একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ের কাছে ঋতুস্রাব যতটা সাধারণ ও নিয়মিত ব্যাপার; বয়ঃসন্ধিকালে সেই মেয়েটির প্রথম ঋতুস্রাব ছিল ততটাই আতংকের। এ সময় মেয়েদের শরীরে আসে আমূল পরিবর্তন যার সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে খাপ খাইয়ে নেয়া বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
সাধারণত ১২-১৩ বছর বয়স থেকে ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যায়। অনেকের ক্ষেত্রে ৮-৯ বছরেও শুরু হয়ে যেতে পারে আবার অনেকের ১৫-১৬ বছর বয়সে ঋতুস্রাব শুরু নাও হতে পারে। তাই প্রথম ঋতুস্রাব হওয়ার আগের কিছু লক্ষণ জেনে রাখা ভাল।
প্রথম ঋতুস্রাবের লক্ষণ কী
১. সাধারণত মায়ের যে বয়সে প্রথম ঋতুস্রাব হয়েছিল, মেয়েদেরও ওই বয়সে প্রথম ঋতুস্রাব হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে আগে বা পরে হতে পারে।
২. ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার প্রায় ৩ বছর আগে থেকে স্তনের বৃদ্ধি শুরু হয়। সাধারণত স্তনের বৃদ্ধির ৪ বছরের মধ্যে ঋতুস্রাব শুরু হয়।
৩. শরীরের পিউবিক হেয়ার বৃদ্ধি পায়। পিউবিক হেয়ার বৃদ্ধির ২ বছরের মধ্যে প্রথম ঋতুস্রাব হয়।
৪. প্রথম ঋতুস্রাব হওয়ার আগে যোনি দিয়ে সাদা বা হলুদাভ স্রাব নির্গত হবে। স্রাব নির্গত হওয়ার ৬-১২ মাসের মধ্যে প্রথম ঋতুস্রাব হয়। কোন কোন ক্ষেত্রে ১৮ মাস লেগে যেতে পারে।
প্রথম ঋতুস্রাবের প্রস্তুতি নেবেন কীভাবে
১. সাধারণত ২-৭ দিন পর্যন্ত ঋতুস্রাব স্থায়ী হয়। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন।
২. যেহেতু ১২-১৩ বছরের সময় বেশির ভাগ মেয়েদের ঋতুস্রাব হয়ে যায়। তাই এই সময়ে মেয়েদের ঋতুস্রাবের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সাথে রাখা ভাল।
৩. স্কুলে বা অন্য কোন পাবলিক স্থানে প্রথম ঋতুস্রাব হলে ঘাবড়ে না যেয়ে আশেপাশের কারো সাহায্য নিন।
অভিভাবকদের কর্তব্য
মেয়ের সাথে কথা বলুন। তাকে জানান যে এটি খুবই স্বাভাবিক একটি নিয়ম। কোন চিন্তার বিষয় নেই। নিজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে মেয়েকে জানান। তাকে আশ্বস্ত করুন যে ভয় পাবার কিছুই নেই। স্যানিটারি ন্যাপকিন সম্পর্কে ধারণা দিন।
ঋতুস্রাবের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে একটু বাড়তি নজর দেয়া উচিৎ।
ঋতুস্রাব সম্বন্ধে পড়তে আগ্রহী করুন। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে খুব সহজেই ঋতুস্রাব সম্বন্ধে জানতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন বই পাওয়া যায়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া শ্রেয়।
ঋতুস্রাব নিয়ে কথা বলতে লজ্জা পাবেন না। এই সময়ে আপনার মেয়ের ডাক্তার হচ্ছেন আপনি। প্রথম ঋতুস্রাব প্রত্যেকটি মেয়ের জীবনে একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। নিজের সম্পর্কে সচেতন হন।
ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা হোক পরিবারেই:
ঋতুস্রাব কোনো রোগ নয়৷ প্রতিটা নারীর জীবনচক্রের একটা অংশ৷ তাই প্রতিটা মেয়ে যাতে ঋতুস্রাব বিষয়টিকে আতঙ্ক হিসেবে না দেখে স্বাভাবিকভাবে দেখতে শেখে এবং সচেতন হয়, সেজন্য পরিবারের অবদান জরুরি৷
নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় গার্হস্থ্য বিজ্ঞানে একটি অধ্যায় ছিল ‘ঋতুস্রাব এবং এতে করণীয়’৷ আমাদের স্কুলটি ‘বালিকা বিদ্যালয়’, অর্থাৎ এখানে কোনো বালকের স্থান ছিল না৷ আর যে শিক্ষক আমাদের পড়াতেন তিনিও নারী৷ কিন্তু তবুও ক্লাসে তিনি আমাদের বলেছিলেন এই অধ্যায়টা বাসায় পড়ে নিও৷ যখনই এই কথাটা উনি বললেন তখনই ক্লাসজুড়ে ফিসফাস মৃদু হাসির গুঞ্জন৷ ক্লাসের পরই ছিল টিফিন পিরিয়ড৷
তাই সবাই মিলে আড্ডা শুরু হলো৷ বিষয় ‘ঋতুস্রাব’ বা মাসিক৷ সবাই যার যার অভিজ্ঞতা জানালো৷ এক বান্ধবী জানালো সে একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখে বিছানায় রক্ত৷ এ দেখে সে আঁৎকে উঠেছিল ওর মনে হয়েছিল ব্লেড দিয়ে ওর শরীর কেটে গেছে৷ আতঙ্কে মাকে ডেকেছিল ও৷ কিন্তু মা যখন দেখলেন তখনও কোনো স্বস্তি হলো না৷ বরং আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিলেন তিনি৷ এখনই বাথরুম যাও, পোশাক বদলাও এবং যথারীতি তাকে এনে দিয়েছিলেন সুতি কাপড়৷ হ্যাঁ, বিংশ শতাব্দীতেও আমাদের মফঃস্বল শহরে বেশিরভাগ বাড়িতেই কাপড়ের চল ছিল৷ তুলা ব্যবহার করতো কেউ কেউ৷ কেবল বাজারে এসেছে ‘সেনোরা’, টিভিতে বিজ্ঞাপন দেখাচ্ছে তাই৷ কিন্তু দামের কারণে খুব কম মেয়েরাই তখন তা ব্যবহার করতো৷
এই বান্ধবীটির মতোই অন্যান্যদের একই গল্প৷ এ সময় দেহে কী কী ধরনের পরিবর্তন ঘটে, মনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়, এতে যে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই এমন কিছুই জানাননি মায়েরা, বাবা বা ভাই তো দূরের কথা৷ আর পরিবারে যেহেতু চল নেই তাই দিদি বা আপারাও বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতেন৷ এ সব নিয়ে কারো সাথে কোন কথা বলাই যেন ‘নিষিদ্ধ’৷ আমরাও যখন ক্লাসরুমে বসে গল্প করছিলাম নিতান্ত নীচু গলায়, যাতে অন্য মেয়েরা শুনতে না পায়৷
যেহেতু কাপড় ব্যবহারের চল ছিল, তাই প্রায়ই মেয়েদের স্কুল ড্রেসে রক্তের দাগ লেগে থাকত, আর সেই একফোটা দাগের জন্য একটা মেয়ে যে কী পরিমাণ লজ্জায় সংকুচিত হয়ে যেত, তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ আর আমাদের টয়লেটে প্যাড ফেলার কোনো জায়গা ছিল না বা বদলানোর মতো পরিচ্ছন্ন টয়লেটও ছিল না৷ বর্তমান অবস্থা বলতে পারবো না৷ তবে ধরে নিচ্ছি অনেক স্কুলের অবস্থা এখনও এইরকম৷ কেননা দিনাজপুর শহরে আমাদের স্কুলটি ছিল সবচেয়ে ভালো মানের৷
এখন আসি নিজের কথায়৷ বাবা মারা যাওয়ার পর আমাদের পরিবার তিন কন্যার৷ আমি, মা আর দিদি৷ বাবা মারা যাওয়ার সময় আমার আর দিদিন বয়স ১০ ও ১২ বছর৷ তাই দিদি এবং আমি দু’জনেই যখন রজঃস্বলা হলাম তখন কেবল মাকেই জানানোর কথা৷ কিন্তু দিদির ঋতুস্রাব হওয়ার পর মা যা শুরু করলেন তাতে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম৷ পূজার কোনো জিনিস ছোঁয়া যাবে না৷ কোনো ছেলের সাথে মিশবে না৷ সাবধানে থাকবে৷ যে কাপড় ব্যবহার করতো তা ছাদে শুকাতে দেয়া হতো অন্য কাপড়ের আড়ালে, যেন দেখা না যায়৷ এ সব আলোচনা হলেও মূল আলোচনা কিন্তু কখনোই হয়নি বা আশ্বস্ত করার মতো কোনো ব্যাপার ঘটেনি৷ আমার বান্ধবীর অনেক মায়েরাই আমার মায়ের চেয়ে উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন তারাও মেয়েদের সঙ্গে এ ব্যাপারটা নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেছিলেন বলে শুনিনি৷
