যদিও ফর্সা মানেই সুন্দর তা নয় তবুও আমারা সবাই চাই ত্বকটা একটু ফর্সা আর উজ্জ্বল হোক। মনে মনে সবারই এই ইচ্ছাটাও থাকে। তাই আমারা সবাই অনেক প্যাক অনেক ক্রিম ট্রাই করি ত্বক ফর্সা আর উজ্জ্বল করার জন্য। তবে যুগ যুগ ধরে ঘরোয়া পদ্ধতিতে ত্বক উজ্জ্বল আর ফর্সা করার এই প্রচেষ্টা অনেক বেশি কার্যকর হয়েছে। এখন বাজারে ভুড়ি ভুড়ি ত্বক ফর্সা আর উজ্জ্বল করার ক্রিম পাওয়া যায়। কিন্তু অধিকাংশ পণ্যেই রয়েছে উচ্চ মাত্রার রাসায়নিক যা আসলে আপনার ত্বকের ক্ষতি করছে। আবার এসব পণ্য অনেক দামীও বটে।
তাই আপনি ঘরোয়া উপায়ে প্রাকৃতিক বা ভেষজ উপাদানে ত্বক পরিচর্চা করতে পারেন যাতে সত্যিকার অর্থেই আপনার ত্বকের রঙ ফর্সা আর উজ্জ্বল হয়ে ওঠে স্থায়ী ভাবে। ত্বক সুন্দর করার উপায় আজকাল শুধু মেয়েরাই করে না ছেলেদের ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করার জন্য ও নীচের ধাপ গুলো কার্যকর।
ঘরোয়াভাবে রং ফর্সা করার রয়েছে সহজ অনেক উপায়।
এখানে আমরা সহজ পদ্ধতিতে ত্বক ফর্সা করার উপায় বলব যাতে আপনার ত্বক উজ্জ্বল ও ফর্সা হয়
আলুর খোসার স্কিন হোয়াইটেনিং ফেস প্যাক : লেবুর রসের মত আলুর খোসায় ব্লিচিং উপাদান আছে । আলু খোসার পেস্ট নিয়মিত ত্বকে লাগান। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল আর ফ্রেশ হবে। সব ধরনের তকেই এই প্যাক ব্যবহার করা যাবে।
আরো পড়ুন ঃ মুখের তেলতেলে ভাব কমান ঘরোয়া উপায়ে
টক দই : টক দইয়ে অনেক ধরণের উপাদান আছে যা ত্বকের জন্য খুব ভাল। এতে আছে ল্যাকটিক এসিড যা ব্লিচিং উপাদান হিসেবে কাজ করে। আর এই উপায়টি আপনি সব ধরণের ত্বকেই ব্যবহার করতে পারেন। তাই ত্বক সুন্দর করার উপায় এর একটি ভাল উপাদান হল টক দই।
টক দই হাতে নিয়ে আলতো করে আপনার মুখের ত্বকে ঘষে নিন। কিছুক্ষন রাখার পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই টক দই এভাবে লাগান আর কয়েক সপ্তাহ পরে দেখুন আপনার ত্বকের রঙ্গে কি পরিবর্তন এসেছে।
আবার এক টেবিল চামচ ফ্রেস টক দই , আধা চামচ মধু একসাথে মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মুখে ও গলায় লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা প্রতিদিন করলে আপনার ত্বকের রঙ ও টোন পরিবর্তন হবে।
টক দইয়ের সাথে লেবুর রস অ্যান্ড ওটমিল মিশিয়ে ঘন পেস্ট করুন আর এই পেস্ট ফেইস মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করুন। এটি ত্বক নরম রাখবে ও ময়েসচারাইজ করবে।
পুদিনা পাতার ফেস প্যাক : পুদিনা পাতায় বিদ্যমান অ্যাসট্রিজেন্ট ত্বকে পুস্টি যোগানোর সাথে সাথে ত্বকে উজ্জ্বল করে তুলে। ১৫ থেকে ২০ টি পুদিনা পাতা পেস্ট করে এটি মুখে লাগান এবং পুরো মুখে পেস্টটি লাগিয়ে ১০—১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বককে টান টান করবে আর ত্বকের ছোট ছোট পোর ঢেকে দেবে।পুদিনা পাতায় অ্যালার্জি থেকে থাকলে এই প্যাকটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।

