কড়া রোদে গরমে অস্থির হওয়ার দিন শুরু হয়ে গেছে। বৈশাখের প্রথম দিন থেকেই নিজের যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। শরীর, ত্বক, চুল ভালো থাকলে মন খারাপের পাল্লাও যে হালকা থাকবে। শুরু করা যাক ত্বক নিয়েই। প্রতিদিন কী করবেন, কী করবেন না—সেটা জানা থাকা জরুরি এই সময়। তার সঙ্গে ঘরোয়া প্যাক ভালো রাখবে ত্বক। ত্বকের যত্নের খুঁটিনাটি বিষয় তুলে ধরা হলো এই প্রতিবেদনে।
ত্বক ফেটে যাচ্ছে, কী করব?
‘অনেকেই এ সমস্যা নিয়ে আসেন আমার কাছে।’ বললেন রূপবিশেষজ্ঞ শারমিন কচি। ত্বকের মরা চামড়া ওঠার প্রক্রিয়াকে অনেকে মনে করেন ত্বক ফেটে যাচ্ছে। তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারীরা এ প্রক্রিয়াটি অনেক সময় বুঝতে পারেন না। শুষ্ক ত্বক যাঁদের, চিন্তায় পড়ে যান তাঁরা। মধু সমাধান দেবে। ২ চা-চামচ টক দইয়ের সঙ্গে ১ চা-চামচ মধু মেশান। এবার মুখ ধুয়ে নিন পানি দিয়ে। অন্তত ১০ মিনিট মালিশ করুন। প্যাক হিসেবে ব্যবহার করবেন না। এক মাস করলেই হবে। সপ্তাহে ১ দিন। মাসে ৪০ মিনিট সময় ব্যয় করার ফলাফল—ত্বকের রোদে পোড়া ভাব চলে যাবে, মরা চামড়া দূর হবে, ত্বক করবে চকচক, নতুন চামড়া হওয়ায় সহায়তা করবে।
নতুন ত্বককে স্বাগত
যত্ন নেওয়ার মাধ্যমেই স্বাগত জানাতে হবে নতুন ত্বক বা চামড়াকে। মিশ্র আবহাওয়া থাকার কারণে অ্যালার্জি হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায় বলে জানান শারমিন কচি। ঘৃতকুমারী (অ্যালোভেরা) আর গোলাপজল এই সমস্যার সমাধান দেবে অনেকাংশে। তবে অ্যালোভেরা কখনোই সরাসরি ত্বকে লাগাবেন না। ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ভেতরের অংশটুকু বের করে ডিপফ্রিজে রাখতে পারেন। ব্যবহারের আগে জেল বের করে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। গোলাপজল মিশিয়ে মুখে মালিশ করুন সপ্তাহে এক দিন। অ্যালার্জির পাশাপাশি ব্রণ, র্যা শ, ঘামাচির সমস্যা কমে যাবে। ত্বক উজ্জ্বল করবে না, এই মিশ্রণ ব্যবহারে ত্বক সুস্থ থাকবে।
স্বাভাবিক তাপমাত্রা
ত্বকের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরি এ সময়। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ত্বক কালো হয়ে যায়, ব্রণ হয়, র্যা শ ও অ্যালার্জি হবে। প্রতিদিন বরফ থেরাপি দরকার এ কারণেই। সমপরিমাণ গোলাপজল ও পানি মিশিয়ে বরফ তৈরি করুন। তবে কাপড়ের ওপর বরফ রেখে মুখে ঘষবেন না। এতে ত্বকের ক্ষতি হবে। বরফের পেছন দিকটা মোটা কাপড় দিয়ে ধরে নিতে পারেন। ত্বকের ওপর বরফের ঠান্ডা পরশ সরাসরি লাগাতে হবে।

রক্তের সাবলীল সঞ্চালন
ত্বকের রক্ত সঞ্চালন সবচেয়ে ভালোভাবে হয় রাতের বেলা, ঘুমের সময়। ঘুমানোর আগে ত্বকের ক্লান্তি দূর করে নিতে পারলে মন্দ হয় না। মসুর ডালের পেস্ট, দুধের সর, মধু মিশিয়ে কিছুক্ষণ মুখে লাগিয়ে রাখুন। ক্লান্তির পাশাপাশি রোদে পোড়া ভাবও চলে যাবে। ত্বক আরাম পাবে।
