ভালোবাসেন অথচ ভালোবাসার কথা বলবেন না, তাই কি হয়? আর ভালোবাসার কথা যত বেশি বলবেন, আপনাদের দাম্পত্য জীবনে সুখ তত বেশি হবে। গবেষকেরা তাই জোর দিয়ে বলছেন, বেশি করে ভালোবাসি বলতে। সম্প্রতি ওয়ানপোল ডটকম নামের একটি জরিপকারী সংস্থার জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, সুখী দাম্পত্য জীবনের গোপন কথা বলতে অধিকাংশ দম্পতিই বেশি করে ভালোবাসার কথা বলার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
দেখা গেছে, চুমু ও সঙ্গীকে সপ্তাহে ১০বার ‘আই লাভ ইউ’ বলাটাই সুখী দাম্পত্য জীবনের গোপন সূত্র। এক খবরে এ তথ্য জানিয়েছে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড। ওয়ানপোলের জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৯২ শতাংশ মার্কিনি সুখী দাম্পত্য জীবন হিসেবে মাসে তিনবার অভিসারে যাওয়া, তিনটি চমক দেওয়া রোমান্টিক উপহার ও ১০টি অন্তরঙ্গ আলাপনকে বোঝান। এই নিয়ম মেনে চললে সুখী সম্পর্ক রাখা যায় বলে মনে করা হয়।
এই জরিপে অংশগ্রহণকারীরা রায় দিয়েছেন, মাসে অন্তত তিনবার মত-পার্থক্য বা বিতর্ক হতে পারে, যা সম্পর্কের গভীরতা আরও দৃঢ় করতে সাহায্য করে; তবে এ জন্য পরবর্তী সময়ে দুজন দুজনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে এবং নিজের ভুল স্বীকার করতে হবে। জরিপে আরও উঠে এসেছে যে সুখী দাম্পত্য জীবনের জন্য সপ্তাহে তিন দিন অঙ্গরঙ্গ সম্পর্কের পাশাপাশি মাসে ছয়বার রাতে একসঙ্গে টিভি দেখা গোনার মধ্যে পড়ে।
ওয়ানপোলের গবেষকেরা বলছেন, বিয়ে করতে হলে অনেক দায়িত্ব নিতে হবে এবং সুখী দাম্পত্য জীবন গড়ে তুলতে জোর প্রচেষ্টা থাকতে হবে। যদি দুজন মানুষ বিয়ের জন্য প্রস্তুত না থাকেন এবং জীবনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহানোর জন্য একসঙ্গে চলার জন্য প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে না পারেন, তবে সংসারসমুদ্রে হাবুডুবু খেতে হবে। [১]
বেডরুমের যে অভ্যাস সম্পর্ক ভাঙে
দাম্পত্য সম্পর্কে সুখ চান? বেডরুম বা শয়ন ঘরের কিছু ভালো অভ্যাস সম্পর্ক যেমন মধুর করতে পারে, তেমনি অপছন্দের কিছু অভ্যাস বিষিয়ে তুলতে পারে দাম্পত্য জীবন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঘুম আমাদের জীবনের সবক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। ঘুম ভালো হলে দেহ-মন সুস্থ থাকে।
সুখী সম্পর্কের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ঘুম। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ট্রিনের মনোবিজ্ঞানী লি ল্যান্ড বলেন, দুজন মানুষ যদি শূন্যতা অনুভব করেন, তখন পারস্পরিক খেয়াল রাখা ও ভালোবাসার ক্ষেত্রে কম সাড়া দেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, কম ঘুম হলে মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও সম্পর্কে চিড় ধরতে দেখা যায়। ঘুমের প্রয়োজনীয়তার কথা মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিছানায় যাওয়ার আগে দম্পতিদের অভ্যাসগুলো সম্পর্কে প্রভাব ফেলে। যে বাজে অভ্যাসগুলো সম্পর্কে প্রভাব ফেলে তার কয়েকটি সম্পর্কে জেনে নিন:
