কিশোরীর স্তন বিশাল বড় হয়ে যাওয়া
অনেক সময় কিশোরী বয়সে অর্থাৎ মেয়েদের বয়োসন্ধির সময় স্তন বিশাল বড় হয়ে যেতে দেখা যায়। অনেক মেয়ে প্রথম গর্ভধারনের সময় ও এমন সমস্যায় পরতে পারে। বয়োসন্ধির সময় ইস্ট্রোজেন (Oestrogen)হরমোনের প্রভাবে মেয়েদের স্তন এর স্বাভাবিক পূর্ণতাপ্রাপ্তি ও বৃদ্ধি শুরু হয়। কোনো মেয়ের যদি এই ইস্ট্রোজেন এর প্রতি অস্বাভাবিক স্পর্শকাতরতা (altered sensitivity) থাকে তাহলে স্তনের এমন অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি শুরু হয়। এমনটি হলে স্তন এতো বড় হয়ে যায় যে বসা অবস্থায় দুই পাশের স্তনই মেয়েটির হাটু পর্যন্ত এসে পৌছতে পারে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই দুই পাশের স্তন এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই সমস্যাটি অস্বস্তিকর এবং অনেক সময় তা দৃষ্টিকটু হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাই এর চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন আছে। অনেক সময় ইস্ট্রোজেন বিরোধী (Antioestrogen) অসুধ ব্যবহার করে এই সমস্যায় ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এতে যদি স্তন ছোটো হয়ে না আসে তা হলে রিডাকশন ম্যামোপ্লাস্টি (Reduction mammoplasty) নামক অপারেশন করিয়েই এর স্থায়ী চিকিৎসা করাতে হবে।
স্তন টিউমার / ফাইব্রোএডেনোমা (Fibroadenoma)
১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের মেয়েদের পরিণত স্তনে গোটা উঠার মতো যে
টিউমার হয় তা সাধারনত ফাইব্রোএডেনোমা। এটা খারাপ কোনো টিউমার বা ক্যান্সার নয়। একে স্তনের নিরীহ টিউমার (Benign breast tumour) বলা হয়। সাধারণত এই টিউমারটি ২ থেকে ৩ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বড় হয় এবং খুব কম ক্ষেত্রেই তা ৫ সে.মি অতিক্রম করে। এটি ২৫ উর্ধ্ব মহিলাদের ও হতে পারে, তাই স্তনে কোনো টিউমার হলে আগেই জেনে নেয়া ভালো এটা ক্যান্সার না ফাইব্রোএডেনোমা।
আরো পড়ুন ঃ গর্ভাবস্থায় যেসব খাবার খাওয়া নিষেধ
ফাইব্রোএডেনোমার হলে এর জন্য কোনো চিকিৎসা নেবার প্রয়োজন হয়না। একবার বায়োপসি করে শুধু নিশ্চিত হতে হয় যে এটা ক্যান্সার জাতীয় কোনো টিউমার নয়। তবে কেউ যদি অস্বস্তি বোধ করে অথবা কারো মনে সন্দেহের বীজ যদি তাকে অস্থির করে তোলে তাহলে কসমেটিক সার্জন দিয়ে এটি অপারেশন (Enucleation) করিয়ে নেয়াই ভালো। বয়োসন্ধির সময় অনেক ফাইব্রোএডেনোমা খুব দ্রুত বাড়তে থাকে এবং ৫ সে.মি’র চেয়ে বড় হয়ে যেতে পারে। এই পরিস্থিতিতেও অপারেশন করিয়ে অস্বস্তির হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যেতে পারে।
স্তনের বোটা ভেতরে ঢুকে যাওয়া
বয়োসন্ধিতে স্তনের পরিপূর্ণতা ও বৃদ্ধির সময় অনেক মেয়ের স্তনের বোটা (Nipple) স্তনের ভিতরের দিকে ঢুকে যায়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শুধু একপাশের স্তন এই ধরনের সমস্যায় পরে। এর জন্য বিশেষ কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। সাধারণত গর্ভধারন অথবা দুগ্ধদানের সময় নিজে নিজেই এই সমস্যা ভালো হয়ে যায়। যদি দুগ্ধদানের সময় এই সমস্যা ভালো না হয়ে যায় সেক্ষেত্রে তা শিশুকে দুগ্ধদানে বাধা সৃষ্টি করে। একধরনের মেকানিকাল সাকশন ডিভাইস ব্যবহার করে এই সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া যেতে পারে। তাতেও কাজ না হলে কসমেটিক সার্জারির মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব কিন্ত এতে অনেক সময় স্তনের ডাক্ট কেটে যেতে পারে এবং তখন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