আমরা যেভাবে কাপড় ব্যবহার করতাম তাতে কত যে অসুখ হতে পারে তা এখন ভাবলে আতঙ্কিত হতে হয়৷ আর আমাদের মা-মাসিদের দেখলেও বুঝি৷ আমার মা, আমার বান্ধবীদের মা বা আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে অনেক নারীর জরায়ুতে টিউমার ধরা পড়েছে এবং অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে, হয়ত এটাও একটা কারণ৷ ঋতুস্রাব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলেও কোনোরকম আলোচনা হয়েছে বলে মনে পড়ে না৷ কিন্তু ফেসবুকের দরুণ এ বিষয়ে সচেতনতা চোখে পড়েছে গত কয়েক বছরে৷ বলিউড তারকারা খোলাখুলি কথা বলতে শুরু করলেন, এছাড়া আমাদের দেশের অনেক মেয়েরাই এ বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি শুরু করলেন৷
এ সব লেখা পড়ে জানতে পারলাম ঋতুস্রাব নিয়ে কত ধরনের ভুল ধারণা প্রচলিত আছে৷ আর সেইসব ভুলের কারণে একটি মেয়ের শারীরিক মানসিক কত ক্ষতি হতে পারে৷ বাবা কিংবা মা যদি একটি নির্দিষ্ট বয়সে বা ঋতুস্রাব হওয়ার পর মেয়েদের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করেন, তাহলে ব্যাপারটা কতটা স্বস্তিদায়ক হতে পারতো৷ ঋতুস্রাবের সময় প্রচণ্ড ব্যথায় প্রায় মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে অনেক মেয়ে৷ তাদের ডাক্তার দেখানো হয় না৷ কেন তার ব্যথাটা ব্যতিক্রম এ নিয়ে পরিবারের কোনো মাথা ব্যথা নেই৷ অথচ আমি জার্মানিতে এসে ডাক্তার দেখানোর পর জানতে পারলাম কী কী কারণে এটা হতে পারে৷ শরীরে হরমোনের মাত্রা এক একজনের এক এক রকম৷ তাই প্রত্যেকের ক্ষেত্রে শারীরিক অস্বস্তিটাও ভিন্ন হতে পারে৷ কারো কারো মাথা ব্যথাও হয়, অনেকের বমি বমি লাগে৷ বেশিরভাগ মেয়েদের যেটা খুবই দেখা যায় সেটা হলো এ সময়ে অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে যাওয়া৷
ব্যথা উপশমের কিন্তু ওষুধ আছে এবং জার্মানির ডাক্তার আমাকে বলেছিলেন ঋতুস্রাব হতে পারে যে সময়ে তার আগেই ওষুধ খেয়ে নেয়া যাতে ঐ ব্যথায় কষ্ট না পাই৷ ফেসবুকে এক ছেলেকে লেখা মায়ের চিঠি দিয়ে লেখা শেষ করবো৷
এক মা তার ছেলেকে একটা চিঠি লিখেছেন, যেখানে খু্ব সুন্দর করে বর্ণনা করেছিলেন মেয়েদের ঋতুস্রাব হলে কতটা কষ্ট হয়, সেসময় তাদের বিশ্রাম দরকার, ঠিকমত খাওয়া দরকার, পরিচ্ছন্ন থাকা দরকার৷ এমনকি স্কুলে ছেলে মেয়ে একসাথে পড়লে ছেলেরা কোনো মেয়ের জামায় দাগ দেখলে তা নিয়ে যদি কটূক্তি করে, তবে সেটা যে ঠিক নয় সেই মা তার ছেলেকে জানিয়েছিলেন৷ বলেছিলেন তার মেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যেন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে, যেন সচেতনতার কথা বলে, বলে যে তাদের কষ্টটা সেও বোঝে কারণ তার মায়ের কষ্ট হয়৷
এই মায়ের মতো প্রতিটি পরিবারের বাবা-মা যদি ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ঋতুস্রাব নিয়ে আলোচনা করেন, তবে হয়ত এ বিষয়ে সচেতনতা আরো বাড়বে৷ ঋতুস্রাব যে একটা নারীকে অন্য একটা প্রাণের জন্ম দেয়ার জন্য তৈরি করে, এটা যে তার জন্য কোনো অভিশাপ নয় বা সমাজের নিষিদ্ধ কোনো আলোচনার বিষয় নয়, মেয়েরা যেন তা বুঝতে পারে এবং ছেলেদের সঙ্গে এ বিষয়ে এ জন্য আলোচনা করা, যাতে ছেলেরা এসময় মেয়েদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে পারে৷ তাই পরিবারই হোক এক্ষেত্রে একটি ছেলে-মেয়ের সচেতনতার সূতিকাগার৷
পিরিয়ডের সময় খাদ্যতালিকায় রাখুন এই ৬টি খাবার:
