চুলকে বলা হয়ে থাকে মানুষের সৌন্দর্যের একটি অপরিহার্য অংশ। এই চুলকে সুন্দর দেখাতে আমরা আজকাল অনেক রকম স্টাইলিং করে থাকি। ব্লো ড্রাই, আয়রন, রিবন্ডিং, চুল কালার… আজকাল স্টাইলিং এর জন্য আমরা কি না করি! কিন্তু ভেবে দেখুন তো! প্রতিনিয়ত হিট, কালার, কেমিক্যাল প্রোডাক্টস, সবই কিন্তু ক্ষণিকের জন্য আমাদের চুলকে সুন্দর দেখালেও দিন দিন চুলকে করে দিচ্ছে নিস্তেজ ও দুর্বল। চুলে থাকে কেরাটিন ও হাইড্রোজেন বন্ডস। যখন চুলে আমরা হিট অ্যাপ্লাই করি স্টাইলিং-এর জন্য, তা চুলের প্রোটিন ও হাইড্রোজেন বন্ড-গুলোকে ভেঙ্গে ফেলে এবং এটিই মূলত প্রধান কারণ চুলের ন্যাচারাল অয়েল ও প্রোটিন নষ্ট হওয়ার পেছনে। যার পরবর্তী ফল হিসেবে আমরা পাই চুল-পড়া, চুলের আগা ফেটে যাওয়া, ড্রাই হয়ে যাওয়া। কিন্তু তাই বলে আমরা স্টাইলিং টুলস ফেলে তো দিতে পারি না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে, বিয়েতে বা একটু নতুন লুক-এর জন্য স্টাইলিং লাগবেই। কিন্তু চুলের সঠিক যত্ন নিয়ে আমরা চুলকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারি। চলুন দেখে নেই কিভাবে বাসায় যা যা আছে সেগুলো দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারবেন উপকারী কিছু হেয়ার প্যাকস।
হট অয়েল ট্রিটমেন্ট
বাসায় নারিকেল তেল সবারই থাকে। তেল গরম করে চুলে ম্যাসাজ করা খুবই উপকারী একটা পদ্ধতি চুলকে কোমল ও মসৃণ করার জন্য। প্যারাসুট এডভান্সড এনরিচড কোকোনাট হেয়ার অয়েল একটি খুবই ভালো অপশন হতে পারে। এটি পুরোপুরি খাঁটি নারকেল তেল যা চুলে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে করবে মজবুত ও স্বাস্থ্যবান। আপনার চুলের জন্য যতটুক প্রয়োজন ততটুক তেল নিয়ে অল্প গরম করে নিন। এবার পুরো চুলে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করুন। সারারাত রেখে পরের দিন শ্যাম্পু করে ফেলুন।
নারকেল তেল ও আমন্ড মিল্ক-এর মাস্ক
এই প্যাকটির জন্য ৩ টেবিল চামচ প্যারাসুট অ্যাডভান্সড কোকোনাট হেয়ার অয়েল, ৩-৪ টেবিল চামচ আলমন্ড দুধ, একটি ডিমের সাদা অংশ নিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। তারপর পুরো চুলে লাগিয়ে ১-২ ঘণ্টা রেখে দিন। এবার পছন্দমত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
মেয়নেজ হেয়ার মাস্ক
মেয়নেজ চুলকে ঝকঝকে, মসৃণ ও হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। খাবারের পাশাপাশি আমরা এটিকে দারুণ একটি হেয়ার মাস্ক হিসেবে কাজ করতে পারে। একটি বাটিতে ২ টেবিল চামচ পরিমাণ মেয়নেজ নিয়ে তাতে অল্প পরিমাণ প্যারাসুট অ্যাডভান্সড কোকোনাট হেয়ার অয়েল দিয়ে মিক্স করে নিন। তারপর তা পুরো চুলে দিয়ে রেখে দিন ১ ঘণ্টার মত। এরপর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কলা ও মধুর হেয়ার মাস্ক
এই হেয়ার মাস্ক-টি হিট স্টাইলিং টুলস ব্যবহারের ফলে নষ্ট হয়ে যাওয়া চুলের জন্য বেশ উপকারী একটি মাস্ক। কলা ছুলের মসৃণতা ও কোমল ভাব ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। একটি বাটিতে একটি কলা, ২-৩ টেবিল চামচ মধু ও ২ টেবিল চামচ পরিমান প্যারাসুট অ্যাডভান্সড কোকোনাট হেয়ার অয়েল নিয়ে ভালোভাবে চটকে নিন। রেখে দিন ১ ঘণ্টার মত। তারপর বরাবরের মত শ্যাম্পু!