কমলা লেবু : কমলা লেবু ত্বক কোমল করার আ রও এক টি ভাল উপায় মুখের ত্বকের যত্নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল ভিটামিন সি। আর এই ভিটামিন সি আপনি কমলালেবুতে প্রচুর পরিমানে পাবেন। এছাড়া কমলা লেবুর ব্লিচিং উপাদান ত্বককে উজ্জ্বল করে।
আরো পড়ুন ঃ হাত-পা ফর্সা করার সহজ উপায়
দেখা গেছে যা আপনি যদি প্রতিদিন ফ্রেস কমলার রস পান করে তবে আপনার ত্বকের কমোনীয়তা আর ত্বকের টেক্সচার অনেক ভাল হয়। ত্বক উজ্জ্বল করতে দুই ভাবে কমলালেবু ব্যবহার করা যায় ।
দুই টেবিল চামচ কমলার রসের সাথে এক চিমটি হলুদের গুড়া দিয়ে মিক্সচার তৈরি করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে গলা ও মুখের ত্বকে লাগান আর ২০ -৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এটা লাগান।
কমলার খোসা শুকিয়ে গুড়া করুন। এক টেবিল চামচ কমলার খোসার গুড়ার সাথে এক টেবিল চামচ টক দই মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রাখার পর ধুয়ে ফেলুন। এই পেস্ট আপনার ত্বকের কালো দাগ দূর করবে। সপ্তাহে একবার বা দুইবার এই পেস্ট লাগান। তবে এর বেশী বার সপ্তাহে ব্যবহার করবেন না।
ময়দা : ময়দা দিয়েও আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে পারেন। এর ভিতরের উপাদানগুলি ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ও ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে। নিচে উল্লেখিত উপায়ে আপনি ময়দা একদিন পর পর ব্যবহার করলে ত্বকের অতিরিক্ত তেল সরিয়ে ত্বক প্রাকৃতিক ভাবে ময়েসচারাইজ করে।
ময়দার সাথে অল্প গোলাপ জল মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্ট হাতে, পায়ে ও মুখের ত্বকে লাগান। পেস্টটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। তারপর থাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চন্দনের ফেস প্যাক : আপনার ত্বক যদি তৈলাক্ত হয় তবে চন্দনের গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। আপনার ত্বকে যতটুকু পরিমানে লাগে ততটুকু নিবেন। আপনার ত্বক প্রাকৃতিকভাবেই ফর্সা হবে এতে। এই প্যাক আপনার ত্বক শুধু উজ্জ্বলই করবে না আপনাকে দেখতেও অনেক ফ্রেশ লাগবে।

মধু : ত্বকের যত্নে মধু ত্বকে একদিকে ব্লিচিং এর কাজ করে অন্য দিকে ময়েসচারাজিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা ত্বকের দাগ দূর করে ও একনে সারাতে কাজ করে।
খাঁটি মধু ত্বকে লাগিয়ে কয়েক মিনিট রাখুন। এটি আপনার ত্বকের মৃত কোষ দূর করবে। ত্বক উজ্জ্বল করবে আর ফ্রেস লাগবে । ত্বকে লাগানোর কয়েক মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ত্বক ধুয়ে ফেলুন।
এক চা চামচ মধু, লেমন রস, গুড়া দুধ আর আধা চামচ আমন্ড তেল মিশিয়ে ফেইস মাস্ক তৈরি করুন। আলতো করে ত্বকে লাগান আর ১০-১৫ মিনিট ত্বকে এই মাস্ক রেখে পরে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই মাস্ক ব্যবহার করুন।
আরো পড়ুন ঃ ত্বকের যত্নে ঘরে বসে নিজেই বানিয়ে নিন শসার ফেসপ্যাক
