নিজের ঢেউ খেলানো বা কোঁকড়া চুলের দিকে তাকিয়ে অনেকেই ভাবেন চুল সোজা করে নিতে পারলে ভালোই হতো। ইদানীং চুলের ফ্যাশনে সব চাইতে জনপ্রিয় স্টাইল হচ্ছে সোজা চুলের স্টাইল। নিজের কোঁকড়া এবং ঢেউ চুলকে স্টাইলিশ করতে অনেকেই পার্লারে গিয়ে রিবন্ডিং করিয়ে সোজা করে ফেলেন চুল। দেশের বিভিন্ন পার্লারে চুলের লম্বা ও ঘনত্ব অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে চুল রিবন্ডিং করা হয়।
কিন্তু কেমন হয় যদি আপনি নিজেই ঘরে বসে করে নিতে পারেন হেয়ার রিবন্ডিং? অনেকেরই মনে হতে পারে তা কী করে সম্ভব। কিন্তু আসলেই এই কাজটি সম্ভব। জানতে চান কীভাবে? চলুন তবে দেখে নেয়া যাক কীভাবে ঘরে করে ফেলবেন হেয়ার রিবন্ডিং।
প্রয়োজনীয় উপকরণঃ
রিবন্ডিং কিট। এই কিটে আপনি সব কিছুই পাবেন। চাইলে বাজার থেকে আলাদা করে নিচের উপকরণগুলো কিনে নিতে পারেন।
রিলাক্সেন্ট/সফটনার
কেরাটিন লোশন
নিউট্রালাইজার
গ্লাভস
কম কেমিকেল যুক্ত শ্যাম্পু,
ব্লো-ড্রায়ার ,
৩ রকম চিরুনি (মোটা দাঁতের,সরু দাঁতের এবং দু-মুখী চিরুনি ),
চুলের ক্লীপ ,
চুলের স্টীমার,
ফ্ল্যাট আয়রন মেশিন
পদ্ধতিঃ
প্রথমে ভালো ব্র্যান্ডের একটি মৃদু শ্যাম্পু দিয়ে পুরো চুল ভালো করে ধুয়ে নিন। এরপর তোয়ালে দিয়ে চুল মুছে নিন। প্রয়োজনে ব্লো-ড্রায়ার ব্যবহার করে চুল শুকোন। তবে লক্ষ্য রাখবেন হিট মাঝারি প্রকারের দিয়ে চুল শুকোবেন।
এরপর একটি মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আলগা করে আঁচড়ে নিন। এরপর সরু চিরুনিটি দিয়ে চুলকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে আলাদা করে ক্লীপ দিয়ে আটকে ফেলুন।
হাতে একটি গ্লাভস পরে নিন। হাত দিয়ে রিলাক্সেন্ট/সফটনার ক্রীম পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে ফেলুন। একেবারেই তাড়াহুড়ো করবেন না। ধীরে ধীরে সব চুলে ক্রীম টি দিয়ে ভালো করে ঢেকে দিন। এরপর ৩০ মিনিট তা চুলে লাগিয়ে রাখুন।
এরপর হেয়ার স্টীমার দিয়ে ১০-৩০ মিনিটের মতো পুরো চুল স্টীম নিন।
যদি আপনার কাছে হেয়ার স্টীমার না থাকে তাহলেও চিন্তা করার কিছু নেই। চুলোতে একটি বড় পাত্রে পানি ফুটিয়ে নিন। গরম পানির পাত্রে একটি তোয়ালে ডুবিয়ে সেটি ভালো করে চিপে পানি ঝরিয়ে ফেলুন। এরপর তোয়ালেটি মাথায় পেচিয়ে নিন। চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী স্টিম করবেন চুলগুলোকে।
চুলে স্টিম দেয়া শেষ হলে রিলাক্সেন্ট/সফটনার ক্রীমটি পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু ব্যবহার করতে যাবেন না, শুধুমাত্র পানি ব্যবহার করুন। চুল খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।
চুল শুকিয়ে নিয়ে চুলে কেরাটিন লোশন ব্যবহার করুন। পুরো চুলে কেরাটিন লোশন ভালো করে লাগান। এই লোশন ধুয়ে ফেলবেন না। চুলে রেখে দিন।
