পেটে মেদ বা চর্বি হলে চলা-ফেরায় যেমন কষ্ট হয়, তেমনি নষ্ট হয় সৌন্দর্যও। অনেকে আছেন খুব বেশি মোটা না কিন্তু পেটে অনেক মেদ কিংবা দেহের কিছু কিছু স্থানে মেদ জমায় খুবই অস্বস্তি বোধ করেন। কোনো ভালো পোশাক পড়লেও ভালো লাগে না। শরীরের এই বাড়তি মেদ কিভাবে দূর করা যায় তার কয়েকটি সহজ উপায় পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
১. প্রতিদিনের সকালটা শুরু হোক লেবুর সরবত দিয়ে। এই পদ্ধতি পেটের মেদ কমানোর সবচেয়ে কার্যকরী ১টি উপায়। ১ গ্লাস হালকা গরম পানিতে লেবু চিপে সরবত করে সঙ্গে একটু লবণ মিশিয়ে নিন। ইচ্ছে হলে একটু মধুও মিশিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু চিনি মিশাবেন না। প্রতিদিন সকালে পানীয়টি পান করুন। এই পানীয় আপনার বিপাক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে পেটের মেদ কমাতে সাহায্য করবে।
২. সাদা ভাত কম খান অথবা কিছুদিনের জন্য ছেড়ে দিন সাদা চালের ভাত খাওয়া। সাদা চালের ভাতের বদলে বিভিন্ন গম জাতীয় শস্য যুক্ত করে নিন আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায়। তাছাড়া লাল চালের ভাত, গমের রুটি, ওটস, অন্যান্য শস্য যুক্ত করে নিতে পারেন।
৩. চিনি জাতীয় খাবার থেকে দূরেই থাকুন অর্থাৎ চিনিকে না বলুন। এছাড়া মিষ্টি জাতীয় খাবার যেমন মিষ্টি, চকলেট, আইসক্রিম, ফিরনী, সেমাই ইত্যাদি থেকে কিছুদিনের জন্য বিদায় নিয়ে নিন।
৪. উচ্চ তেলযুক্ত খাবার এবং কোল্ড ড্রিঙ্কসগুলো শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চর্বি জমিয়ে রাখে। যেমন আমাদের পেট কিংবা উরু। সুতরাং বুঝেই ফেলেছেন যে এই খাবারগুলো তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিতে হবে।
৫. পেটের মেদ কাটিয়ে উঠতে চাইলে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তাহলে শরীরের বিপাকের হার বাড়ানোর পাশাপাশি শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে দূর করে দিবে। তাই পানিকে প্রাকৃতিক ক্লিঞ্জার বলা হয়।
৬. কাঁচা রসুনের কয়েক কোয়া সকাল বেলা চুষে খান। তারপরে লেবুর সরবত পান করুন। এই চিকিৎসাটি আপনার ওজন কমানোর জন্য সাহায্য করবে এবং শরীরের রক্ত প্রবাহ সহজ করবে।
৭. যতদিন পেটের মেদ না কমবে ততদিন নন-ভেজ খাদ্য অর্থাৎ মাংস, মাছ, ডিম, দুধ বাদ দিতে হবে। তবে মাছের টুকরোর চামড়া ফেলে খাওয়া যেতেই পারে।
৮. প্রতিদিন সকাল এবং বিকাল এই দুই সময়ে ফল ও সবজি খান। তবে এক্ষেত্রে পানি জাতীয় ফল বাছাই করুন। এই অভ্যাসটি আপনার দেহে এন্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন এবং খনিজলবণ এর ঘাটতি পূরণ করবে।
পেটের মেদ কমানোর সহজ ও কার্যকর ৬ ধরণের ব্যায়াম !