রোমান্টিক সময়কে অবহেলা করা
সুখী দাম্পত্যের চাবিকাঠি হিসেবে বেডরুমকেই বিবেচনা করেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সুজান উইন্টারের মতে, দাম্পত্যে আদর-সোহাগের মাধ্যমে বন্ধন তৈরি হয়। বেডরুমের অভ্যাসগুলো ভালো হলে দুজনের অন্তরঙ্গতা বাড়ে। এটি সুখী দাম্পত্যের লক্ষণ। এই রোমান্টিক সম্পর্ককে অবহেলা করলে ধীরে ধীরে সম্পর্কের বাঁধন আলগা হতে শুরু করে।
বিছানায় ফেসবুক–টুইটার
বিছানায় শুয়ে স্মার্টফোন টিপতে শুরু করলে রোমান্টিক সম্পর্কের সময় কখন? অনেকেই বিছানায় ফেসবুক-টুইটার নিয়ে আসেন। মেলোডি লি নামের একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, স্মার্টফোনের মতো এমন কোনো প্রযুক্তি সম্পর্কের ক্ষেত্রে এতোটা একাকিত্ব সৃষ্টি করেনি। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, সম্পর্কে অসন্তুষ্টির কারণ স্মার্টফোনে অতি নির্ভরতা। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ হচ্ছে, সম্পর্ক মধুর করতে বিছানায় আসার দু-এক ঘণ্টা আগে স্মার্টফোনকে বিদায় জানাতে হবে। এ সময়টা দুজন গল্প করে কাটাতে পারেন।
খোলামেলা আলোচনা
শয়নঘরে দুজন মানুষ যদি নিজেদের মধ্যে কথা না বলে অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, তবে সম্পর্ক ভালো হবে কীভাবে? দুজন খোলামেলা বিশ্বস্ত আলোচনা সুস্থ সম্পর্কের জন্য জরুরি। বিশেষজ্ঞ উইন্টার্স বলেন, দাম্পত্য জীবনে পিলোটক বা ঘনিষ্ঠ আলাপ যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দুজনের মধ্যে আলোচনার সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা। উষ্ণতা আর স্নেহে ভরা ওই সময়টুকু পরবর্তী দিনের মেজাজ ঠিক করে দেয়। সম্পর্কের স্থায়িত্ব বাড়ায়।
মন খারাপ করে ঘুমাতে যাওয়া
দাম্পত্য জীবনের জুটিরা নিশ্চয় জানেন, রাগ করে ঘুমাতে যেতে নেই। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ঘুমাতে যাওয়ার আগে বাজে স্মৃতি নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া ঠিক নয়। সম্পর্ক ভালো করার জন্য সমস্যা মিটমাট করে ঘুমাতে যাওয়া ভালো। অনেকে আবার এ নিয়ে একমত নন। অনেক সময় সমস্যা মিটমাট হয় না বলে উদ্বেগ বাড়তে থাকে। সকালটাও বাজে হতে পারে। দুজন শান্ত হয়ে, ঠিকমতো বিশ্রাম নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে পারেন।
পৃথক ঘুমানো
গবেষকেরা বলেন, কিছু সময় বা কয়েক ঘণ্টা বা একরাত হয়তো পৃথক ঘুমানো ভালো। তবে দীর্ঘ সময় ধরে দুজনের আলাদা থাকা ঠিক নয়। মনোবিজ্ঞানী র্যাচেল সুসম্যান বলেন, দুজন আলাদা সময় ঘুমাতে যাওয়া ইতিবাচক হতে পারে। কারণ, প্রত্যেকে আলাদা সময় পায় এবং ভালো ঘুমাতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, এই পৃথক থাকার বিষয়টি যেন দুজনের মধ্যে দূরুত্ব না বাড়ায়। [২]
মিথ্যা ঢুকে পড়ল দাম্পত্যে?
অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সামলাতে সঙ্গীকে হয়তো কোনো এক মুহূর্তে মিথ্যা বলেছিলেন। সে সময় পরিস্থিতি সামলানো গেলেও পরে বাধল ঝামেলা। ছোট্ট একটি মিথ্যা দাম্পত্য সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করে। আপনি হয়তো ভেবেছিলেন, এই মিথ্যা বলা তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামলে দেবে। অনেক সময় তা হয়ও। সে ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন, সেটি ভাবার বিষয়। বিশ্বাস, ভালোবাসা ও গভীরতা থাকলে খুব বিপদে পড়লে এটি করা যেতে পারে। সঙ্গীর সঙ্গে বোঝাপড়া ভালো থাকলে পরে বুঝিয়ে বললে তিনি অবশ্যই বুঝবেন।
আস্থাশীল না হলে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হতে পারে। কোন প্রেক্ষাপটে গোপন করেছিলেন কথাটি, তা ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। নতুন করে আস্থা অর্জন করতে হবে। পুরো বিষয়টি স্বচ্ছ করে তুলতে হবে সঙ্গীর কাছে। এ ধরনের ছোট মিথ্যা বা গোপনীয়তা থেকে ভবিষ্যতে দাম্পত্যে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
দাম্পত্য সম্পর্ক পুরোটাই বোঝাপড়া আর বিশ্বাসের। যেকোনো সম্পর্কে মিথ্যা ও গোপনীয়তা সন্দেহের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়।
সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরীন বলেন, ‘স্পর্শকাতর কোনো বিষয়ে মিথ্যা বলা বা ঘটনা লুকানো উচিত নয়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে সব আপনার অনুকূলে থাকলেও এর ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতিকর। সন্দেহবাতিক সঙ্গী বা মনোবল না থাকা সঙ্গীর ক্ষেত্রে এসব এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আবার সব খোলাখুলি আলোচনা করার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করবেন না। যত দ্রুত সম্ভব সঙ্গীকে সব খুলে বলুন। সঙ্গী যদি কোনো প্রতিক্রিয়াও দেখায়, তাহলে স্বাভাবিক হতে সময় দিন। অভিমান করলে কীভাবে তা ভাঙানো যায়, সেটি করুন।’
‘সে কেন বুঝল না?’, ‘আমাকে বিশ্বাস করল না?’, ‘ইচ্ছা করে এমন করিনি, তাকে কষ্ট না দেওয়ার জন্যই তো এমন কাজ করেছিলাম!’—এমন কথা মনে আসতে পারে। কিন্তু দাম্পত্য সম্পর্কে মান-অভিমান হলে সেটি পুষে না রেখে একপক্ষকে সমঝোতা করতে এগিয়ে যেতে হবে। সঙ্গীর সঙ্গে জেদ করে বসে থাকা বোকামি। তাঁকে বলার সুযোগ দিন। তাঁর কথায় যুক্তি আছে কি না ভাবুন। সম্পর্কের এসব চড়াই-উতরাই অনেক সময় বন্ধনকে মজবুত করে। [৩]
সম্পর্ক টেকাতে…
বিয়ের পর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনায় যাঁদের ঘাটতি থাকে, তাঁদের অনেককেই হাহুতাশ করতে শোনা যায়। প্রেমহীন দাম্পত্য সম্পর্কের মধ্যে সহজেই বিশ্বাসভঙ্গের ঘটনা ঘটতে পারে। এতে ভেঙে যেতে পারে সংসার। তাই সম্পর্ক যাতে টিকে থাকে, সে জন্য দুজনেরই সচেতন থাকা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সম্পর্ক সুরক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপগুলোই মূলত মধুর সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে। সম্পর্কে বিশ্বাসভঙ্গের সন্দেহ তৈরি হলে অনেকেই সোজাসাপ্টা পদ্ধতি খোঁজেন। কেউ কেউ সঙ্গীকে সরাসরি বলে ফেলেন, প্রতারণা করলেই সম্পর্কের ইতি। এতে মনে ভয় কাজ করে। ফলে অনেক সময় এই সোজা কথাতেই কাজ হয়। কিন্তু সম্পর্ক টেকাতে ভালোবাসার সম্পর্ক মজবুত করা বেশি জরুরি। জেনে নিন করণীয়গুলো:
ভালোবাসা