যা করবেন প্রতিদিন
- মুখ ধোবেন দিনে তিনবার। যাঁরা বাইরে কাজ করেন, তাঁরা ফেসওয়াশ দিয়ে ধুতে পারবেন।
- রাতে ত্বক অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগানো বাধ্যতামূলক।
- যখনই ফল খাবেন, অবশিষ্ট অংশ মুখে লাগান। আঙুর ছাড়া।
- বাইরে গেলে ছাতা, সানগ্লাস ব্যবহার আবশ্যক।
- ত্বকের ধরন বুঝে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেলবিহীন, পাউডার সানস্ক্রিন বেছে নিন। তবে সানস্ক্রিন পাঁচ ঘণ্টার বেশি রাখবেন না। মুখ ধুয়ে আবার লাগান। রাতের বেলা বা যখন রোদে থাকবেন না, তখন সানস্ক্রিন ব্যবহার না করার পরামর্শ দিলেন শারমিন কচি।
- পানি খান বেশি করে।
- সুতির কাপড় পরুন।
বিরত থাকুন
- সম্ভব হলে রোদে বের হবেন না।
- তৈলাক্ত খাবার খাবেন না। অনেকের তৈলাক্ত খাবার থেকে পেটে গ্যাস হওয়ার প্রবণতা থাকে। এতে ত্বকে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
গরমে ত্বকের বাড়তি যত্ন
গরমে রোদ আর ধুলোর অত্যাচারে আমাদের ত্বকের বারোটা বেজে যায়! দেখা দেয় ব্রণ, র্যাশ সহ নানা সমস্যার। তাই গরমের দিনে ত্বকের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে বেশি যত্নশীল হতে হয়। এজন্য আপনি ব্যবহার করতে পারেন গ্লিসারিন-সমৃদ্ধ সাবান অথবা ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ। গরমে সবচেয়ে ভালো হচ্ছে ময়েশ্চারাইজিং ক্লিনজার।
রোদ থেকে রক্ষা পেতে বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করবেন, বিশেষ করে চোখের নীচের নমনীয় ত্বকের জন্য মেডিকেটেড সানস্ক্রিন এবং তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেলবিহীন সানস্ক্রিনই ব্যবহার করতে হবে।
ত্বকের খসখসে ভাব দূর করার জন্য এবং বলিরেখা পড়ার হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সবসময় ক্রিম ব্যবহার করা উচিত।
আরো পড়ুন ঘরে বসেই নিখুঁত মেকআপ করবেন যেভাবে
বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে সানগ্লাস ও ছাতা নিতে ভুলবেন না।
রোদে বের হবার আগে সানগ্লাস নিতে ভুলবেন না যেন। সানগ্লাস আপনার চোখকে রোদ থেকে রক্ষা করার পাশাপাশি আপনার মধ্যে একটা স্মার্ট লুক নিয়ে আসবে। সঙ্গে ফেসিয়াল টিস্যু রাখতে পারেন। কাজের ফাঁকে ফেসিয়াল টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিলে নিজেকে অনেক ফ্রেশ ও সতেজ মনে হবে।
শুধু বাহ্যিক যত্ন করলেই হবে না, প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ যত্নেরও। গরমে সুস্থ থাকতে প্রচুর শাক-সবজি, ফলমূল এবং কমপক্ষে ১০-১২ গ্লাস পানি পান করতে হবে। এ সময়ে আমাদের পরিপাকতন্ত্র দুর্বল থাকে, এ জন্য গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলুন। টক, ভাজাপোড়া এবং খুব বেশি গরম খাবার খাবেন না।
Leave a Reply