ঋতুস্রাবের সময়টা প্রতিটি নারীর জন্য বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং। প্রায় প্রতিটা নারীকে এই সময়টিতে শারীরিক এবং মানসিক কিছু সমস্যার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। পেট ব্যথা, মানসিক অস্থিরতা, পেট ফাঁপা, মানসিক পরিবর্তন ইত্যাদি খুব সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যাগুলোর সমাধান পাওয়া সম্ভব সঠিক খাবার বেছে নেওয়ার মাধ্যমে। এই সময় কিছু খাবার আছে যা খাওয়া উচিত আবার কিছু খাবার আছে যা খাওয়া উচিত নয়। এমন কিছু খাবারের নাম নিয়ে আজকের এই ফিচারটি।
১. ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার: এক গ্লাস গরম দুধ ঋতুস্রাবের সময় আপনাকে আরাম দেবে। Internal Medicine অনুযায়ী ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি পিএমএস এর লক্ষণ হ্রাস করে থাকে। এমনকি এই খাবারগুলো পেশী ব্যথা, পেট ব্যথা দূর করে দেয়। দুধ, দুধ জাতীয় খাবার, ডিম এই সময় খাওয়া উচিত।
২. প্রোটিন জাতীয় খাবার: ডাল, ডিম, মাছ, মাংস শাক সবজি এই সময়ের খাদ্যতালিকায় রাখুন। প্রোটিন ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার আগ্রহ কমিয়ে দেয়।
৩. কলা: পটাশিয়াম, ভিটামিন বি৬, আরও পুষ্টিগুণ সম্পূর্ণ অন্যতম একটি ফল হল কলা। এইসময় অনেক নারীরা ডায়রিয়া সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এই সময় প্রতিদিনকার খাদ্য তালিকায় একটি কলা রাখুন। এটি দেহের ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করবে এর সাথে ডায়ারিয়া রোধ করবে।
৪. ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার: ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামযুক্ত খাবার পেশী টান, পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়োর বীচি, কলা, মিষ্টি আলু, বিনস, অ্যাভোকাডো ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়ামের অন্যতম উৎস। ভিটামিন বি৬ পেট ফাঁপা এবং মুড পরিবর্তন রোধ করে। ব্রকলি, টমেটো, লেবু, কমলা, কর্ণ ইত্যাদি ভিটামিন বি৬ সমৃদ্ধ খাবার।
৫. ওমেগা থ্রি সমৃদ্ধ খাবার: স্যামন, টুনা, কাজুবাদাম যেকোন সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যেসব নারীরা প্রতিদিন ৬ গ্রাম ফিস অয়েল বা মাছের তেল গ্রহণ করেন তাদের পিএমএস সংক্রান্ত সমস্যা অনেক কম হয়ে থাকে।
৬. পানি: এই সময় প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা উচিত। পানি শরীরে হাইড্রেটেড রাখে। যা পেশী টান, পেশী ব্যথা, পেট ব্যথা হ্রাস করতে সাহায্য করে।
এইসময় লবণ এবং লবণাক্ত খাবার কম খাওয়া উচিত। এছাড়া অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার, ফাস্ট ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
পিরিয়ডের সময় কোন কোন খাবার খাওয়া একদম ঠিক না:
লজ্জা নেই বলতে যে পিরিয়ডের সময় কয়েকটা দিন নানা সমস্যা হয় কম বেশি সবার। পিরিয়ডের সময় শরীরে নানান অস্বস্তি হয়। অনেক সময় প্রচণ্ড পেট ব্যাথা করে। শারীরিক এই অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাবার জন্য আমরা অনেক কিছুই করি। কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলির জন্য এই অস্বস্তি, পেট ব্যাথা বেড়ে যায়। তাই সেই ধরনের খাবার এই সময় না খাওয়াই ভালো। আসুন জেনেনি কি কি খাবার এই সময় না খাওয়াই ভালো।