একটি ফ্ল্যাট আয়রন মেশিন গরম করে এবার চুল স্ট্রেইট করতে থাকুন। যতোক্ষণ না পর্যন্ত চুল পুরোপুরি স্ট্রেইট হচ্ছে ততোক্ষণ চুল স্ট্রেইট করতে থাকুন।
চুল সব স্ট্রেইট করা হেয়ে গেলে চুলকে আগের মতো কয়েক ভাগে ভাগ করে নিন। প্রতি ভাগে আলাদা করে নিউট্রালাইজার লাগান ভালো করে। নিউট্রালাইজার পুরো চুলে লাগানো হয়ে গেলে ৩০ মিনিট চুলে রেখে দিন।
৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানিতে চুল ভালো করে ধুয়ে নিন। আবার ব্লো-ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।
চুল শুকোনো হয়ে গেলে আরেকবার ফ্ল্যাট আয়রনটি গরম করে নিয়ে তা দিয়ে চুল স্ট্রেইট করে নিন ভালো করে। ব্যস, আপনার হেয়ার রিবন্ডিং করা হয়ে গেল।
সতর্কতাঃ
যে ব্র্যান্ডের রিবন্ডিং কিট ব্যবহার করছেন তার ব্যবহার বিধি ভালো করে পড়ে নিন এবং বিধি অনুযায়ী করুন।
চুল রিবন্ডিংএর ৪ দিন পরে চুল শ্যাম্পু ও পানি দেবেন। তার আগে নয়।
চুলে কোনো ধরণের ক্লিপ এবং ব্যান্ড ব্যবহার করবেন না ও চুল বাঁধবেন না ৪/৫ দিন। এতে চুল বাঁকা হয়ে যেতে পারে।
ভালো ব্র্যান্ডের প্রোডাক্ট ব্যবহার করুন।
হেয়ার রিবন্ডিং-এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও প্রতিকার
প্রতি বছর চুলের ফ্যাশনে নতুন নতুন ট্রেন্ড আসে। আজকে চুল ছোট করার ট্রেন্ড তো আবার কাল চুল বড়, আছে হাজারো ধরনের হেয়ার কাট। কিন্তু রেশমি আর সোজা চুল এখনও তরুণীদের সবচাইতে পছন্দের। সন্দেহহীন ভাবেই সোজা চুল সামলানো অনেক সোজা এবং যেকোনো লুক আনা যায় সহজেই, দেখতেও ভালো লাগে কোনো স্টাইল ছাড়াই। আর তাই কোঁকড়া বা ঢেউ খেলানো চুলের অনেকেই কৃত্রিম উপায়ে চুল সোজা করিয়ে থাকেন। হেয়ার রিবন্ডিং একবার করলে এক বছরের মত থাকে। কিন্তু হেয়ার রিবন্ডিং করার পর সবার এক অভিযোগ হয় এটাই যে অনেক বেশি চুল পড়ে। হেয়ার রিবন্ডিং করলে শুধু চুলই পরে না, একটু ভিতরে গেলে অনেক সাইড ইফেক্ট বের হয়ে আসবে। আসুন জেনে নেওয়া যাক হেয়ার রিবন্ডিং সাইড ইফেক্ট গুলো।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
১) আগেই বলে নেওয়া ভালো, হেয়ার রিবন্ডিং করার সময় আপনার চুল পড়বেই। যতই করার আগে চুলের যত্ন নেন না কেন, প্রক্রিয়াটির কেমিক্যাল চুল এর গোড়াকে নরম করে দিবেই।
২) কেবল করার সময় নয়, চুল পড়বে এর পরেও।
৩) সব চেয়ে ভয়ানক হেয়ার রিবন্ডিং সাইড ইফেক্ট হলো ক্যান্সার হওয়ার আশংকা। হেয়ার রিবন্ডিং কিট-এ formaldehyde নামক উপাদান ব্যবহার করা হয় যেটা মূলত চুলকে সোজা করতে এবং অনেকদিন ধরে তা রাখতে সাহায্য করে। খুব অল্প মাত্রায় দেওয়া থাকলে সেটাকে ক্ষতিকারক বলা হয় না। কিন্তু উচ্চ তাপে চুলের আয়রন ব্যবহার করায় এটা বেশি ক্ষতিকারক হয়ে যায় এবং কান্সার ডেভেলপ করতে ভূমিকা রাখে।
