মাহে রমজান! রহমত ও বরকতময় একটি মাস। সারা বিশ্বের সকল মুসলমান এই মাসে রোজা পালন করছেন। এদের মাঝে অনেকেরই রয়েছে নানান স্বাস্থ্যগত সমস্যা। রমজানের এই রোজা পালন করতে গিয়ে তাঁরা নানা ধরনের সমস্যা আর প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন।
খালি পেটে গ্যাস্ট্রিক বাড়ে?
আমরা সাধারনত মনে করি খালি পেটে থাকলেই বুঝি অ্যাসিডিটির সমস্যাটা বেড়ে যায়। তাই যাদের গ্যাস্ট্রিক বা পেপটিক আলসার আছে তারা রমজান মাস এলেই অনেক চিন্তিত হয়ে পরেন। কিন্তু এই রহমতের মাসে এমনটা ভাবা পুরটাই ভুল। রোজার কারণে কখনও অ্যাসিডিটি বা অম্লতা হয় না। বরং নিয়ম শৃঙ্খলার কারনে এ সময় অ্যাসিডিটির সমস্যাটা অনেকটাই কমে যায়। তবে অবশ্যই আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যে, ইফতারে ভাজাপোড়া বা তেল জাতিও খাবার যেন বেশি খাওয়া না হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে চাইলে আপনাকে যথেষ্ট পরিমানে পানি ও আঁশজাতীয় খাবার খেতে হবে এবং প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি মিলবে।
হাঁপানি রোগী ইনহেলার নিতে পারবেন?
যদি হাঁপানি রোগীদের রোগ নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে তাদের রোজা রাখতে কোন সমস্যা নেই। বিশিষ্ট ইসলামি গবেষকদের মতে, যদি কারো দিনের বেলায় শ্বাসকষ্ট উঠে তাহলে ইনহেলার ব্যবহার করতে পারবে তাতে রোজার কোনো ধরনের ক্ষতি হবে না।
পানি না খেলে কিডনি জটিলতা বেড়ে যাবে?
অনেকেই মনে করতে পারেন সারা দিন পানি না খাওয়াতে মনে হয় কিডনিটা নষ্টই হয়ে যাবে। আর যাঁরা কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন অথবা ডায়ালাইসিসের রোগী তাঁদের কাছে রোজা রাখাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। তবে যাদের সমস্যা অল্প বা মধ্যম মাত্রার তারা খুব সতর্কতার সাথে রোজা রাখতে পারবেন। অনেকেরই ধারনা কিডনি রোগীদের নাকি বেশি বেশি পানি পান করতে হয়। বরং এ ধারনাটা ভুল তাঁদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি মেপে মেপে তারপর খেতে হয়। তাই কিডনি সমস্যা জনিত রোগীদের উচিৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তারপর রোজা রাখা।
উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ কখন খাবেন?
কেউ যদি দিনে এক বেলা অথবা দুই বেলা ওষুধ খাওয়ার দরকার হয় তাহলে তাঁদের কোনো সমস্যা থাকার কথা না। শুধু ডাক্তারের সাথে আলাপ করে জেনে নিন কোনটা সেহরির সময় খাবেন, আর কোনটা ইফতারের সময় খাবেন। আর এ সময় আপনার ইফতারের কাঁচা ছোলা, সালাদ অথবা অন্যকোন খাবার যেটাতে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার হয়েছে সেটা খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। কারন অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপকে অনেক গুন বাড়িয়ে দেয়।
হৃদরোগ আছে?
হার্টের রোগীদের রোজা রাখতে তেমন কোন বিধি নিষেধ নেই। তবে অতিরিক্ত তেলযুক্ত ইফতারি বা অন্যকোন খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। বিশিষ্ট ইসলামি গবেষকদের মতে, হঠাৎ যদি বুকে ব্যথা উঠে তাহলে আপনার জিহ্বার নিচে স্প্রে জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে পারবেন। এতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না।
জন্ডিস ও যকৃতের সমস্যা :
জন্ডিস অথবা হেপাটাইটিসে রোগে আক্রান্ত রোগীর ওষুধ অনেক অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যারা দীর্ঘসময় ধরে যকৃতের রোগে ভুগছেন তাদের রোজা রাখাটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। ঐ সময়ে তেলচর্বি বা ভাজাপোড়া জাতিও খাবার খেলে তা অনেক গুন বেড়ে যেতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে রোজা রাখুন আর বেশি বেশি পানি পান করার চেষ্টা করুন।
চোখ–কান বা নাকে ড্রপ ব্যবহার :
অনেক সময় অনেকের চোখ বা নাকের সমস্যার কারনে ড্রপ ব্যবহার করতে হয়। তখন তা ব্যবহারের ফলে মুখে চলে যেতে পারে, তাই গেলে সাথে সাথে কুলি করে ফেলে দিন। একটু সাবধান থাকলেই রোজার মাসে রোজা রেখে চোখে বা নাকে অথবা কানে ড্রপ দেওয়া যায় এতে ভয়ের কিছুই নেই।
Leave a Reply