ব্রণের সমস্যায় ভোগেননি বা ভুগছেন না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সব বয়সের মানুষই ব্রণের সমস্যায় ভোগেন। ছেলে মেয়ে উভয়েই ব্রণের সমস্যায় পড়তে পারেন যে কোনো কারণে। ব্রন যে কোনো ধরণের ত্বকেই হতে পারে। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য এবং সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয় ব্রণ। ব্রণ সাধারণত গাল, কপাল, কাঁধ, বুক, নাক, গলায় হয়ে থাকে। এই ব্রণের সমস্যা দূর করার জন্য কত কিছুই না করেন সবাই। কিন্তু কতোটুকু কার্যকর হয় এত কিছু করা? কত ধরণের ক্রিম বা চিকিৎসা নেয়া হয়, কত রূপচর্চা আর পার্লারে দৌড়া দৌড়িও হয়। কিন্তু আসলেই কি এই নাছোড়বান্দা ব্রণের পিছু ছাড়ানো যায়?
ব্রণ হওয়ার কারণ হিসেবে চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হরমোনের পরিবর্তনের জন্যই প্রধাণত ব্রণ-অ্যাকনের মতো ত্বকের সমস্যা দেখা দেয়। আচ্ছা, যদি ব্রণের সমস্যাকে নির্মূল করা যায় দেহের ভেতর থেকে, তাহলে কেমন হয়? ব্রণের সমস্যা সমাধানের উপায় আমাদের হাতের কাছেই আছে। কিছু ঘরোয়া উপায়, যার মাধ্যমে কোনোরকম রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মুক্তি পাওয়া যায় ব্রণের হাত থেকে। খুব সহজেই দূর হবে ব্রণের উপদ্রব কিছু খাবারের মাধ্যমে এবং কয়েকটি ঘরোয়া প্যাক দিয়েই। হ্যাঁ, প্রকৃতি তার অনেক কিছুর মাঝেই অনেক সমস্যার সমাধান রেখে দিয়েছে। দরকার শুধু এগুলোকে খুঁজে বের করা ও কাজে লাগানো।
আরো পড়ুন ঃ ঠোঁট সুন্দর এবং গোলাপী করার উপায়
তবে আর দেরি নাকরে চলুন জেনে নেই জেনে নিন সেগুলি কী কী-
আপেল এবং মধু
আপেল এবং মধুর মিশ্রণ হচ্ছে ব্রণের দাগ দূর করার সবচেয়ে জনপ্রিয় ঘরোয়া পদ্ধতি। যদি সপ্তাহে এই পদ্ধতিটি ৫/৬ বার ব্যবহার করেন তাহলে ব্রণের দাগ দ্রুত দূর হবে। প্রথমে আপেলের পেষ্ট তৈরি করে তাতে ৪-৬ ফোঁটা মধু মিশাতে হবে। মিশ্রণটি মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষন অপেক্ষা করেএরপর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এটি ত্বকের টানটান ভাব বজায় রাখে এবং গায়ের রঙ হালকা করে। আপনি কয়েকদিনের মধ্যেই পরিবর্তনটা অনুভব করতে পারবেন।

টুথপেস্ট
টুথপেস্ট যে দাত ব্রাশ করা ছাড়া আরো অনেক কাজে ব্যবহৃত হতে পারে এটা হয়তো অনেকেই জানেন না। ব্রণ, ব্রণের দাগের সমস্যা দূর করতে সবথেকে ভালো ঘরোয়া জিনিস হল টুথপেস্ট। সারারাত ত্বকের ক্ষতিগ্রস্থ জায়গা, যেখানে ব্রণ হয়েছে, সেখানে টুথপেস্ট লাগিয়ে রাখুন। সকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
লেবুর রস ও গোলাপজল
ব্রণ দূর করতে লেবুর রস এবং গোলাপজলের মিশ্রণটা খুবই কাজের। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণের দাগও দূর হবে। সমপরিমাণ লেবুর রস এবং গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রণর জায়গায় ব্যবহার করুন। খুব সহজেই ব্রণর হাত থেকে মুক্তি পাবেন।
মধু
ত্বক পরিস্কার রাখতে মধুর জুড়ি মেলা ভার। ব্রণ-অ্যাকনের উপর মধু ব্যবহার করুন। একঘণ্টা পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
আরো পড়ুন ঃ তৈলাক্ত ত্বক দ্রুত ফর্সা হওয়ার সহজ টিপস
কমলার খোসা
কমলা লেবুর খোসা শুকিয়ে মিক্সিতে গুঁড়ো করে নিন। মসুরির ডাল আর চাল ভিজিয়ে ভালো করে পিষে নিন। ঐ পেস্টের মধ্যে চন্দন পাউডার, মুলতানি মাটি, কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিলিয়ে নিন। এই মিশ্রণের মধ্যে দুই চামচ দুধও মিশিয়ে নিতে পারেন। মুখে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রাখার পর ধুয়ে নিন। এই প্যাকটা নিয়মিত মুখে লাগান। ত্বকের জেল্লা বাড়বে। ব্রণের দাগও দূর হয়ে যাবে।
ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশ ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। ব্রণের জায়গায় ডিমের সাদা অংশ ব্যবহার করুন। এর পর সেটি শুকনো হতে দিন। টানা ৪ বার ব্যবহার করুন।