৯. ঝাল খাবার খান। অবাক হচ্ছেন? অবাক হবেন না। ঝাল খাবেন কিন্তু ঝালগুলো আসবে দারচিনি, আদা, গোলমরিচ এবং কাঁচামরিচ থেকে। এগুলো রান্নায় ব্যবহার করুন। এই মশলা স্বাস্থ্যকর। এগুলো শরীরের ইনসুলিন সরবরাহ বাড়ায় এবং রক্তের সুগার লেভেল কমাতে সাহায্য করে। তাই এগুলো ডায়াবেটিস রোগীর জন্যও বেশ উপকারী।
সবকিছু করার পরেও আপনাকে যেটা করতে হবে তাহলো ব্যায়াম। মেদ কমাতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। শরীরকে ঠিক রাখতে প্রতিনিয়ত ব্যায়াম করতে হবে।
তবে ডায়েটের ক্ষেত্রে এই ৫ ভুল এড়িয়ে চলুন
অনেক সময় দেখা যায়, ডায়েট করেও কাঙ্ক্ষিত ফল পাচ্ছেন না অনেকে। কারণ, ডায়েটের সময় আমরা এমন কিছু ভুল করি যেগুলোর জন্য মেদ কমাতো দূরের কথা, উল্টো আমাদের শরীরের ওজন বাড়ার সাথেসাথে অনেক ক্ষতিও হয়। ফলে পড়তে হয় নানারকম শারীরিক সমস্যায়।
ডায়েটের ক্ষেত্রে আমরা হরহামেশাই যে ভুলগুলো আমরা করে থাকি-
১. কক্ষ তাপমাত্রার পানি খাওয়া
আমরা পানি সাধারণত কক্ষ তাপমাত্রায় খেয়ে থাকি। তবে জার্মান একটি গবেষণা বলছে ৬ কাপ ঠাণ্ডা পানি খেলে আপনার ৫০ ক্যালরি পর্যন্ত ক্ষয় হতে পারে। এতে বছরে ৫ পাউন্ড ওজন কমতে পারে। ঠাণ্ডা পানি শরীর থেকে তাপমাত্রা গ্রহণ করায় ক্যালরি খরচ হয়।
২. পরিমাণমত না খাওয়া
ওজন কমানোর জন্য আপনাকে কম ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে কিন্তু খেয়াল রাখবেন তা যাতে বেশি কম না হয়ে যায়। শরীর তার পর্যাপ্ত ক্যালরি না পেলে শক্তির জন্য তা আপনার পেশিকলা ক্ষয় করে ক্যালরি সঞ্চয় করবে। তাই প্রয়োজনীয় পরিমাণ খাবার গ্রহণের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। চেষ্টা করুন প্রতি ৩-৪ ঘণ্টা পরপর অল্প অল্প করে খেতে। এটা আপনার একবারে বেশি খাওয়া থেকে রক্ষা করবে।
৩. চা বা কফি না খাওয়া
চা এবং কফি আপনার কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে সতেজ রাখে যা আপনার মেটাবোলিজম ৫ থেকে ৮ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়, দিনে ৯৮ থেকে ১৭৪ ক্যালরি ক্ষয় করতে পারে। এক কাপ গরম চা মেটাবোলিজম বাড়াতে পারে ১২%।
৪. খাবারে প্রোটিন কম থাকা
খাবারে যাতে পর্যাপ্ত প্রোটিন থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনার পেশীকে সঠিক আকারে রাখতে প্রোটিন অপরিহার্য। গবেষকরা জানান, পর্যাপ্ত প্রোটিন আপনার ৩৫% পর্যন্ত ক্যালরি ক্ষয় করতে পারে।
৫. জীবাণুমুক্ত খাবার
জীবাণুমুক্ত খাবারের অংশ হিসেবে অনেকেই হিমায়িত খাদ্য খেয়ে থাকেন। কিন্তু গবেষণা বলছে, তাজা খাবার আপনার ডায়েটের জন্য বেশি উপকারী। বিভিন্ন ফলমূল এবং শাকসবজি আপনি যত তাজা খাবেন তত আপনার ক্যালরি ক্ষয়ে সাহায্য করবে।
Leave a Reply