প্রতিদিন বাইরে যাওয়ার ফলে যে পরিমাণ ধুলো-বালির মধ্যে আমাদেরকে থাকতে হয় এর ফলে ধীরে ধীরে হাত এবং পায়ের ত্বক কালো ও রুক্ষ হয়ে যায়। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখার জন্য আমাদের নিয়মিত পেডিকিউর ও মেনিকিউর করা উচিত। নিচের বর্ণিত উপায়ে সহজেই বাসায় বসে করতে পারবেন মেনিকিউর ও পেডিকিউর। এতে আপনার সময় ও টাকা দুটোই বাঁচবে।
ঘরে বসে মেনিকিউর করার সহজ উপায়
মূলত হাতের নখ ও আঙুলের যত্ন নেওয়ার যে প্রক্রিয়া তাকে মেনিকিউর বলা হয়। পার্লারে গিয়ে অনেক সচেতন নারীই মেনিকিউর করিয়ে থাকেন। তবে চাইলে ঘরে বসে স্বল্প খরচেই কাজটি করে ফেলতে পারেন আপনি।
কেন করবেন মেনিকিউর?
যেকোন বয়সী নারীর জন্যই মেনিকিউর করা প্রয়োজন। তরুণী থেকে শুরু করে গৃহিণী, সবারই উচিৎ হাতের যত্ন নেওয়া। অতি সাধারন ব্যাপার হলেও এ কথা সত্য যে অনেক সময় অন্যের কাছে আপনার ব্যাক্তিত্ব কিংবা রুচিশীলতার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় আপনার হাতের নখের সৌন্দর্য!
ভাবছেন, কিভাবে? ধরুন, আপনি চাকুরীর জন্য গিয়েছেন। ভাইবা বোর্ডে ফাইল এগিয়ে দেওয়ার সময় দেখা গেল আপনার হাতের নখ হলদেটে হয়ে আছে কিংবা নখে জমে আছে ময়লা। এটি কি খুব বেশি শোভনীয়? মোটেও নয়। তাহলে চলুন ধাপে ধাপে শিখে নেওয়া যাক মেনিকিউর করার উপায়গুলো।
ধাপ ১ – মেনিকিউর করার জন্য আপনার কয়েকটি জিনিস লাগবে। এই ধরুন তুলোর বল বা তুলা, নেইল কাটার, নখ শেইপ করার যন্ত্র ইত্যাদি। সেগুলো একত্রীকরণ করুন।
ধাপ ২ – আপনার নখে নেইলপলিশ দেয়া থাকলে সেগুলোকে ভালো করে তুলে ফেলুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভালোমানের নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করবেন। আর যদি নেইলপলিশ না থাকে। তবুও একটু তুলাতে পানি নিয়ে নখগুলো মুছে ফেলুন।
ধাপ ৩ – নেইল কাটার দিয়ে নখগুলো কেটে ফেলুন। নখ একদম বেশি ছোট করে ফেলবেন না। এটি দেখতে বেমানান লাগে। আঙুলের অগ্রভাগে একটি হালকা রেখা দেখা যায়। খেয়াল করে, অন্তত সেই রেখা পর্যন্ত রেখে নখ কাটুন।
নখের দুই কোনায় গোলাকার আকৃতিতে না কেটে ডিম্বাকার বা চতুষ্কোণ আকৃতিতে কাটুন। গোলাকার করে কাটলে তা পরবর্তিতে বাড়তে অসুবিধা হয়। তবে হ্যা খেয়াল করে, নখের কোনায় জমে থাকা ময়লা পরিষ্কার করে নিন।
ধাপ ৪ – নেইল কাটারের বিশেষ অংশ দিয়ে নখের ধারালো অংশ ঘষে নিন। বাজারে নেইল বাফার নামক নখ কোমলকারক যন্ত্র পাওয়া যায়। চাইলে সেটিও ব্যবহার করতে পারেন।
ধাপ ৫ – একটি পাত্রে বা বৌলে হালকা উষ্ণ পানি নিন। তাতে কয়েক ফোটা শ্যাম্পু বা সাবান মেশান। এবার হাতদুটি কয়েক মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। এতে আপনার হাতের জীবানু ধ্বংস হবে, নখ কোমল হবে এবং ডেড সেলগুলো দূর হবে।
আপনার ত্বক যদি রুক্ষ হয় তবে হাত ভেজানোর দরকার নেই।
ধাপ ৬ – এবার নখের ত্বক নেইল কাটারের নখের ত্বক পরিষ্কার করার অংশ দিয়ে হালকা করে ঘষে নিন। এতে করে নখের হলদেটেভাব দূর হবে।
ধাপ ৭ – হাত শুকালে হাতে ভালো মানের লোশন ম্যাসেজ করে নিন।
ধাপ ৮ – আপনি যদি নেইলপলিশ পরতে পছন্দ করে থাকেন তবে এখন আপনার হাতের নখগুলো পছন্দের রঙে আর পছন্দের ডিজাইনে সাজিয়ে ফেলুন।
দেখলেন তো, কত সহজেই হাতের নখের যত্ন নেওয়া যায়। এবার থেকে তবে সময় করে ঘরে বসেই করে নিতে পারেন মেনিকিউর।
ঘরে বসে পেডিকিউর করার সহজ উপায়
সৌন্দর্য সচেতন যেকোন নারীই চান দেহের সব অঙ্গের সমান যত্ন নিতে। পায়ের যত্ন নেয়ার অতি পরিচিত পদ্ধতি হচ্ছে পেডিকিউর। মূলত, পায়ের নখ, পায়ের পাতা ও গোড়ালি পরিষ্কার করার যে প্রক্রিয়া তাকে পেডিকিউর বলা হয়।
অনেকেই পার্লারে গিয়ে পেডিকিউর করিয়ে থাকেন। একটু সময় করে কিন্তু ঘরে বসেই আপনি এই পেডিকিউরের কাজটি করে ফেলতে পারেন। আজকের এই ফিচারে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে ধাপে ধাপে পেডিকিউরের কাজটি সম্পন্ন করবেন।
কেন করবেন পেডিকিউর ?