মধুর দাম্পত্য সম্পর্কে প্রতারিত হওয়ার ভয় কাজ করে না। নিজের নেওয়া পদক্ষেপগুলো থেকেই মধুর সম্পর্কের সূচনা হতে পারে। গবেষকেরা বলছেন, মধুর সম্পর্কের সাধারণ বিষয়গুলো পরস্পরকে বুঝতে হবে। বাড়াতে হবে আত্মসচেতনতা। বিশ্বাস, কাছে থাকার অনুভূতি ও ভালোবাসা দাম্পত্যে সুখ বাড়িয়ে দেয়।
বোঝাপড়া
সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুজন দুজনকে বোঝা উচিত। যদি দাম্পত্যে অসন্তুষ্টি এসে ভর করে, তবে সম্পর্কের বন্ধন আলগা হয়ে যেতে পারে। শুধু সম্পর্কের খাতিরে সম্পর্ক রাখার চেয়ে আন্তরিকভাবে কাছে থাকা, ভালোবাসা জরুরি। এ জন্য চাই বোঝাপড়া। পরস্পরকে নিজেদের কথাগুলো বুঝিয়ে বলুন, দাম্পত্যের বন্ধন শক্ত হবে।
অহেতুক সন্দেহ
পরস্পরের প্রতি অহেতুক সন্দেহ সম্পর্কের বন্ধন আলগা করে দেয়। ভয়, পরস্পরের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তির মানসিকতা একবার পেয়ে বসলে সম্পর্ক গতি হারায়। সন্দেহের পরিবর্তে ভালোবাসা তৈরি করতে নিজেদের সর্বোচ্চটা করতে হবে। সম্পর্কের বাঁধন মজবুত করার বিষয়গুলোয় জোর দিতে হবে।
প্রলোভন সামলান
জীবনে চলার পথে নানা প্রলোভন সামনে আসতে পারে। প্রলোভনে পা না দেওয়ার ব্যাপারে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই সতর্ক থাকতে হবে। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস অটুট রাখতে হবে। দুজনের মধ্যকার দূরত্ব ঘুচিয়ে দিতে হবে। দূরত্ব কমাতে পারলে প্রলোভন ব্যর্থ হবে।
খোলামেলা আলোচনা
খোলামেলা আলোচনায় অনেক সমস্যার সহজ সমাধান মেলে। দাম্পত্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। স্বামী-স্ত্রীর উচিত পরস্পরের মধ্যকার যেকোনো মতভেদ নিয়ে খোলামেলাভাবে আলোচনা করা। কথা চেপে রাখলে তাতে অসন্তোষ বাড়ে। অসন্তোষের প্রভাব সম্পর্কে পড়ে।
অনুভূতি বিনিময়
ভালো লাগা-ভালোবাসার অনুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেকের মধ্যে জড়তা কাজ করে। অনেকে বিষয়টিকে গুরুত্বও দেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, অনুভূতির বিনিময় সম্পর্কের গভীরতা বাড়ায়। বাড়ায় পারস্পরিক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, নির্ভরতা। আর অনুভূতি চাপিয়ে রাখলে ভুল বোঝাবুঝি থেকে সম্পর্কের বন্ধন আলগা হতে পারে। [৪]
বিবাহিত জীবনে সুখে থাকার উপায়
কথায় বলে—পুরুষ মানুষ দুই প্রকার। জীবিত আর বিবাহিত। সত্যিই কি বিয়ের পর পুরুষের সুখ চলে যায়? তাঁদের মন বিষিয়ে ওঠে? কিন্তু উপায় কী। হ্যাঁ, বিশেষজ্ঞরা বের করেছেন, বিবাহিত কিংবা দাম্পত্য জীবনে কীভাবে সুখে থাকা যায়। ‘সম্পর্ক’ বিশেষজ্ঞ টি তাশিরো বলেছেন, আপনি যদি অসাধারণ কাউকে পেতে চান, তাহলে আপনার জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন হয়ে পড়বে। তাশিরো তাঁর এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, যদি একটি ঘরের মধ্যে মধ্যম মান, আয়, চেহারা ও উচ্চতার ১০০ জন পুরুষ থাকেন, তাহলে সেখানে মাত্র ১৩ জন বিবাহযোগ্য পুরুষ পাওয়া যাবে। আর যদি কেউ ওই ১০০ জনের মধ্য থেকে আকর্ষণীয়, ছয় ফুট লম্বা কিংবা ৮৭ হাজার ডলার আয় করা কোনো পুরুষকে খোঁজেন, তাহলে মাত্র একজন পুরুষের দেখা মিলবে। আর কৌতুকবোধসম্পন্ন, দয়ালু, এমনকি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন পুরুষের সন্ধান করা হয়, তাহলে ১০০ জন পুরুষের মধ্যে একজনই পাওয়া অসম্ভব। ভড়কে গেলেন। ভাবছেন কাকে নিয়ে সংসার সাজাবেন? বিবাহিত জীবনে সুখে থাকবেন কীভাবে?
