শসার গুণের কথা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। শসা যেমন রান্না-বান্নায়, খাওয়া-দাওয়ায় ব্যবহৃত হয় তেমনি ব্যবহৃত হয় রূপচর্চায়। শসার ফেসপ্যাক গরমের তাপে ত্বকের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া শসার ফেসপ্যাক নিয়মিত ব্যবহার করলে দূর হবে বলিরেখা ও ব্রণ।শসা টুকরা করে চোখের উপর কিছুক্ষন দিয়ে রাখলে চোখের নিচের ডার্ক স্পট দূরীভুত হবে। আজ দেখবো কি করে খুব সহজেই শসার কিছু ফেস প্যাক বাড়িতে বসেই তৈরি করা যায়।
সালাদের জন্যে সর্বাধিক ব্যাবহৃত ফলটি হলো শসা। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ ও প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও আরও অনেক পুষ্টিগুণ। এছাড়াও এর খোসা তেও আছে প্রচুর ডায়টারি ফাইবার।
প্রচণ্ড গরমের তাপে ত্বক তার স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য হারায়। এই সময় শসা ত্বককে নরম রাখতে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বজায় রাখতে, ত্বককে সতেজ ও মসৃন রাখতে বেশ সাহায্য করে। চলুন দেখে নেই ফেস প্যাক তৈরির নিয়মাবলিঃ
শসা ও পুদিনা পাতা
শসা ও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি করতে পারেন ফেস প্যাক। প্রথমে পুদিনা পাতা আর শসা ভালো মতো ধৌত করুন এরপর পুদিনা পাতা ও শসা একসঙ্গে ব্লেন্ড করুন। পেস্ট এর মতো হলে সেটি ত্বকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন।
অ্যালোভেরা জেল ও শসা
অ্যালোভেরা জেল বা অ্যালোভেরা জুস এর সাথে শসা দিয়েও তৈরি করতে পারেন ফেস প্যাক। একচামচ অ্যালোভেরা জেল বা অ্যালোভেরা জুস এবং এর সঙ্গে একটু গ্রেটেড শসা ভালো ২ থেকে ৩ মিনিট ভালো করে মেশান। তারপর সেই পেস্ট টি মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা গরম জলে মুখ ও গলা পরিষ্কার করে নিন। এটি ত্বকের হারানো উজ্জ্বলতা ফিরে পেতে সাহায্য করে।
দই আর শসা
দই আর শসা দিয়েও তৈরি করতে পারেন ফেস প্যাক। একটি শসা ভালো করে বেটে পেস্ট বানান। তারপর সেই পেস্টের সঙ্গে ২ চামচ দই মেশান। ভালো করে পেস্ট বানান। এটি ভালো করে মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা গরম জলে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্যে বেশ ভালো। তৈলাক্ত ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন ব্রণের মতো সমস্যার জন্যে এটি বেশ উপকারি। এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য ও বেশ উপকারি হিসেবে কাজ করে।
আরো পড়ুন ঃ গলা বা ঘাড়ের কালো দাগ দূর করার উপায়
টম্যাটো ও শসা
টম্যাটো ফল, সালাদ ও সবজি তিন ক্ষেত্রেই বেশ পরিচিত নাম। শসার সাথে টম্যাটোর ফেস প্যাক ত্বকের জন্যে বেশ উপকারি। গোল করে কাটা টমেটো ২ টুকরা, কাটা শসা ১ টুকরা, ১ চিমটি হলুদ গুঁড়ো ও ১ চামচ মধু সব একসাথে মিশিয়ে ফেসপ্যাক তৈরি করুন। তাই একটি জায়গায় শসার খোসা ছাড়িয়ে শসা ও টম্যাটোর পেস্ট বানান।তারপর সেটি মুখে লাগিয়ে হালকা করে ম্যাসাজ করুন এক থেকে দু মিনিট তারপর সেটি ১৫ মিনিট মত রেখে ধুয়ে ফেলুন ঠান্ডা জলে। এই ফেসপ্যাক ত্বকের পোড়া দাগ সারাতে ও ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করে। এভাবে তৈরি করে নিতে পারেন শসা ও টম্যাটোর ফেসপ্যাক।
