজারে বিক্রিত মাস্কও ব্যবহার করতে পারেন । আর ঝলমলে ঘন চুল চান ? তাহলে ডিম, মধু ও বিয়ার ক্যাসট্রল অয়েলের মাস্ক ব্যবহার করুন ।
পুষ্টিকর খাবার খান : শরীরে পর্যাপ্ত প্রোটিনের অভাব থাকলে কিন্তু চুল কিছুতেই মজবুত হবে না । আর যদি চুল মজবুতই না হয় তাহলে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, ঘনকালো লম্বা চুল নেহাত স্বপ্নই থেকে যাবে । প্রতিদিনের খাবারে অবশ্যই আমিষ থাকা চাই । আপনি যদি নিরামিষ খেতে পছন্দ করেন, তাহলে প্রতিদিন দুধ, বিন, পালংশাক ও ডাল জাতীয় খাবার অবশ্যই খাবেন । সামুদ্রিক তৈলাক্ত মাছ, বাদাম, আভোকাডো, তিসির তেল থেকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায় যা চুলের জন্য অনেক উপকারী । আর অবশ্যই প্রচুর পানি পান করতে হবে।
সঠিক সাপ্লিমেন্ট খান : পুষ্টি ছাড়া কি চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করা সম্ভব । আপনার প্রতিদিনের খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টি নাও থাকতে পারে। তাই ফুড সাপ্লিমেন্ট দিয়েই আপনাকে সেই ঘাটতি পূরণ হবে। ওমেগা থ্রি, ভিটামিন বি এবং অ্যান্টি-অক্সিডান্টও আপনার চুলকে মজবুত করে । এই জাতিও সাপ্লিমেন্ট বা ওমেগা থ্রি পেতে ফিশ অয়েলও খেতে পারেন ।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন : কখনই অতিরিক্ত স্ট্রেস নেবেন না আর পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে চুলের স্বাস্থ্য ও চুল বৃদ্ধির পক্ষে অনেকটাই ক্ষতিকর । আপনি সারাদিন পরিশ্রমের পর যখন ঘুমাতে যান, তখন আপনার চুলও তার কার্যকারিতা শুরু করে সারাদিনের ক্ষতিকর প্রভাব কাটিয়ে আস্তে আস্তে তরতাজা হতে থাকে । তাই দৈনিক আপনাকে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করতে হবে ।
ক্ষতিকর আবহাওয়া থেকে চুলকে বাঁচান : চড়া রোদ বা শুকনো বাতাসেও কিন্তু চুল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সুইমিং পুলের ক্লোরিনযুক্ত জলও চুলের পক্ষে খুব খারাপ। অনেকক্ষণ বাইরে থাকতে হলে পাতলা ওড়না বা স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। সাঁতারের সময়ও শাওয়ার ক্যাপ ব্যবহার করতে ভুলবেন না!
Leave a Reply