কিছু দিন আগেই শুরু হয়ে গেল মাহে রমজানের পবিত্র মাস। ইতিমধ্যে কয়েকটি রমজান ও অতিবাহিত হয়ে গেছে। অন্যান মাসের তুলনায় এই একটি মাসে আমাদের প্রতিদিনের খাবার-দাবার, নিয়ম-কানুন ও জীবন যাত্রার মান অনেকটাই পরিবর্তন হয়। রমজানে রোজা রাখলে স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি হয় না, বরং টা মঙ্গলজনক। তবে রমজানে আপনাকে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে তার পাশাপাশি সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য সুষম খাদ্য খাওয়াও খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যান্য মাসে যেমন তিন বেলা খাবার খাওয়া হয়। তেমনি রোজার মাসে তিন বেলা না হলেও তিনবার খাওয়া হয়। প্রথম বার সূর্যাস্তের পর পরই ইফতার, দ্বিতীয় বার তারাবির নামাজের পর সন্ধ্যা রাতের খাবার এবং তৃতীয় বার শেষ রাতে সেহরিতে। সারাদিন রোজা রেখে শরীরে ক্লান্তি চলে এলেও ইফতারির সময় ২/১ খেজুর, একটু ফলের বা কোন কিছুর শরবত, সাথে শশা পিঁয়াজু, মুড়ি, ছোলা শরীরের অন্যান্য চাহিদা মিটায়ে শরীরকে সতেজ করে তলার চেষ্টা করে।
আপনার সন্ধ্যা রাতের খাবারের ম্যেনুতে ভাত বা রুটি, ২/১ টুকরা মাছ বা মাংস, প্রচুর শাক-সবজি, দুধ এবং কিছু ফল রাখা দরকার। কিন্তু সেহরিতে বেশি ভরপেট না খেয়ে একটু হালকা খাবার খাওয়াই ভালো। ইফতারির পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত সময়ে প্রচুর পানি পান করা উচিৎ।
রোজায় সেহরিতে এমন খাবার খাওয়া উচিৎ যেগুলো বেশি সময় ধরে পেটে থাকে এবং দেরিতে হজম হয়। যেমন তার মধ্যে আছে আটা, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, ডাল ও মাংস ইত্যাদি। আর চিনি, মিষ্টি, ময়দা ইত্যাদি খাবারও কিন্তু দ্রুত হজম হয়।
খাবারের তালিকায় আপনাকে অবশ্যই আঁশযুক্ত খাবারও রাখতে হবে। আঁশযুক্ত খাদ্যের মধ্যে আছে সীমের বিচি, আটা, ছোলা, শাক-সবজি, ও বিভিন্ন ফলমুল ইত্যাদি। শাক-সবজি ও ফলমূল আপনার শরীরের খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ করে। আর ইফতারির খেজুরে ও কলায় আছে শর্করা, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম এবং আঁশ।
সারাদিন রোজা রাখার পর বেশি মশলাযুক্ত বা ভাজাপোড়া খাবার খাওয়া আপনার বাদ দেওয়া উচিৎ। মিষ্টি জাতীয় খাবারও পরিমাণে অল্প খাওয়া দরকার।
যাদের ধূমপানের অভ্যাস আছে তাদের এই রমজান মাসেই সুযোগ তা পরিত্যাগ করা। যারা বেশি বা কম খেতে পছন্দ করেন তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা প্রয়োজন যেন ওজন বেশি বা কমে না যায়। শরীরের স্বাভাবিক ভারসম্য রাখার চেষ্টা করতে হবে।
রমজানে রোজাদার ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকগুলো সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা যায়। আর তা হলঃ
কোষ্ঠকাঠিন্য: রমজানে এমনিতেই পানি কম খাওয়া পরে তাই ইফতারির পর থেকে সেহরির মধ্যেও যদি পানি কম পান করা হয় অথাবা খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে আঁশ না থাকে তাহলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। সুতরাং এই রমজানে আপনাকে প্রচুর পরিমানে পানি পান করতে হবে ইফতারি ও সেহরির মধ্যবর্তি সময়ে এবং প্রচুর পরিমানে আঁশ যুক্ত খাবারও খেতে হবে।
বদহজম ও বায়ু: অতিরিক্ত ভাজাপোড়া বা বেশি তেল জাতিও খাবার ও বেশি মশলাযুক্ত খাবার ইত্যাদি খেলে আপনি কিন্তু বদহজমে ভুগবেন। আবার এগুলতে পেটে প্রচুর গ্যাসও উৎপন্ন হতে পারে। যার ফলে কিছুখন পর পর আপনার বায়ু নির্গত হতে পারে যা নিজের এবং অন্যের জন্যও খুব বিরক্তি কর। অতএব, এ সকল সমস্যা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে চাইলে এ ধরনের খাবার থেকেই নিজেকে বিরত রাখুন।
বুক জ্বালা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা করা: রমজান মাসে অতিরিক্ত তেল, ভাজাপোড়া, অতিরিক্ত মসল্লা একটু বেশিই খাওয়া পরে যা পাকস্থলির এসিডিটি বাড়িয়ে দেয়। যখন পাকস্থলির এসিডের মাত্রা বেড়ে যায় তখন বুক জ্বলা, পেটের উপরের অংশে ব্যথা, এমনকি পিঠেও ব্যাথা হতে পারে। হয়তো অনেকেরই অজানা যে ধূমপানের ফলেও এসিডিটি বেড়ে যায়। তাই আঁশযুক্ত খাবার খান যা পাকস্থলির এসিড হওয়া থেকে আপনাকে রক্ষা করবে। পাকস্থলিতে এসিড উৎপাদন হলে তা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করতে হবে। আর খাবার গ্রহণে আপনাকে সংযত ও সচেতন হতে হবে।
অতিরিক্ত দুর্বলতা: শরীরে পুষ্টিকর খাবার না গেলে বা রক্তে শর্করার পরিমাণ অনেক কমে গেলে আপনার শরীরটা অনেক দুর্বল হয়ে পরবে। আবার রক্তচাপ কমে গেলেও অনেক সময় এমন হয়। রাতে যথা সম্ভব প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং সুষম খাবার গ্রহন করতে হবে।
আর অবহেলা নয়, যেকোনো ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলেই আপনাকে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন, রোজা রাখুন এবং শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকুন।
Leave a Reply