তাশিরোর যুক্তি হলো—টাকা-পয়সা, সৌন্দর্য বিবাহিত জীবনকে সুখী করতে পারে না। অন্তত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। তাঁর মতে, একটি ভালোবাসাময় সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবার মধ্যে যে গুণটি থাকা প্রয়োজন, তা হলো—আন্তরিকতা। আন্তরিক বলতে তিনি এমন কাউকে বুঝিয়েছেন, যিনি হবেন বিনীত, নমনীয়, বিশ্বাসযোগ্য, ভালো স্বভাব, সহযোগী মনোভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, উদার ও ধৈর্যশীল।
অন্য আরেক দল গবেষক মনে করে, ভালোবাসাই একজন নারী ও একজন পুরুষের মাঝে হূদয়ের অটুট বন্ধন তৈরি করে দেয়। তৈরি করে সাংসারিক বন্ধন। ভালোবাসা ব্যতীত কোনো সাংসারিক কিংবা দাম্পত্য জীবন সুখের হয় না। স্বামী ও স্ত্রী একে অন্যের পরিপূরক। একজনকে বাদ দিয়ে অন্যজন শূন্য, ফাঁকা।
যৌনতায় সঙ্গীর আগ্রহ বাড়াতে আপনার করণীয়
একজন সুন্দর মনের ও সুন্দর গুণের স্ত্রী সংসারকে তাঁর নিজের আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারেন। সাজিয়ে তুলতে পারেন সংসার জীবনকে সুখের স্বর্গীয় বাগানের মতো করে। তবে এই কাজের জন্য দরকার প্রেমিক স্বামীর স্ত্রীর প্রতি ঐকান্তিক মায়া-মমতা ও সুগভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা থাকলে দেখবেন, বিবাহিত জীবনে সুখ কাকে বলে! [৫]
দাম্পত্যে সুখ চাইলে…
দাম্পত্য। কী যেন অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে থাকা একটা সম্পর্কের নাম। টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্কটা আনন্দ-বেদনায় ভরা। তবে কখনো কখনো দাম্পত্য জীবনে নেমে আসে শীতলতা। এ থেকে জন্ম নেয় তিক্ততা। কখনো কখনো সেটা ভাঙনে গিয়ে ঠেকে। অথচ একটু চেষ্টা করলেই আমৃত্যু দাম্পত্য সম্পর্কটাকে রাখা যায় সজীব, সতেজ আর ভালোবাসায় মুড়ানো। সুখী দাম্পত্যের জন্য কী প্রয়োজন, তা জানাচ্ছে ব্রাইট সাইড।
১. জীবনের প্রতি ইতিবাচক থাকুন। কারণ, সবাই চায় তার আশপাশে উৎফুল্ল আর প্রাণবন্ত মানুষেরা থাকুক। আর সেসব মানুষের আনন্দের ঢেউ আছড়ে পড়ুক তার জীবনেও। তাই অসন্তুষ্টি প্রকাশ, অভিযোগ করা ও খ্যাঁচ খ্যাঁচ করা থেকে বিরত থাকুন। হাসি-খুশি আর প্রাণবন্ত থাকুন। দেখবেন, দাম্পত্য সম্পর্কে আসছে ইতিবাচক পরিবর্তন।
২. জ্ঞানীরা বলেন, নিজেকে জানো। নিজেকে জানা কিন্তু নিজেকে ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। আপনার কী করতে ভালো লাগে, সেটা করুন। হতে পারে বাগান করা, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা কিংবা পড়াশোনা করা—যা ভালো লাগে, করুন। এতে আপনি ভালো থাকবেন, যার প্রভাব পড়বে দাম্পত্য জীবনে। কখনোই ভাববেন না, আপনি শুধু নিজের মতো থাকবেন আর আপনার সঙ্গী আপনার জন্য সব সময় ত্যাগ স্বীকার করে যাবেন। বরং, দুজনই নিজেদের পছন্দের কিছু করে উৎফুল্ল থাকুন আর দাম্পত্যকে রাঙিয়ে তুলুন।
