চিরযৌবনা হওয়া কিন্তু কোনও অসম্ভব ব্যাপার নয়। বরং এ যুগে যৌবন সহজে চলে যেতে দেয়াটাই বোকামি। কুড়িতে বুড়ি হওয়ার দিন চলে গেছে। একটা কথা বলা যায়, যারা তিরিশ বা চল্লিশ পার করেছেন তারা তো বটেই যারা এখনও অনেক ছোট, যেমন বারো বা তেরো তাদের মধ্যেও যদি কিছু কিছু অভ্যাস আমরা করিয়ে ফেলতে পারি তা হলে ভবিষ্যতে তাদের আর বয়স নিয়ে আলাদা করে ভাবতে হবে না।
১. মহিলাদের চাই ইস্ট্রোজেন: মহিলাদের শরীরের রক্ষাকবচ হল ইস্ট্রোজেন। কিন্তু মেনোপজের পর এই ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যায়। ফলে হার্টের সঙ্গে অন্যান্য রোগ তো হয়ই, ত্বক ও চুলের জৌলুসও কমে যায়। ত্বকের নীচে থাকা ইল্যাস্টিকের মতো বস্তু কোলাজেন কমতে শুরু করে। ত্বক হয়ে যায় ঢিলে। দেখা দেয় বলিরেখা। ঠিক তখনই প্রয়োজন হয় হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপির। এই সময় হাড়ের ঘনত্ব অনেক কমে যায়। ফলে খাবারের তালিকায় রাখতে হয় ক্যালসিয়াম। দেখা গিয়েছে পঞ্চাশোর্ধ মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা পুরুষদের তুলনায় বেশি। তাই এই ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
২. পুরুষদের চাই টেস্টোস্টেরন: একটা বয়সের পর পুরুষদের শরীরে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা অনেক কমে যায়। ফলে অনেকে তখন যৌবন ধরে রাখার জন্য অ্যানাবলিক স্টেরয়েডের সাহায্য নেন। এটা করা উচিত নয়, কারণ স্টেরয়েডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। অতএব সব সময় চেষ্টা করা উচিত খাবারদাবারের মাধ্যমে শরীরের ঘাটতি পূরণের।
৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: স্ট্রেস যে শরীর ও মনের ক্ষতি করে একথা জানতে কারও বাকি নেই। কিন্তু স্ট্রেস থেকে দূরে থাকতে হবে বলা যত সহজ থাকাটা ততটাই কঠিন। তাই সেটাকে কীভাবে ম্যানেজ করা যায় সেটা ভাবাই বুদ্ধিমানের কাজ। জেনে নেয়া ভালো, যে কোন কারণেই শরীর বা মনে এই স্ট্রেস হোক না কেন, তার ফলে অ্যাড্রিনালিন গ্ল্যান্ড থেকে এক ধরনের ক্ষরণ হয় যা শরীরে টক্সিন ছড়ায় এবং রক্তবাহী নালিকে চেপে দেয়, রক্তচাপ, বাড়ে মস্তিষ্ক ও হৃদযন্ত্রের তার প্রতিক্রিয়া ঘটে বিস্তর। আরও অনেক সমস্যাও হয়। ত্বক খসখসে হয় চুল উঠে যায় ইত্যাদি। সর্বদাই তাই স্ট্রেস কমানো প্রয়োজন। তাই জীবজন্তু পোষা, বই পড়া, গান শোনা, কোনও শখ বা হবির অভ্যাস রাখা, নিয়মিত পছন্দসই ব্যায়াম করা ইত্যাদি খুবই জরুরি। নিজের জন্য খানিকটা সময় বের করাটাও প্রয়োজনীয়। প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গেও কথা বলা দরকার।
৪. ইতিবাচক চিন্তা–ভাবনা: দুশ্চিন্তা যে বড় ক্ষতিকর বস্তু তা আমরা সবাই জানি। তা ত্বক, চুলের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে আরও গভীরের প্রবেশ করে। এই দুশ্চিন্তার উৎস হল নেতিবাচক চিন্তা-ভাবনা। অচিরেই চেষ্টা করে তা পাল্টাতে হবে। তাত্ত্বিকরা বলেন, ক্রমাগত ইতিবাচক চিন্তা-ভাবনা শরীরের টক্সিন কমায় ফলে জীবন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। সবচেয়ে বড় কথা চিরযৌবন ব্যাপারটি অনেকখানি নির্ভর করে আপনার মানসিক প্রশান্তির উপর। মানসিক শান্তি থাকলে দেখবেন আপনি আর অকালে বুড়িয়ে যাচ্ছেন না। তাই সব সময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করুন। বাচ্চাদের প্রসঙ্গে বলছি, তাদের আলাদা করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাওয়ানোর প্রয়োজন হয় না কারণ তারা প্রচুর পরিমাণে খায়। তার মধ্যে থেকেই তাদের প্রয়োজনীয় পুষ্টিটুকু সংগ্রহ করতে পারে।
৫. ত্বকের যত্ন নিন: চল্লিশেও সুন্দর ত্বক পেতে হলে যত্ন নিন কুড়ি থেকে। বয়ঃসন্ধিতে ত্বকের হাজারও সমস্যা। ব্রণ আর র্যাশ নিয়ে কমবেশি সকলেই নাজেহাল। ত্বক নিয়ে সব থেকে সমস্যাসঙ্কুল এই বয়সটা পেরিয়ে গেলেই বেশিরভাগ মেয়েই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। ভাবেন ত্বকের আর যত্নের প্রয়োজন নেই কিংবা সময়ের অভাবের মিথ্যা দোহাই দেন। অথচ সুন্দর ত্বকের ভিত্তি স্থাপিত হয় এই কুড়িতেই। ত্বকচর্চার কয়েকটি প্রাথমিক রুটিন নিয়মিত মেনে চলুন। তার মানে এই নয় যে সুযোগ পেলেই ক্লেনজার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। কিংবা যেমন তেমন টোনারের ব্যবহার করে ত্বকের উপর অত্যাচার করবেন। একগাদা নাইট ক্রিমের প্রলেপে রোমকূপ বন্ধ করে ফেললে কাঙ্ক্ষিত ফল কখনইও পাবেন না। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলেই বলিরেখার শুরু। ভুল পশ্চার, কম ঘুম, অতিরিক্ত পরিশ্রম, পলিউশন, সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনিং বা সেন্ট্রাল হিটিং সবগুলোই ত্বকের বলিরেখার জন্য দায়ী। ত্বকের স্বাভাবিক অ্যাসিড ব্যালান্স বজায় রাখতে অতিরিক্ত সাবার ব্যবহার না করাই ভাল।
Leave a Reply