পরিণত বয়সে নতুন করে কারো স্তনের বোটা ভিতরে ঢুকে যাওয়া স্তনের আভ্যন্তরিন জটিল কোনো সমস্যা নির্দেশ করে থাকে। ডাক্ট এক্টেশিয়া, মাসটাইটিস বা টিউমার হলে এমনটি হতে পারে। অনেক সময় ক্যান্সার হলেও নতুন করে স্বাভাবিক স্তনের বোটা ভিতরের দিকে ঢুকে যেতে পারে। তাই পরিণত বয়সে নতুন করে এই সমস্যা দেখা দিলে অবশ্যই চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন হতে হবে।
স্তনের বোটা ফেটে যাওয়া (Cracked nipple)
অনেক মহিলাদের স্তন্য দানের সময় স্তনের বোটায় সুক্ষ ফাটল দেখা দেয়, এর ফলে স্তন্য দানের সময় ব্যথা হয় এবং একসময় তা স্তনে ইনফেকশন তৈরী করে। ঠিক সময়ে এর চিকিৎসা না করালে অনেক সময় স্তনে ফোড়া হতে দেখা দেয় এবং অপারেশন করে তা ভালো করতে হতে পারে। এজন্য বোটায় ফাটল ধরার সাথে সাথে ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা শিশুকে স্তন্যদান থেকে বিরত থাকতে হবে কিন্ত ব্রেস্ট পাম্প নামক যন্ত্রের সাহায্যে স্তন থেকে দুধ খালি করতে হবে। এই দুধ শিশুকে খাওয়ানো যাবে। এক সময় নিজে নিজেই এই ফাটল ভালো হয়ে যাবে তখন শিশুকে আবার স্তন্য দান করা সম্ভব হবে।
স্তনের ফোড়া / ইনফেকশন
স্তনের ফোঁড়া বা ইনফেকশন হওয়া রোগটি বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দুগ্ধদানকারী মায়েদের হঠাৎ করে হয়ে থাকে। তবে অন্য সময়ও এ রোগটি হতে পারে। স্তনে জোরে আঘাত পেয়ে রক্ত জমে যাওয়া, স্তনের বোটায় শিশুর বা অন্য কারো কামড়ে দেয়া বা অন্য কোনো ঘা থেকেও এমনটি হতে পারে। জন্মগত ভাবে যে সকল মহিলার স্তনের বোটা ভেতরের দিকে থাকে (Nipple retraction) তাদের এই রোগ হবার হার অনেক বেশী। তবে এই রোগটি ব্যাকটেরিয়া জনিত একটি রোগ এবং স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus) নামক ব্যাকটেরিয়াটিই এই রোগ ঘটানোর জন্য মুলত দায়ী।
এ রোগ হলে স্তনে টনটনে ব্যথা হয়, স্তন গরম হয়ে যায়, কিছুটা লালচে বর্ণ ধারন করে এবং ফুলে যায়। অনেক সময় স্তনের ত্বক টানটান হয়ে চকচকে হয়ে যায় এবং স্পর্শ করলেই তা ব্যথার উদ্রেক করে।
শুরুতেই এই রোগ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসলে তার পরামর্শ অনুযায়ী এন্টিবায়োটিক খেলে রোগটি নিয়ন্ত্রিত থাকে। এই সময় স্তনটিকে বিশ্রামে রাখতে হয় এবং তা থেকে শিশুকে দুগ্ধদান বন্ধ রাখতে হয়, তবে ব্রেস্ট পাম্প নামক যন্ত্রের সাহায্যে দুগ্ধ বের করে ফেলতে হয়। শিশুটি এই সময় অন্য পাশের স্তন থেকে দুগ্ধপান করতে পারে। সাধারনত এন্টিবায়োটিক শুরুর ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ইনফেকশন নিয়ন্ত্রনে চলে আসে এবং এটি অনেক সময় একটি চাকার মতো হয়ে জমে যায়।
আরো পড়ুন ঃ অনিয়মিত পিরিয়ড কি সন্তান ধারণে জন্য সমস্যা?
এমনটি হলে তা থেকে পরবর্তীতে আলট্রাসনোগ্রাম করে দেখে সিরিঞ্জের মাধ্যমে পাজ (Pus) বের করে দিতে হয়। ৪৮ ঘন্টার মধ্যেও যদি অসুধ কাজ না করে তাহলে অপারেশন এর মাধ্যমে Pus বের করে দিতে হয়।
স্তন বোটার প্যাজেটস রোগ
অনেক সময় স্তনে ক্যান্সার হলে এর বোটা বা নিপল এ পাঁচড়ার মতো একধরনের ঘা হয়। একজিমা হিসেবে দীর্ঘদিন এর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া হলেও তা নিপল বা এর চারপাশের গাঢ় বর্নের ত্বক (Areola) থেকে সেরে যায়না। একসময় নিপল এর ক্ষত (Erosion of nipple) বাড়তে থাকে এবং তা স্তনের গা থেকে খুলে পরে যায় (disappear) । ঐ একজিমা যে স্তন ক্যান্সার এর কারনে হচ্ছিল তখন সেটাও পরিস্কার হয়ে উঠে। তাই স্তনের বোটায় কখনো একজিমা হয়েছে সন্দেহ হলে অবশ্যই তার বায়োপসি করিয়ে দেখা উচিত অন্যথায় তা রোগীর জীবন বিপন্ন করে তুলতে পারে।
Leave a Reply