৩. নিজেকে ভালোবাসার অর্থ কিন্তু এই নয় যে সঙ্গীর চাওয়া-পাওয়াকে গুরুত্ব না দেওয়া। মনে রাখবেন, স্বামী-স্ত্রী দুজন মানুষ দুটি ভিন্ন পরিবেশ থেকে ওঠে আসেন। চাওয়ায় থাকে ভিন্নতা। একজন আরেকজনের মতো হবেন—এটা কখনোই ভাবা উচিত না। দুজনের কাছেই হয়তো দুজনের কিছু জিনিস ভালো লাগে, আবার কিছু জিনিস ভালো লাগে না। সঙ্গীর চাওয়া নিয়ে পরস্পর কথা বলুন, আলোচনা করুন। দেখবেন, ঠিক একটা সমাধান বের হয়ে এসেছে।
৪. সঙ্গীর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখুন। সঙ্গীর ভালো কাজের প্রশংসা করুন, খারাপটা শুধরে নিতে সহায়তা করুন। একসঙ্গে থাকতে গিয়ে ভালো-খারাপ অনেক ধরনের অভিজ্ঞতা হয় দম্পতিদের। ভালোগুলোর কথা স্মরণ করে সঙ্গীর প্রতি অকপটে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন।
৫. দাম্পত্য জীবনে ফাটল ধরানোর জন্য তিক্ত কথা একাই যথেষ্ট। তাই শব্দচয়নে সচেতন হোন। এমন কিছু বলবেন না যা সঙ্গীকে ছোট করে, আহত করে কিংবা তার মনে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করে। আর মিথ্যা বলা উচিত না। একটা মিথ্যা ঢাকতে আরও দশটা মিথ্যা বলতে হয়। আর সত্যটা যেদিন প্রকাশ পায়, সেদিন সঙ্গীর প্রতি আস্থা আর বিশ্বাস হারিয়ে যায়। আস্থা-বিশ্বাসহীন দাম্পত্য জীবনে তখন আর টেনে নেওয়া যায় না।
৬. একসঙ্গে সুখের স্মৃতি তৈরি করুন। আধুনিক কর্মব্যস্ত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর একসঙ্গে খুব বেশি সময় কাটানো সম্ভব হয় না। যতটুকু সময় পান, সেটা ভালোভাবে কাটান। একসঙ্গে বাইরে খেতে যান, কোনো অনুষ্ঠান দেখতে যান, ঘুরতে যান কিংবা আনন্দ পান এমন কিছু করুন। এগুলোই একদিন সুখের স্মৃতি হিসেবে আপনাদের মন ভালো করে দেবে। এ ছাড়া আরও কিছু কাজ করতে পারেন; যেমন-ছবি তোলা, একসঙ্গে ঘর সাজানোর জন্য কিছু একটা কেনা। পরে সেই ছবি দেখলে ফ্ল্যাশব্যাকে ফিরে যেতে পারবেন অতীতের সুখের দিনে।
৭. জীবনটা তো মোটামুটি একটা বাধাধরা নিয়মের মধ্যে পার করতে হয়। তাই একগুঁয়েমি চলে আসতে পারে দাম্পত্য জীবনে। এ থেকে মুক্তি পেতে পরস্পরকে চমকে দিতে পারেন। সেটার জন্য খুব বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে, এমন নয়। সঙ্গী পছন্দ করে, এমন কিছু একটা উপহার দিতে পারেন। কিংবা কর্মক্ষেত্র থেকে ফেরার পথে সঙ্গীর পছন্দের খাবারটা কিনে আনতে পারেন। এতে সঙ্গীও খুশি হলো। আবার রান্নার যে সময়টুকু বাঁচল, দুজন মিলে সুন্দর কোনো ছবি দেখে, গান শুনে বা টিভিতে কোনো অনুষ্ঠান দেখে কাটিয়ে দিতে পারেন। [৬]
যে আচরণে দাম্পত্য মধুর হয়