ফ্যাট যুক্ত খাবার: ফ্যাট যুক্ত খাবার পিরিয়ডের সময় না খাওয়াই ভালো। কারণ এই সময় শরীরে কিছু হরমনের পরিবর্তন হয়। তার ফলে পিরিয়ডের সময় বক্ষের আকৃতি বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ একটু ফুলে যায়। সেই সঙ্গে শরীরের ওজনও একটু বাড়ে। আবার পিরিয়ড কমে গেলে স্বাভাবিক হয়ে যায়। যেহেতু এই সময় শারীরিক ওজন একটু বাড়ে তাই, এই সময় ফ্যাট জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ এগুলি খেলে এমনিতেই খুব তাড়াতাড়ি ওজন বাড়ে। তাই ওজন অনেকটা বেড়ে যাবার সম্ভবনা থাকে।
মিষ্টি খাবার: পিরিয়ডের সময় মিষ্টি খাবার খাওয়া উচিত না। কারণ এই সময় শরীরে হরমনের কিছু পরিবর্তনের ফলে রক্তে সুগার লেবেলের পরিবর্তন হতে পারে। আর খুব মিষ্টি খাবার খেলে রক্তের সুগার লেবেল স্বাভাবিক নাও থাকতে পারে। রক্তের সুগার লেবেল বেড়ে যেতে পারে। সুগার লেবেল স্বাভাবিক না থাকলে শরীরে নানা রকম সমস্যা হয়। মেজাজ খারাপ, ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন ইত্যাদি। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব পরে। তাই এই সময় খুব বেশি মিষ্টি খাওয়া ঠিক নয়। ফাইবার, টাটকা শাক সব্জি এসব খাওয়া উচিত।
পিরিয়ড নিয়ে যত কথা জানা প্রয়োজন
প্রসেস ফুড: এই সময় নুন কম খাওয়া উচিত। কারণ আমরা আগেই জেনেছি এই সময় বক্ষ, শরীর একটু ফুলে যায়। ওজন একটু বেড়ে যায়। আর নুন শরীরে জলের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। তার ফলে শরীর আরও বেশি ফুলে যাবার সম্ভবনা থাকে। তাই প্রসেস ফুড খেতে বারন করা হয় কারণ এগুলি ঠিক রাখার জন্য, এতে প্রিজারভেটিভ হিসাবে প্রচুর নুন মেশানো থাকে। তাই এই সময় অতিরিক্ত নুন একদমই ভালো না শরীরের জন্য। এই সময় প্রসেস ফুডের বদলে টাটকা খাবার খাওয়া উচিত।
চা, কফি: পিরিয়ডের সময় চা, কফি খুব কম খেতে বলা হয়। কারণ এগুলিতে থাকা ক্যাফেইন এই সময় শরীরের জন্য ঠিক নয়। কারণ এই সময় অনেকেরই পেট ব্যাথা করে, আর এগুলি বেশি খেলে পেট বাথা বেড়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। এছাড়া এই সময় এমনি শরীরে অস্বস্তি হয়, তার ফলে ভালো করে ঘুম হয়না, খাবার ইচ্ছা থাকেনা। আবার মন মেজাজও অনেক সময় ভালো থাকেনা। আর এই জাতীয় পানীয় এই শারীরিক অস্বস্তি গুলিকে আরও বাড়িয়ে দেয়। তাই এই সময় দিনে খুব বেশি চা, কফি, নরম পানীয় না খাওয়াই ভালো।
অ্যালকোহল: এই সময় অ্যালকোহল খুব ক্ষতিকারক। অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে অনিয়মিত পিরিয়ডের একটি সম্ভবনা থাকে। শুধু অনিয়মিত পিরিয়ড নয় এটি শারীরিক অস্বস্তিকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। তাই ওই কয়েকটি দিন অ্যালকোহল বন্ধ রাখাই ভালো।
দুধ জাতীয় খাবার: দুধ জাতীয় খাবার যেমন, পনির, চিজ, আইসক্রিম এগুলি খুব বেশি খেতে বারন করা হয়। কারণ এই খাবার গুলির ফলে পেটে ব্যাথা বেড়ে যাবার সম্ভবনা থাকে। পেটের ভেতর অস্বস্তি বেড়ে যায়। এছাড়াও এগুলিতে বেশি ফ্যাট থাকে। আগেই বলেছি ফ্যাট জাতীয় খাবার এই সময় খাওয়া ভালো না। তাই শুধু দুধ জাতীয় খাবার নয়, পাঁঠার মাংস সেটিও বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এতেও খুব বেশি ফ্যাট থাকে।
এই কিছু কিছু খাবার পিরিয়ডের সময় বেশি খেতে বারন করা হয়। তবে দিনে এক কাপ চা বা কফি খাওয়া যেতেই পারে। এই সময় যতটা সম্ভব টাটকা শাকসবজি, ফল, ও ফাইবার যুক্ত খাবার খাওয়া শরীরের জন্য ভালো।
Leave a Reply