সৌন্দর্য এমন একটি বিষয় যা আমাদের মনকে উচ্ছ্বসিত রাখে। যদিও বলা হয়ে থাকে মানুষের আসল সৌন্দর্য তার মন। কিন্তু তারপরেও বাইরের সৌন্দর্যকেও আমাদের প্রাধান্য দিতে হয়। কারণ অনেক সময় বাইরের রূপ দেখে ভিতরটা অনেকাংশে চেনা সম্ভব। ব্যস্ত এই সময়ে নিজের যত্ন কতটুকুইবা নেওয়া যায়। গৃহিণীদের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায় সেই সাতসকালেই। আর কর্মজীবী নারীদের তো সারাদিন কাজ করে বাসায় ফিরেও শেষ নেই কাজ; সংসার দেখাশোনার সঙ্গে সঙ্গে পরের দিনের কাজের প্রস্তুতি নিতে নিতেই ঘুমের সময় হয়ে যায়। শিক্ষার্থীরা আরও ব্যস্ত, সারা দিনে নিজের দিকে একটু তাকানোর সুযোগটা কোথায়! প্রতিদিনের নিয়মিত পরিচর্যার কোটা তাই খালিই পড়ে থাকে। ফলাফল ত্বক-চুলের নানাবিধ সমস্যা, মুটিয়ে যাওয়া, দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া, আরও কত কিছু! নিজের যত্ন কোন মেয়ের না নেওয়ার ইচ্ছা থাকে! অভাব শুধু সময়ের। এই যখন অবস্থা, তখন এর আদর্শ সমাধান হতে পারে ঠিক ঘুমাতে যাওয়ার আগের সময়টুকুতে রূপচর্চার কাজটুকু সেরে ফেলা। মৌলিক কিছু পরিচর্যা আছে, যা প্রতিদিনই মেয়েদের করা উচিত। এই নিয়মিত যত্নটুকু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রোজ রাতে একটু নিজের পরিচর্যা করে ঘুমালে জীবনভর সুস্থ-সুন্দর থাকা খুবই সম্ভব।
ত্বক
সকালে ঘুম থেকে উঠে বা দুপুরে গোসলের পর তো বটেই, রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও ত্বকের দরকার বিশেষ পরিচর্যা। ঘর থেকে আমাদের তো বাইরে যেতেই হয়। আর শীতে যেহেতু ধুলাবালি বেড়ে যায়, তাই সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ত্বকের দরকার একটু বিশেষ যত্ন। তবে সবকিছুর আগে বুঝে নিতে হবে নিজের ত্বকের ধরন, যা নিজেই পরীক্ষা করে নিতে পারেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখেন নাকের দুই পাশ, গাল অতিরিক্ত তেলতেলে হয়ে আছে, তাহলে ত্বক অবশ্যই তৈলাক্ত। মুখটা বেশ টান ও শুকনো থাকলে, পিম্পলের তেমন প্রবণতা না হলে ত্বক একেবারে শুষ্ক। নাকের ওপর ও দুই পাশে তৈলাক্ত, কিন্তু বাকিটা চেহারায় টান টান ভাব থাকলে ত্বকের ধরন মিশ্র। তারপরও অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞের পারামর্শ নিয়ে আপনার ত্বকের ধরন আগে যাচাই করে নিতে পারেন। ধরন বুঝে করতে হবে যত্ন। ত্বকের যত্নে ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং করতে হবে ঘুমানোর আগে। প্রথমে মুখ ধুয়ে নিন আপনার ত্বকের সঙ্গে খাপ খায় এমন কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে। স্পর্শকাতর ত্বক হলে ব্যবহার করতে পারেন ভেষজ ফেসওয়াশ। এরপর ব্যবহার করুন ফেসপ্যাক। ঘরেই তা বানাতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য ১ টেবিল চামচ উপটান+১ চা চামচ টকদই ও এক চা চামচ দুধের সর বা দুধ।
তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য :এক টেবিল চামচ উপটান ও এক চা চামচ টকদই এবং এক চা চামচ লেবুর রস। এগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। পুরোটা শুকাবেন না, অর্ধেক শুকিয়ে এলে মুখ হালকা ঘষে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকে মেশাতে পারেন গোলাপজল, যা সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো। ময়েশ্চারাইজার হিসেবে শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা ভেজা মুখে স্রেফ ২-৩ ফোঁটা যেকোনো বেবি অয়েল মেখে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করাই উচিত।