রসুন
অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান হিসেবে রসুন ব্যবহার করা হয়। ব্রণের ওপর সরাসরি রসুন বাটা ব্যবহার করুন। ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
আজ আপনাদের জন্য রইল ব্রণের সমস্যাকে চিরবিদায় জানানোর জন্য যে খাবারগুলো সাহায্য করবে তার একটি তালিকা। মৌসুম অনুযায়ী প্রতিদিন খাবার তালিকায় এই খাবারগুলো থেকে ব্রন সমস্যার সমাধান করুন সহজেই।
শসা
শসায় থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড, পানি এবং ভিটামিন এ, সি, ব্রণের ব্যাকটেরিয়ার জন্ম প্রতিরোধ করে ব্রণের সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। শসার জুস করেও খেতে পারেন। এতে ত্বকে ব্রণের সমস্যা দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করবে।
তাজা সবুজ শাক
হজম ক্রিয়ায় সমস্যা বা বদহজম হলে ব্রণের উপদ্রব বাড়ে। তাই আমাদের খেতে হবে হজমে সাহায্যকারী সবুজ শাক যেমন, লেটুস, পালংশাক, বাঁধাকপি, ডাটা শাক ইত্যাদি। এই সবুজ শাক হজমের ক্রিয়ায় সাহায্য করে এবং ব্রণের সমস্যার সমাধান করে।
গন্ধের জন্য কাঁচা রসুন কেউ খেতে চান না। কিন্তু কাঁচা রসুনে রয়েছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান আছে যা রক্ত শোধনে কাজ করে ও দেহের ইমিউন সিস্টেম উন্নত করে। ফলে ব্রণের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায় ত্বক। দিনে অন্তত ১ কোয়া কাঁচা রসুন খাবার অভ্যাস করুন।
আরো পড়ুন ঃ জেনে নিন রসুনের প্রাকৃতিক সব গুণাগুণ
টমেটো
টমেটোতে বিদ্যমান প্রচুর পরিমাণে সি যা ব্রণের সমস্যার সমাধানে কাজ করে। এছাড়াও টমেটোর বায়োফ্লেভানয়েডস ক্ষতিগ্রস্থ ত্বকের কোষ সুস্থ করে। এতে করে ত্বকে ব্রণের জন্য সৃষ্ট ক্ষতের দাগ দূর করতেও সাহায্য করে।

গ্রিন টী
চা/ কফি আমরা প্রতিদিনই পান করি একটি রিফ্রেসিং এবং এনার্জি ড্রিংক হিসেবে। কিন্তু ব্রণ দূর করতে চাইলে প্রতিদিন চা/ কফি পান করার অভ্যাস বদলে গ্রিন টী পান করার অভ্যাস করুন। গ্রিন টী দেহের টক্সিক পদার্থ দূর করতে সাহায্য করে এবং ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
অলিভ অয়েল
খাবারে আমরা বেশিরভাগ সময়ই সয়াবিন তেল ব্যাবহার করি। মাঝে মাঝে সরিষার তেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সয়াবিন ও সরিষার তেল ব্রণ হওয়ার জন্য দায়ী। আজ থেকে যতটা সম্ভব সয়াবিন ও সরিষার তেল এড়িয়ে চলুন। খাবারে ব্যবহার করুন অলিভ অয়েল। অলিভ অয়েল দেহে খুব সহজে হজম হয় এবং ইমিউন সিস্টেম উন্নত করতে সাহায্য করে। এর সাথে সাথেই ব্রণের সমস্যারও সমাধান করে অলিভ অয়েল।
Leave a Reply