মানুষের ত্বকের একটি বাহ্যিক সৌন্দর্য হচ্ছে তার মুখের হাসি। একজন অসুন্দর মানুষকেও সুন্দর করে তোলে তার মুখের একটু হাসি। এই হাসি নিয়ে অনেক কবিতা , ছড়া , গল্প এমনকি নাটকও আছে। ছোট বেলায় একটা ছড়া আমরা কম বেশি সবাই পড়েছি “হাসি” – হাসতে নাকি জানে না কেউ কে বলেছে ভাই? এই শোন না কত হাসির খবর বলে যাই। আবার অনেকে চিঠিতে প্রেমও নিবেদন করেছে হাসি নিয়ে – “মিষ্টি মুখের দুষ্টু হাসি কেড়ে নিল মন, কেড়ে নিয়ে হৃদয় আমার করল আপন জন।” পৃথিবীতে হাসে না এমন মানুষ পাওয়া যাবে না বললেই চলে। আর হাসতে কেই বা না পছন্দ করে বলুন। কে আসলে কতখানি সুখি তার ভাব প্রকাশ পায় তার হাসিতেই। কিন্তু সুখে থাকলেই শুধুমাত্র হাসতে পারবেন, আর তা না হলে হাসবেন না- এমন কিন্তু মোটেও ঠিক নয়।
আর কষ্ট করেই বা কেন হাসবেন মন খুলে হাসুন এবং সুস্থ থাকুন নানা ধরনের শারীরিক ব্যাধি থেকে। লাফিং ক্লাবে গেলে এখনও প্রাণখোলা হাসির আওয়াজ শোনা যায়। সবাই হাত তুলে হি হি, হো হো, হা হা-র গুঞ্জন সেখানে আজও শুনতে পাওয়া যায়। একটা সময় ছিল যখন মানুষকে হাসানোর এত আয়োজন ছিল না। গল্প আর আড্ডা ছিল। ঠাট্টা ও রসিকতা ছিল। আর মানুষ মানুষকে দেওয়ার মত হাতে সময়ও ছিল। প্রান খোলা হাসিও ছিল। যা আজ সবই যান্ত্রিকতার জোয়ারে ভেসে গেছে।
হাসি হল মানুষের জীবনে একটি মেডিসিনের মত। যার দরুন সুস্থ থাকা সম্ভব। হাসি জীবনকে সহজ ও সরল করে দেয়। মনের ভাবও কিন্তু প্রকাশ করে দেয় এক চিলতে হাসি। আপনার মুখের হাসি যে কেবল আপনার মুখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে তাই নয়। বরং আপনার গ্রহণযোগ্যতা একধাপ বাড়িয়ে দিতেও সাহায্য করে। তাই সবসময় হাস্যোজ্জ্বল থাকার কোন বিকল্প নেই। হাসির এমন কিছু গুণ আছে যা শুনলে আপনি চমকে যাবেন।
হাসির গুরুত্ব বোঝাতে মার্টিন লুথার বলেছেন-
“স্বর্গে হাসির অনুমতি না থাকলে , আমি স্বর্গেও যেতে চাই না।”
একটি বিশুদ্ধ হাসি আপনার জন্য একটি মহৌষধ হতে পারে। এই হাসির মাধ্যমেই আপনি নিজের অজান্তে সারিয়ে ফেলতে পারেন অনেক কঠিন রোগ। চলুন জেনে নেই সুস্থ ও হাস্যোজ্জ্বল থাকার কিছু অপরিহার্যতা।
দেখে নিন হাসির নানান ধরনের বেনিফিটস –
হাসলে দেহের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়:
যখন আমরা মন খুলে হেসে থাকি তখন আমাদের দেহে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে অক্সিজেন গ্রহণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। রক্তে থাকা এড্রেনালিনের পরিমাণ কমে যায় যার ফলে সর্দি, কাশি, জ্বর এবং অন্যান্য ছোট ছোট রোগ হতে মুক্তি পাওয়া যায়। আপনার হার্টের সুস্থতার জন্য আপনাকে হাসিটা অত্যান্ত জরুরী। গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল মানুষ সব সময়ই কম বেশি হাসে তাদের হার্টের সমস্যা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম থাকে।
দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে এই হাসি:
মানুষিক চাপে কে নেই বলুন তো? এটাতো এখন নিত্যদিনের বন্ধুতে পরিণত হয়েছে। এই মানসিক চাপ সাধারনত হাজার রোগের কারিগর। মানসিক চাপে থাকলে যে কেউই জীবনের লক্ষ হারিয়ে ফেলে। তখন বেঁচে থাকার কারণও সে খুঁজে পায় না। নেতিবাচক চিন্তা এবং মানসিক চাপ শরীরে একধরণের কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন ঘটায় যা আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে দুর্বল করে দেয় এবং তখনি আপনি অসুস্থবোধ করেন। কিন্তু নিয়মিত হাসলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম উন্নত হয় এতে করে আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং আমরা সুস্থ থাকি।
হাসলে কিন্তু ক্যালোরিও ক্ষয় হয়:
আপনার দেহের ক্যালোরি ক্ষয়ের জন্য আপনি কতো কিই না করেন। কিন্তু আমরা জানিও না যে সারাদিনে মাত্র ১৫ মিনিট মন খুলে হাসলে আমাদের ২০-৪০ ক্যালোরি পর্যন্ত ক্ষয় হয়। আপনি একবার হাসলেও আপনার দেহের একটি ছোটখাটো ব্যায়াম হয়ে যায় যা আপনি জানেনও না। গবেষকদের মতে একবার হাসলে দেহের ০.০০৩ শতাংশ ক্যালরি খরচ হয়। যার ফলে কমে ওজন।
আয়ু বৃদ্ধি করে:
জাপানের গবেষণায় প্রকাশ হয়েছে যে সন্ধ্যায় যত বেশি হাসবেন, রাতে ততই ভালো ঘুম হবে! শুধু হাসিই পারে আপনার মনের কষ্ট দূর করে মনকে সতেজ ও প্রাণবন্ত রাখতে যা আপনার আয়ুকে বৃদ্ধি করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা প্রতিনিয়ত হাসে তাদের গড় আয়ু ৭ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।
আপনি এখনো কি দুশ্চিন্তায় আছেন? চিন্তাগুলকে ছেড়ে দিয়ে এবার প্রাণ খুলে হাসুন তো! কারণ হাসিতেই আছে মুক্তি হাসিতেই আছে স্বস্তি আর হাসিতেই এর প্রতিকার!
Leave a Reply