৪) খুব শক্তিশালী উপকরণ যেমন formaldehyde and aldehydes র অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। মাথার sclap শুষ্ক, চুলকানি, খুশকি হতে পারে।
৫) যাদের চুল এমনিতেই দুর্বল তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় হিট এবং কেমিক্যাল অনেক বেশি চুল পড়তে পারে। টাকও পড়ে যেতে পারে।
৬) চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে, আগা ফাটা সমস্যা প্রবল আকার ধারণ করতে পারে।
তাছাড়া কিছু হেয়ার রিবন্ডিং সাইড ইফেক্ট আছে, যেটা পারতপক্ষে তেমন একটা হয় নাহ। আবার অনেকের ক্ষেত্রে হয়ে থাকে।
১) মাথা ব্যথা ।
২) নাক দিয়ে রক্ত পরা।
৩) স্কিন এবং চুল জ্বলা।
৪) স্কিন এবং চুল চুলকানো।
প্রতিকারঃ
চুল রিবন্ডিং করার পর সব সময় চুলের যত্ন নেওয়াই একমাত্র প্রতিকার। কিছু বিশেষ জিনিস অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
১) চুল রিবন্ডিং থাকা অবস্থায় কখন চুলে গরম পানি দিয়ে ধোয়া যাবে না। চুল সবসময় ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পরিষ্কার করুন।
২) মৃদু শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে।
৩) মোটা দাতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়াতে হবে।
৪) চুলের আগা রেগুলার ট্রিম করতে হবে।
৫) সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যে শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার করার পর সম্পূর্ণ ভাবে যেন সেটা ধোয়া হয়।
৬) চুল রিবন্ডিং করার পর চুলে আর আয়রন জাতীয় কিছু ব্যবহার করা উচিৎ না।
৭) সপ্তাহে ৩ বার অয়েল ম্যাসাজ করা উচিৎ।
৮) চুল এর ওপর কম অত্যাচার করাই ভালো। মানে চুল রিবন্ডিং করার পর কোন প্রকার কালার, হাইলাইটস, চুলের স্টাইল না করাই ভালো।
৯) চুলকে রোদ, ধুলোবালি, বৃষ্টির পানি থেকে বাঁচিয়ে রাখুন। রিবন্ডিং করা চুল খুব তাড়াতাড়ি সূর্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আরো পড়ুন ত্বকের উজ্জলতা বাড়াতে প্রতিদিন যা করবেন
১০) সপ্তাহে ২ বার চুলে হেয়ার মাস্ক লাগান। এতে করে চুল পুষ্টি পাবে।
১১) যদি চুল এ বৃষ্টির পানি লাগে তাহলে বাসায় এসে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চুলে শ্যাম্পু করুন।
১২) বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খান। খাবারে মেনু তে প্রতিদিন মাছ, মাংস, বাদাম, দুধ, ফল রাখুন।
১৩) চুল কখনই বেণী করবেন না। চুলে বাদাম তেল গরম করে দিবেন, চুল পুষ্টি পাবে।
১৪) বাসায় প্রোটিন প্যাক বানিয়ে দিতে পারেন। ১ টা কলা, ১ টা ডিম, ৫ চামচ টক দই ব্লেন্ড করে চুলে দিয়ে রাখবেন আধা ঘণ্টা।
মনে রাখতে হবে কেমিক্যাল যুক্ত চুল স্বাভাবিক চুলের থেকে বেশি যত্ন দাবী করে। ঠিক মত চুলের যত্ন নিলে চুল পড়া অনেকাংশে কমবে।
Leave a Reply