শসা ও আলু
আরেকটি উপায় হলো শসা ও আলুর ফেস প্যাক। সহজলভ্য দুটি জিনিস দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন ফেস প্যাক। প্রথমে শসা ও আলুর রস করতে হবে। তারপর একটি জায়গায় একচামচ শসার রস ও একচামচ আলুর রস মেশান ভালো করে। তারপর এতে একটু তুলো ভিজিয়ে তুলোয় করে এই পেস্ট মুখে লাগান। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন ঠান্ডা জল দিয়ে। এটি ট্যান রিমুভ করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে এটি বেশ কার্যকরি ভূমিকা পালন করে।
শসা ও মধু
শসার সাথে মধু মিশিয়ে যেভাবে বানাতে পারেন ফেস প্যাক। প্রথমে ভালো করে শসার পেস্ট বানিয়ে সেটির সাথে মধু মেশান। এই পেস্টটি মুখে লাগান। ১৫ মিনিট মত রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি মুখে উজ্জ্বল আভা আনতে সাহায্য করে।
ডাবের জল ও শসা
তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি ত্বকের যত্নে ডাবের জলের বেশ গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রয়েছে এই ফেসপ্যাকটির জন্যে শসা গ্রেট করে তার সঙ্গে ডাবের জলে মিশিয়ে লাগানো যেতে পারে। আবার শসার রসের সঙ্গে ডাবের জল মিশিয়েও লাগানো যেতে পারে। এভাবে তৈরি করে নিতে পারেন শসা ও ডাবের জলের ফেসপ্যাক এটি মুখে লাগানোর পর ৫ মিনিট মত ম্যাসাজ করুন। তারপর এটি ১৫ থেকে ২০ মিনিট মত রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে স্কিন টোনে পরিবর্তন আসে।
গোলাপ জল, মুলতানি মাটি ও শসার রস
একটু শসার রস এবং তার সাথে একটু গোলাপ জল ও মুলতানি মাটি ভালো করে মেশান। আঙ্গুলে অল্প করে লাগিয়ে পুরো মুখে মাখুন। এবার এই পেস্টটি মুখে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখুন। তারপর হালকা গরম জলে পরিষ্কার করে ফেলুন। এটি ত্বকের অন্যান্য সমস্যা রোধ করতে উপকারি।
শসা ও দুধ
এক থেকে দুই চামচ শসার পেস্ট ও দু’চামচ দুধ ভালো করে মেশান। তৈরি হয়ে গেলো শসা ও দুধের ফেসপ্যাক। তারপর এটি মুখে মাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন তারপর ধুয়ে ফেলুন। এটি খুব দ্রুত ত্বকের হারানো ঔজ্জ্বল্য ফিরিয়ে আনে।
শসা ও লেবুর রস
একটু শসা ও লেবুর রস ভালো করে মেশান । একটুকরো তুলো নিন । তুলোটিকে পানিতে ভিজিয়ে নিন। তুলোটিকে মন্ডাকৃতির বলে রূপান্তর করুন। তারপর এটিকে শসা ও লেবুর পেস্টে ভিজিয়ে নিন। ২০ মিনিট মুখে রেখে ধুয়ে ফেলুন ঠান্ডা জল ইয়ে। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
যেকোনো ঋতুতেই আমাদের ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বাজারের ময়েশ্চারাইজার ত্বকের তেমন কোনো উপকারে আসে না। এগুলো ত্বকে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করে। প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি এই ফেস প্যাক গুলো স্বল্পমূল্যে ও খুব সহজেই তৈরি করা যায় এবং কোনোপ্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া আপনার ত্বকের ময়েশ্চার ধরে রাখতে সাহায্য করে।
Leave a Reply