আমলকী পাউডার
আমলকী শুধু চুল পড়া কমানোর জন্য ব্যবহার করা হয় না। খুশকির মত বিরক্তিকর সমস্যাকে সহজেই দূর করতে পারবেন আমলকীর হাত ধরে। চুলকে হেলদি ও মজবুত করে এবং কন্ডিশনিং করে। যদি রোজ একটা আমলকী খাওয়া যায়, তাহলে চুলের সাথে সাথে শরীরও থাকবে হেলদি।
উপকরণ
৫ থেকে ৬ চামচ আমলকী পাউডার
একটু জল
পদ্ধতি
একটু জলে আমলকী পাউডার গুলে নিন।
চুল ভাগ করে নিন কয়েকটি অংশে। প্রতি অংশে ঘন পেস্ট লাগান।
২৫ থেকে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
সপ্তাহে তিনদিন করুন দ্রুত ভালো ফল পেতে।
এছাড়াও আমলকীর পাউডারের সাথে দই, হেনা পাউডার ও ব্রাক্ষ্মি পাউডার মিশিয়েও লাগাতে পারেন।
নিমের জল
চুল থেকে ত্বক সবকিছুকেই হেলদি রাখতে, নিমের ব্যবহার বহু বছর ধরে হয়ে আসছে। এটা চুলকে হেলদি তো রাখেই, তার সাথে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল রূপে কাজ করে, যেটা খুশকি, স্ক্যাল্পের অন্যান্য সমস্যা যেমন চুলকানি, ফুসকুড়ি এসব কমায়, এমনকি উকুনও।
উপকরণ
অনেকগুলি নিম পাতা
২কাপ জল
পদ্ধতি
একটা পাত্রে জল ফোটান। এবার এতে নিম পাতা দিন। নিম পাতাসহ জল ফোটান ১৫ থেকে ২০ মিনিট।
তারপর জলকে ঠাণ্ডা হতে দিন। মাথা ধুয়ে নিয়ে, সব শেষে এটা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
এই নিমের জল দিয়ে সপ্তাহে তিনদিন চুল ধুয়ে ফেলুন। ব্যাস চুলের সমস্ত সমস্যা গায়েব।
আরো পড়ুন ত্বক দ্রুত ফর্সা করার জাদুকরী তিন উপায়
শিকাকাইের শ্যাম্পু
প্রাকৃতিক শ্যাম্পু হল শিকাকাই, যেটা প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যেটা স্ক্যাল্পকে ভালো রাখে। চুল পড়া কমায়, সাথে ফ্রিজি চুলকে ঠিক করে। খুশকি কমাতেও সাহায্য করে।
উপকরণ
৬চামচ শিকাকাই পাউডার
২কাপ জল
পদ্ধতি
সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। পরেরদিন সকালে চুল ধুয়ে নিন।
তারপর শিকাকাই জল দিয়ে চুল শ্যাম্পু করুন।
শিকাকাই জল দিয়ে ১০ মিনিট মত স্ক্যাল্পসহ চুলে ম্যাসাজ করুন।
তারপর মাথা ধুয়ে নিন। এটাও সপ্তাহে এক বা দুদিন ব্যবহার করুন।
ব্যস! এই কয়েকটি খুবই সহজ ঘরে বানানো হেয়ার মাস্ক আপনার চুলকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারে। নিয়মিত ব্যবহার চুলকে করবে আবারো স্বাস্থ্যজ্জল।
Leave a Reply