ফ্যাশন জগতে সব ঋতুতে ফ্যাশনেবল থাকা চাই। এমনটাই ভাবে ফ্যাশনসচেতন মানুষ। প্রতিবছর শীতের সময়ে কি একই ধাঁচের পোশাক পরতে হবে? একদমই না। তাই শীতকে ঘিরে প্রতিবারই ফ্যাশন বদলের খেলা চলে। এবার নারীদের ফ্যাশনের শীর্ষে রয়েছে লং সোয়েটার।
শর্ট সোয়েটারের একঘেয়েমি কাটিয়ে বাজারে এখন লং সোয়েটারের রাজত্ব। গত বছরই খানিকটা পরিবর্তন হয়ে নতুন ঢঙে হাজির হয়েছিল ড্রেপ কার্ডিগান বা লং সোয়েটার। এ বছর রং, নকশা ও কাটে আরও বৈচিত্র্য নিয়ে হাজির হয়েছে তা। দেশি নিটে তৈরি হচ্ছে লং সোয়েটার। এ সোয়েটার বাটনলেস। সামনের অংশে লেয়ার রয়েছে এবং ঝুল হাঁটু পর্যন্ত। গলার কাটে গোল ও ভি শেপ। হালকা, ভারী, ফরমাল, ক্যাজুয়াল সব ঢঙেই, সব রঙেই পাওয়া যাবে লং সোয়েটার।
তবে বাটনসহ লং সোয়েটারও এসেছে এবার। বাটনগুলো কালারফুল স্টোনের তৈরি। সোয়েটারের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে কিংবা কনট্রাস্ট করে কোমরে ফিতা দেওয়া হচ্ছে কোনো কোনোটাতে। পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকের সঙ্গে এ সোয়েটার বেশ মানানসই।
সোয়েটারের ডিজাইনটা অনেক দিন ধরেই একই ছিল। তাই এবার ফ্যাশনসচেতন তরুণীরা ঝুঁকেছে ড্রেপ কার্ডিগান বা লং সোয়েটারের দিকে। নিট আর ওভেন-দুই ধরনের ফেব্রিকেই লং সোয়েটার তৈরি হচ্ছে। নিটের মধ্যে ফেরিস্টারি, টেরি ফেব্রিকই বেশি। লং সোয়েটারে গাঢ় রঙের মধ্যে আছে লাল, নীল, সবুজ, সাদা, বেগুনি, কমলা, গোলাপি। পাশাপাশি হালকা রঙের মধ্যে কালো, ছাই, বাদামি। লেইসজুড়ে দেওয়া হয়েছে অনেক লং সোয়েটারে। কিছু সোয়েটারে অ্যামব্রয়ডারি, ব্লক, স্কিনপ্রিন্ট, টু টোন ইফেক্ট দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে।
লং সোয়েটার সবখানে ভিন্নভাবে পরা যায়। যেমন এর সঙ্গে চুলে সফট কার্ল, সঙ্গে ওয়েজ হিলের জুতা, গলায় কানে কুন্দনের গয়না। আবার অন্য আরেক পার্টিতে ওই লং সোয়েটারই পরলে সিল্কের শাড়ির সঙ্গে। শাড়ির আঁচলটা গলায় জড়িয়ে নিলে। চুলে থাকল টপ নট, পায়ে স্টিলিটো। অথবা হাঁটুঝুলের গাউন টাইপের ড্রেসের সঙ্গে সোয়েটার ও সেমি বুট পরলে। চুলে সাইট সিঁথি করে ঢিলে খোঁপা করতেই পারো। ট্রাউজার্স বা সিকুইনড লেগিংসের সঙ্গে ওই লং সোয়েটারটাই পরে একটা উজ্জ্বল স্কার্ফ জড়ালেই ফের বদলে যাবে তুমি!
তরুণীদের মানসিকতার প্রতি লক্ষ রেখে পাশ্চাত্য ধারা অনুসরণ করে তৈরি করা হয়েছে মেয়েদের জন্য এই বিশেষ সোয়েটার। দৈর্ঘ্য বেশি ও স্ট্রাইপ সোয়েটার এবারের চল। সোয়েটারের গলায় ওভার ফ্লিপ ডিজাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এটি স্কার্ফের বিকল্প হিসেবেও কাজ করে।
লং সোয়েটারে আরও নতুনত্ব বাড়ানোর জন্য এর মধ্যে কুচি দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ আঁটসাঁট নয়, ঢোলাঢালা ও ঘের দেওয়া। নিট কাপড় ছাড়াও পশমি উল ও ক্রুশ কাজের লং সোয়েটারও পরছেন অনেকে।
কোমরে বেল্ট রয়েছে এমন ধরনের লং সোয়েটার কম বয়সী মেয়েদের মানাবে বেশি। পাতলা কাপড়ের লং সোয়েটার চলছে বেশ। তবে অল্প শীতে এ ধরনের পাতলা সোয়েটার আরামদায়ক। এসব সোয়েটার স্কিন জিনস ছাড়াও সালোয়ার-কামিজের সঙ্গে পরা যায়।
কীভাবে চিনবে
ভালো সোয়েটার চেনার উপায় হলো এর বুনন, রঙের গভীরতা ও উলের ক্লাসিফিকেশন নির্ণয় করতে পারা। বহুরৈখিক আয়োজনে রয়েছে ভি-নেক, টারটেল নেক, ক্রু নেক, বোট নেক সোয়েটার। তবে সময়ের চাহিদার সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে এখন ফেব্রিক বা ম্যাটেরিয়ালের নতুন প্রয়োগে নতুন ধারার কিছু সোয়েটারও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া প্রিন্ট ও নতুন মোটিফ সংযোজনে সোয়েটারের চেহারা বেশ পাল্টে গেছে। ডায়মন্ড ও ক্রিস-ক্রস বরাবরের মতো এখনো জনপ্রিয় এবং ট্রেন্ডি। বিশেষত হাফস্পিন্ট সোয়েটার মেয়েদের কাছে বেশ সমাদৃত। কেবল নিট বা উলের বোনা লং সোয়েটারে নিত্যনতুন জিওমেট্রিক মোটিফ এখনো ট্রেন্ড ধরে রেখেছে। পুরোনো বাটন ডাউন লং সোয়েটারগুলো নতুন করে ফিরে এসেছে, যা লেটেস্ট ট্রেন্ডও বটে। যেহেতু পেনসিল স্কার্ট ও স্কিনি জিনস আজকাল মেয়েদের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট, তাই টিউনিক টাইপের এ সোয়েটার শীত নিবারণের পাশাপাশি স্টাইলিশ দেখাতে সাহায্য করে।
দামদর
এ বছর শীতে মেয়েদের লং সোয়েটারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। স্থানভেদে লং সোয়েটারের দামটাও ভিন্ন ভিন্ন হয়। ব্র্যান্ডের মধ্যে আছে জেন্টল পার্ক, এক্সট্যাসি, ক্যাটস আই, ইয়োলো, ইনফিনিটি, আর্টিসান, ফ্রিল্যান্ড। ব্র্যান্ডের লং সোয়েটারের দাম শুরু এক হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে নন ব্র্যান্ডের লং সোয়েটার পাবে নিউমার্কেট, গুলিস্তান, মালিবাগ, মগবাজার, ফার্মগেট, বাড্ডা, সদরঘাট, উত্তরা, বনানী, গুলশান, মিরপুর ও বঙ্গবাজারে শীত কাপড়ের দোকানগুলোতে। দাম ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকার মধ্যে।
রেহেনুমা তারান্নুম
Leave a Reply