বর-বউয়ের সুন্দর বোঝাপড়া দাম্পত্যে সুখ আনে। কিন্তু এখনকার ব্যস্ত জীবনে সময়ের যেন বড় অভাব! এখনকার আধুনিক প্রযুক্তি, স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া অনেকের সময় কেড়ে নিচ্ছে। সম্পর্ক মধুর করতে সঙ্গীকে সময় দিতে হবে। পাশে সরিয়ে রাখতে হবে গ্যাজেটস। সঙ্গীকে বোঝাতে হবে রোমান্টিক মনের ভাবনা। জয় করে নিতে হবে সঙ্গীর মন। দুজন দুজনকে ভালোবাসেন—এ কথা দুজনই মনে মনে জানেন।
ভালোবাসা দেখানো আরেক জিনিস। সামনাসামনি সামান্য প্রশংসা বা কৃতজ্ঞতাবোধ সম্পর্ক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে। দুজন-দুজনের আরও আপন হতে পারেন কয়েকটি কথায়। জেনে নিন কথাগুলো:
প্লিজ ও থ্যাংক ইউ
দুজন দুজনের নিশ্চয়ই নানা কাজে সাহায্য করেন। কখনো কি থ্যাংক ইউ বলে দেখেছেন সঙ্গীকে? অনেক সময় পাশাপাশি থেকেও গুরুত্ব দিয়ে কথা বলা হয়ে ওঠে না। কথার সঙ্গে ‘প্লিজ’ জুড়ে দিলে সঙ্গীর কাছে সে কথা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। প্লিজের সঙ্গে যদি সঙ্গীকে একটা ‘থ্যাংক ইউ’ যোগ হয়, সম্পর্ক আরও মধুর হবে নিঃসন্দেহে।
গুরুত্ব দিয়ে কথা শুনুন
যখন দুজন কথা বলবেন বা কোনো বিষয়ে আলাপ করবেন, গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গীর কথা শুনুন। হাতে ফোন বা অন্য কিছু থাকলে সরিয়ে রাখুন। সঙ্গীর জন্য আপনার মনোযোগ হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ এক উপহার। সঙ্গী নিশ্চয় অনুভব করবে আপনার গুরুত্বের বিষয়টি। দুজন দুজনকে যখন গুরুত্ব দেন, সম্পর্কের মধ্যে কি ফাঁকফোকর থাকবে?
একটু আলিঙ্গন
সব সময় ফুল উপহার দিয়ে সঙ্গীর মন জোগাতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। অনেক সময় খুব সাধারণ এক স্পর্শ কিংবা আলিঙ্গন হতে পারে বড় উপহার। সঙ্গীর জন্য আপনার অনুভূতির সবকিছুই না বলা সামান্য এক আলিঙ্গনে বলা হয়ে যেতে পারে। সম্পর্কের মধ্যে কোনো দূরত্ব থাকলে নিমেষেই তা উধাও হয়ে যেতে পারে। দুজন-দুজনের যখন এত কাছাকাছি, তখন কি আর ভালোবাসা বাড়বে না?
বিবেচনাবোধ
একটু বিবেচনাবোধ সম্পর্ককে আরও মধুর করে তুলতে পারে। একজন ফোনে কথা বলছে তো টিভির শব্দ একটু কমিয়ে দেওয়া, একজন বাজার করে ফিরল তো একটু সাহায্য করার মতো সংসারের টুকিটাকি কাজে সাহায্য করতে পারেন। টুকটাক সাহায্য করতে গিয়েই দেখবেন মধুর সম্পর্ক ধীরে ধীরে মধুরতম হয়ে যাচ্ছে। যখন কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেবেন বিশেষ করে কেনাকাটা, কোথাও গিয়ে খাবার পছন্দ করার মতো বিষয়গুলোতে সঙ্গীর পছন্দকে গুরুত্ব দিন। সব সময় সঙ্গীর জন্য সেরাটা করতে চাইলেও সেটা তার ওপর কতটা প্রভাব ফেলছে সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন। [৭]
[১] টাইমস অব ইন্ডিয়া
[৩] তৌহিদা শিরোপা
[২]-[৪]-[৭]হাফিংটন পোস্ট
[৫]-[৬] অনলাইন ডেস্ক
Leave a Reply