চোখ
রাতে না ঘুমালে, দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করলে সাধারণত চোখের চারপাশ ফুলে উঠে, চোখ কোটরের ভিতরে ঢুকে যায় এবং চোখের চারপাশ কালো হয়ে যায়। এর জন্য শসা এবং আলুর রসের মিশ্রণ তৈরি করে কুসুম গরম করে নিন এবং নরম তুলার সাহায্যে চোখের পাতায় লাগিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট এভাবে রেখে দিন এবং যত্ন সহকারে ধুয়ে ফেলুন। আইল্যাশ বা চোখের পাপড়ি ঘন করতে চাইলে ক্যাস্টর তেলের পাতলা অংশ প্রতি রাতে চোখের পাপড়িতে লাগিয়ে রাখতে পারেন। এটা আপনার চোখ ঠাণ্ডা এবং চোখের পাপড়ি মজবুত রাখবে। কয়েক ফোঁটা নারিকেলের তেল চোখের চারপাশে ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে চোখের চারপাশের কালো দাগ দূর হবে। চোখ উজ্জ্বল এবং চকচকে করতে বিশুদ্ধ পানির মধ্যে ১ চিমটি পরিমাণ লবণ নিন। লবণ মিশ্রিত পানি দ্বারা চোখ ধুয়ে ফেলুন।
হাত ও পা
প্রতি রাতে পা ধুয়ে লোশন লাগিয়ে ঘুমাতে যান। এ ছাড়া নিয়মিত যত্ন হিসেবে সপ্তাহে দু-একবার যেটা করতে পারেন তা হলো—রাতে পা প্রথমে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে, ২ টেবিল চামচ কুসুম গরম অলিভ অয়েল+১ চা চামচ লবণের মিশ্রণ তৈরি করে সেটা পায়ে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এতে মৃতকোষ ঝরে যাবে, গোড়ালি নরম হবে, ম্যাসাজে রক্ত চলাচল ভালো হবে। এর বদলে মুখের জন্য যে স্ক্রাব ব্যবহার করেন, তা দিয়েও ম্যাসাজ করতে পারেন। ধুয়ে লোশন লাগিয়ে শুয়ে পড়ুন। সারাদিন পর পা দুটোকে যথোপযুক্ত আরাম দিন। হাতের যত্নও নিতে পারেন একইভাবে। মুখ, হাত, পা যেকোনো ম্যাসাজই করতে হবে হালকা হাতে, আলতোভাবে। তা না হলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।
চুল
রাতে আপনি যখন ঘুমিয়ে পড়েন তখন আপনার চুল কি ঘুমের জন্য তৈরি থাকে! যতই ক্লান্ত হন না কেন ঘুমের আগে চুলের যত্ন কিন্তু খুবই জরুরি। কারণ এই সময়টাতেই আমাদের চুলের সব থেকে বেশি ড্যামেজ হয়। রাতে ঘুমানোর সময়েই কিন্তু অনেক চুল পড়ে যায়, চুলের ডগা শিথিল হতে পারে, চুলের আগা ভেঙে যেতে পারে, চুলের গ্রোথও বন্ধ হতে পারে, চুল পাতলা হতে পারে ইত্যাদি। কিন্তু এই সব সমস্যা থেকে রেহাই পেতে হলে সবার আগে বেশকিছু জিনিস আমাদের মেনে চলতেই হবে। যাদের বড় চুল, তারা বেণী করে নিন ঘুমানোর আগে। তাতে চুল সারা রাত ঘষা খাবে না। ছোট চুল হলে খোলা রেখে শুলেও অসুবিধা নেই। তেল ম্যাসাজ করে শুলে ঘুম ভালো হবে।
এছাড়াও রাতে ত্বকের যত্নে এই নিয়মগুলো মেনে চলতে পারেন
আমাদের ত্বকের জন্য রাতের রূপচর্চা খুবই কার্যকর। ব্যস্ত এই সময়ে সারা দিনে নিজের দিকে একটু তাকানোর সুযোগটা কোথায়! প্রতিদিনের নিয়মিত পরিচর্যার কোটা তাই খালিই পড়ে থাকে। যারা সারাদিন বাইরে কাজ করেন, তাদের ত্বকে ধুলো ধোঁয়া ইত্যাদি জমা হয়। সন্ধ্যা বা রাতে বাড়ি ফেরার পর সারাদিনের জমে থাকা ময়লা এবং ব্যবহৃত মেকআপ ভালো করে ত্বক থেকে উঠিয়ে দেয়া জরুরি। মূলত এই কারণেই রাতে রূপচর্চার প্রয়োজন।