হলুদ আর টমেটোর ফেস প্যাক : উজ্জ্বল ত্বক পেতে এক চিমটি হলুদ, ১ চা চামচ টমেটো বা লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে মুখের ত্বকে লাগান নিয়মিত। অবশ্যই ত্বক ফর্সা হবে। আমরা কমবেশি সবাই জানি টমেটো ত্বকের কাল দাগ দূর করতে কতোটা কার্যকরী। টমেটোর ব্লিচিং উপাদান আর হলুদের ভেষজ উপাদান ত্বক ফর্সা করতে একসাথে কাজ করে। স্বাভাবিক থেকে তৈলাক্ত এবং শুষ্ক ত্বকে এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করা যাবে।

ত্বকের যত্নে লেবু : ত্বকের যত্নে লেবু সবসময় ত্বকফর্সা করতে এজেন্ট হিসেবে কাজ করে।
লেবু এর এসিটিক উপাদান প্রাকৃতিক ব্লিচিং এর এজেন্ট হিসেবে ও কাজ করে। আবার লেমন এ এন্টিঅক্সিডেন্টও রয়েছে যা ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করার জন্য দরকারী।
একটি কটন বল নিয়ে লেমনের রসের মধ্যে ডুবিয়ে আপনার ত্বকে লাগান। লেবু এর টুকরোও ত্বকে লাগাতে পারেন । অন্তত ১ ঘণ্টা আপনার ত্বকে রাখুন আর এরপর ত্বক ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন এই পদ্ধতিতে লেমন রস লাগান। এটি আপনার ত্বকের উজ্জলতা বাড়াবে আর ত্বকে একনে প্রতিরোধ করবে।
৩ টেবিল চামচ লেমন রসের সাথে এক টেবিল চামচ হলুদ গুড়া মিশিয়ে এই পেস্ট ত্বকে ৩০ মিনিট লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন একবার এটি ব্যবহার করুন।
লেমন রস, গুড়া দুধ চায়ের চামচের এক চামচ করে নিয়ে মধুর সাথে মিশান। ১৫ থেকে ২০ মিনিট এই মাস্ক ত্বকে লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন। একদিন পর পর এই মাস্ক লাগান । ত্বক উজ্জ্বল হবে।
তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখবেন তা হল, আপনার ত্বকে কোথাও কাতা থাকলে এটি ব্যাবহার করবেন নয়া আক্রন ত্বকের কাতা জায়গায় লেমন জুস এর আসিতিক প্রকৃতির কারনে বেথা হতে পারে। তবে সংবেদনশীল ত্বকের জন্য লেম রস সঠিক নয় । এতে ত্বকে এলারজি দেখা দিতে পারে।
এলোভেরা জেল : এলোভেরা বা ঘৃতকুমারী দেবে দাগহীন ত্বক, এলোভেরার উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এলোভেরা জেল আপনার ত্বকে পিগমেনটেসান দূর করে আর ত্বকে স্বাভাবিক রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। আর খুব বেশী পিগমেনটেসান থাকলে ত্বক অমসৃণ হয়ে যায় ।
আরো পড়ুন ঃ তৈলাক্ত ত্বক দ্রুত ফর্সা হওয়ার সহজ টিপস
এছাড়া এটি খুব ঠাণ্ডা তাই আপনার ত্বকে নুতন কোষ জন্মাতে সাহায্য করে , নষ্ট হয়ে যাওয়া টিস্যু পুনরায় পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনে। আর এটা স্বাস্থ্যময় ত্বকের জন্য খুব জরুরী। ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে আর ডার্ক স্পট দূর করতেও এলোভেরা কার্যকরী।
এলোভেরার উপরের পাতলা অংশ কেটে নিয়ে নীচের ঘন জেলির মতো উপাদানটি নিয়ে নিন। সুন্দর ত্বক ও চুলের জন্য ঘরেই তৈরি করে ফেলুন এলোভেরা মাস্ক
এই জেলি ত্বকে লাগান ।
৩০ মিনিট এভাবে রেখে দিন ।
সপ্তাহে অন্তত ২ দিন এভাবে এলোভেরা জেল ব্যবহার করুন।
আপনার বাসায় যদি এলোভেরা গাছ না থাকে কোন সমস্যা নেই। আজকাল বাজারে সারা বছর এলোভেরা জেল কিনতে পাওয়া যায় ।
তথ্য সূত্রঃ রোকসানা আক্তার(সাজগোজ) এবং ইন্টারনেট
Leave a Reply