অনেকের মনেই প্রশ্ন হতে পারে যে গোসলের সময় তো এমনি পা ঘষা হয়। তাহলে বাড়তি পেডিকিউরের কাজ করার দরকার কি!
পেডিকিউর আপনাকে নানাধরনের নখের রোগ থেকে রক্ষা করবে।
আপনার পায়ের নখকে করবে কোমল ও পরিষ্কার।
আপনার পায়ের গোড়ালি থেকে জমে থাকা ফাঙ্গাস দূর করে আপনাকে ত্বকের রোগ থেকে রক্ষা করবে।
সর্বোপোরি, আপনার পায়ের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করবে।
এবার চলুন পেডিকিউরের ধাপগুলো জেনে নেওয়া যাক।
ধাপ ১: নেইলপলিশ পরিষ্কার করা পেডিকিউরের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার পায়ের নখে নেইলপলিশ থাকলে তা পরিষ্কার করে ফেলুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো মানের নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করবেন।
ধাপ ২: এবার একটি চেয়ারে আরাম করে বসুন। একটি বড় পাত্র বা ছড়ানো বড় বাটিতে হালকা গরম পানি দিন। সাথে একটু লবন মিশিয়ে নিতে পারেন। এবার এই গরম পানিতে আপনার পা দুটি ভিজিয়ে দিন। ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এই দশ মিনিটে পায়ে জমা হওয়া ফাঙ্গাস, ব্যাকটেরিয়া দূর হবে। নখ, নখের চারপাশ কোমল হবে।
ধাপ ৩: নেইলকাটার দিয়ে সুন্দর করে আপনার পায়ের নখগুলো কেটে নিন। চেষ্টা করবেন সব নখ যেন একদিক থেকে কাটা হয়। আর, চতুষ্কোণ আকৃতিতে নখ কাটতে চেষ্টা করবেন। এতে নখ সুন্দর দেখাবে। একেবারে গোল আকৃতিতে কাটলে নখ বেশ বেমানান লাগে।
ধাপ ৪: এই ধাপটি করা না করা আপনার ইচ্ছে। তবে ভালো পেডিকিউর করতে চাইলে এই ধাপটি করতে হবে। বাজারে নখের ত্বক পরিষ্কারের বিশেষ কাঠি পাওয়া যায় যা অনেক সময় নেইলকাটারের সাথেও থাকে। এই কাঠি দিয়ে নখের ত্বক ঘষে নিন। এতে নখের উপর জমা হওয়া বাড়তি ময়লা আবরন দূর হয়ে নখে গোলাপীভাব আসবে।
ধাপ ৫: নেইল কাটারে ছোট ছোট দাগ দেয়া একটি অংশ থাকে। এটি মুলত নখ কাটার পর নখের ধারালোভাব দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয়। নখের অগ্রভাগ ঘষে নিন।
ধাপ ৬: একটি খসখসে পাথর সংগ্রহে রাখুন। এই পাথরটি দিয়ে পায়ের গোড়ালি ভালো করে ঘষে নিন। বাড়তি পরিষ্কারের জন্য চাইলে সাবান ও ব্যবহার করতে পারেন। ঘষা শেষে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে ভুলবেন না যেন।
অনেকে সবজী কুচি করার যন্ত্র দিয়ে পায়ের গোড়ালী ঘষার কাজটি করে থাকেন। এ কাজ ভুলেও করবেন না। আপনার পায়ের মারাত্মক ক্ষতির কারন হতে পারে এটি।
আরো পড়ুন ঘুমাতে যাওয়ার আগে চুলের যত্ন
ধাপ ৭: এবার একটি নরম তোয়ালে দিয়ে পা দুটি মুছে ফেলুন। এরপর ভালোমানের লোশন পায়ে ম্যাসেজ করে নিন।
ধাপ ৮: আপনি যদি পায়ে নেইলপলিশ দিতে পছন্দ করেন তবে এ ধাপটি আপনার জন্য। প্রথমে নখে বেইজ কোর্ট বা ট্রান্সপারেন্ট নেইলপলিশ দিয়ে নিন। এর উপর আপনার পছন্দের রঙের নেইলপলিশ লাগান।
ব্যাস, সহজ কয়েকটি ধাপে আপনার পায়ের যত্ন নেয়ার কাজটি মানে পেডিকিউরের কাজটি করা হয়ে গেল। এবার থেকে সময় করে ঘরে বসেই তবে পেডিকিউরের কাজটি করে ফেলুন।
Leave a Reply