ত্বকের ময়লা ঠিকমত পরিষ্কার করা না হলে ব্রণ হতে পারে। ত্বক হয়ে পড়ে খসখসে, রুক্ষ, অমসৃণ। তাই রাতে ঘুমানোর আগে মুখটাকে পরিষ্কার করে ঘুমালে সারা রাতের লম্বা সময় ত্বক একেবারে তরতাজা। আমাদের গরমের দেশে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ায় ত্বক তেলতেলে ও আর্দ্র হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে মৃদু সাবান ও পানি দিয়ে মুখ ধোয়া খুব ভালো। অবশ্য শুষ্ক ত্বকে সাবানের বদলে ক্লিঞ্জিং লোশন বা ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে। পরিষ্কার করার জন্য ব্যবহার করা উচিত ভিজে তুলো।
প্রথমে মুখ ধুয়ে নিন আপনার ত্বকের সঙ্গে খাপ খায় এমন কোনো ফেসওয়াশ দিয়ে। স্পর্শকাতর ত্বক হলে ব্যবহার করতে পারেন ভেষজ ফেসওয়াশ।
এরপর ব্যবহার করুন ফেসপ্যাক। ঘরেই তা বানাতে পারেন। শুষ্ক ত্বকের জন্য ১ টেবিল চামচ উপটান+১ চা চামচ টকদই+১ চা চামচ দুধের সর বা দুধ।
তৈলাক্ত ও মিশ্র ত্বকের জন্য ১ টেবিল চামচ উপটান+১ চা চামচ টকদই+১ চা চামচ লেবুর রস। এগুলো একসঙ্গে মিশিয়ে মুখে লাগান। পুরোটা শুকাবেন না, অর্ধেক শুকিয়ে এলে মুখ হালকা ঘষে ধুয়ে ফেলুন। প্যাকে মেশাতে পারেন গোলাপজল, যা সব ধরনের ত্বকের জন্য ভালো।
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে শুষ্ক ত্বকের অধিকারীরা ভেজা মুখে স্রেফ ২-৩ ফোঁটা যে কোনো বেবি অয়েল মেখে নিন। তৈলাক্ত ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার না করাই উচিত।
ভিটামিন ই ত্বকের তারুণ্য বজায় রাখে। ক্রিমের মধ্যে এই ভিটামিন মেশানো থাকলে, ক্রিমটি অনেকদিন পর্যন্ত ভালো ও ব্যবহারযোগ্য থাকে। ভালো কোম্পানির ওভারনাইট ক্রিম সব বয়সের জন্যই ভালো। বিদেশি নারিশিং ক্রিম ব্যবহার করাই ভালো। বিদেশী ক্রিমে থাকে কোলাজেন ও ইলাসটিন যা ত্বকের কোষগুলোকে নতুনভাবে কার্যকর করে তোলে। এছাড়া থাকে লাইপোসোম, যা ত্বকের গভীরে গিয়ে ত্বককে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়। এ রকম ক্রিম রাতে ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকে।
আরো পড়ুন রাতের ১০ মিনিটের রূপচর্চা আপনাকে করে তুলবে অতুলনীয় সুন্দর
যাদের ত্বক তৈলাক্ত ও ব্রণ আছে, তারা প্যাক ধুয়ে ফেলে ময়েশ্চারাইজারের বদলে ব্যবহার করুন অ্যাসট্রিনজেন্ট। ঘরোয়া অ্যাসট্রিনজেন্ট হলো গোলাপজল ও শশার রস। এগুলো ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে নিলে আরও ভালো। শশার রস করে বরফ জমানোর পাত্রে রেখে আইস-কিউব করে নিতে পারেন। প্রতি রাতে রস বানানোর ঝামেলায় না গিয়ে একটি কিউব মুখে ঘষে নিন।
সমপরিমাণে পুদিনা পাতা ও নিমপাতা বেটে শুধু ব্রণ ও দাগের উপর লাগিয়ে ঘুমান। সকালে উঠে ধুয়ে ফেলুন। পুদিনা পাতা ব্যবহার করতে পারেন ফেসপ্যাকেও। ব্রণের জন্য ভীষণ উপকারী।
নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাও অত্যন্ত জরুরি। সারাদিনে ত্বক থেকে ময়েশ্চার নষ্ট হয়ে যায়, রাতে তা না হলে ত্বকে বলিরেখা পড়বে। যারা বাড়ির কাজ করেন, প্রত্যেকবার হাত ধুয়ে নিলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ও বলিরেখা পড়ে। তাই নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা দরকার।
Leave a Reply