সিনেমা বা টেলিভিশনের পর্দায় তারকাদের দেখলে মনে হয়তো প্রশ্ন জাগে, কীভাবে পাওয়া যায় এত সুন্দর দাগহীন উজ্জ্বল ত্বক? তখন এই ভেবে অনেকে মনকে সান্ত্বনা দেন যে, এসব কেবল প্লাস্টিক সার্জারি, মেকআপ কিংবা ফটোশপ করে আমাদের দেখানো হয়। তাহলে বাস্তবে কি এমন ত্বক পাওয়া অসম্ভব? না, আপনিও পেতে পারেন এমন সুন্দর দাগহীন ত্বক। দুধ ও জাফরান এমন দুটি প্রাকৃতিক উপাদান, যা ব্যবহার করে আপনিও পারেন ত্বকে অসাধারণ পরিবর্তন আনতে। কীভাবে ব্যবহার করবেন আর এর উপকারিতা সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হলো।
প্রকৃতির এক অনবদ্য সৃষ্টি হচ্ছে জাফরান। অনেকে যদিও একে মশলা বা রঙ হিসেবে চেনেন, কিন্তু বাস্তবে জাফরান হচ্ছে ফুলের পরাগ রেনু। জাফরানের কোন গুঁড়ো হয় না। ভালো মানের জাফরানে মিষ্টি সুগন্ধ থাকে, দানাগুলো হয় সরু ও লম্বা লম্বা। খাবারের স্বাদ বৃদ্ধিতে জাফরান বহুল ব্যবহৃত হলেও সৌন্দর্য ও স্বাস্থ্যরক্ষাতেও এটি সমান কার্যকরী। প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস জাফরান দুধ পান করলে তা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার পাশাপাশি চমৎকার ঘুম আনতেও সহায়তা করে থাকে। নিদ্রাহীনতা ও ঠাণ্ডা-কাশির সময়ে দারুণ সহায়ক হতে পারে এক গ্লাস উষ্ণ জাফরান দুধ।
জাফরানে আছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, কপার, আয়রন, ভিটামিন সি সহ প্রায় ১৫০টি উপাদান যা সহজেই শরীরের উপকারে আসে। এই দারুণ জাফরান দুধের সাথে মেশানো হলে তা হজমশক্তিকে উন্নত করে, ত্বকের রঙ ফর্সা করে, ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল করে, চুলকে করে তোলে ঝলমলে, ত্বকে বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করে। তবে হ্যাঁ, জাফরান কেবল খেলে বা পান করলেই হবে না, সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে জাফরান পান করার আছে কিছু বিশেষ নিয়ম। এই নিয়ম মেনে পান করলে আপনি পাবেন জাফরানের সবটুকু উপকারিতা।
চলুন, জেনে নিই বিস্তারিত।
যা লাগবে
গরুর দুধ ১ কাপ (গুঁড়ো দুধ নয়)
জাফরান দানা ১ চিমটি (আসল ইরানি জাফরান)
১ চামচ কিসমিস বাটা বা আস্ত কিসমিস (না দিলেও হবে)
১ চা চামচ অরগানিক মধু
প্রনালি
চুলায় আগে থেকে ফুটিয়ে রাখা দুধ দিন। বেশি ঘন দুধ নেবেন না।
দুধের মাঝে জাফরান দিয়ে দিন। ২ মিনিট ফুটিয়ে চুলো বন্ধ করে দিন।
এর মাসে কিসমিস বাটা বা আস্ত কিসমিস দিয়ে দিন। কিসমিস মস্তিষ্ক ও ত্বকের জন্য খুব ভালো।
কিসমিস দিয়ে চুলোর ওপরেই দুধে ঢাকনা দিয়ে রাখুন ৫ মিনিট।
কুসুম কুসুম গরম হলে কাঁচের বা সিরামকের কাপে ঢেলে নিন। মধু মিশিয়ে চায়ের মত পান করুন।
জাফরান এবং কাঁচা দুধ
যা লাগবে- ৫ দানা জাফরান, ১/২ কাপ কাঁচা দুধ
জাফরান এবং কাঁচা দুধ মিশিয়ে ২-৩ ঘন্টা রাখুন। এই প্যাক ভাল করে মুখে লাগান। ১৫ মিনিট পর শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন। এটি ত্বক ভিতর থেকে উজ্জ্বল করে থাকে। জাফরানে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ব্রণ দূর করে ত্বকের কালো দাগ দূর করে থাকে।
দুধ ও জাফরান প্যাকের উপকারিতা
১. বয়সের ছাপ দূর করে
দুধ ও জাফরান ত্বকের যেসব টিস্যু বয়সের ছাপ ফেলতে দায়ী, সেসব মেরামত করে ত্বকের ভেতর থেকে তারুণ্য জাগিয়ে তোলে।
২. ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে
এই প্যাক ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করে কোমল ও নরম করতে সাহায্য করে।
৩. রোদে পোড়া ভাব দূর করে
জাফরান ও দুধের এই মিশ্রণ রোদে পোড়া ভাব দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
৪. ত্বককে উজ্জ্বল করে
নিয়মিত ব্যবহারে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও রং ফর্সা হবে।
জাফরান এবং চন্দনের প্যাক
যা লাগবে- ২-৩ দানা জাফরান, ১ চা চামচ চন্দনের গুঁড়া, ২ টেবিল চামচ কাঁচা দুধ
চন্দন, কাঁচা দুধ, জাফরান ভাল করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। পেষ্ট যেন ঘন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন। এই প্যাকটি মুখে ভাল করে ম্যাসাজ করে লাগান। শুকিয়ে গেলে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার ব্যবহার করুন ভাল ফলাফল পাওয়ার জন্য।
আরো পড়ুন প্রাকৃতিক উপায়ে ত্বক উজ্জ্বল ফর্সা করার উপায়
এই প্যাকটি তৈলাক্ত ত্বক এবং সেনসিটিভ ত্বকের জন্য অনেক বেশি কার্যকরী। এটি রোদে পোড়া দাগ, ব্রণের দাগ দূর করে থাকে। এছাড়া ত্বক ভেতর থেকে উজ্জ্বল করে থাকে। নিয়মিত ব্যবহারে এটি ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমিয়ে থাকে।
টিপস
জাফরান দেখে শুনে ক্রয় করুন। অল্প দাম খুঁজতে গিয়ে ভেজাল কিনবেন না।
দুধ ঠাণ্ডা হবার আগেই পান করুন।
প্রচুর পানি পান করুন।
ডায়াবেটিসের রোগী হলে কিসমিস ও মধু বাদ দিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে লবণ বা এমন কিছু যোগ করবেন না।
Leave a Reply